গাজীপুরে শ্রীপুরের একটি রিসোর্টে নিয়ে গেলেন আমাদের প্রথম আলোর শ্রীপুর প্রতিনিধি সাদিক মৃধা ও আরেক সাংবাদিক রেজাউল করিম সোহাগ। আমি দেখলাম রিসোর্টের সবুজ মাঠে হুদহুদ পাখিটা পোকা খুঁজছে। আর পেলেই ছুড়ে মারছে শূন্যে আর কপ করে খেয়ে ফেলছে। ক্যামেরায় সেই দৃশ্য স্টিল ছবিতে তোলার চেষ্টা করেই যাচ্ছি। বেশ কঠিন কাজ। তবে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টা বৃথা গেল না।
খুব কাছ থেকে শুয়ে ক্যামেরা তাক করার ফল পেলাম। শূন্যে পোকা ছুড়ে মারা হুহহুদ বন্দী হলো আমার নিকন ক্যামেরায়। ভিউ ফাউন্টারে দেখেই মনটা ভরে উঠল। এর রাজকীয় মুকুট, নান্দনিক ওড়াউড়ি সব মুগ্ধ করে। সাতছড়ির বনে আরেকটি ফিঙে মাথার ওপরে দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় দেখি এই হুদহুদ রাগে পেখম তুলেছে মাথার। ক্লিক করতেই পেলাম একটি অসাধারণ ছবি।
যে পাখিটি নিয়ে এত কথা, এই বাংলা অঞ্চলে তা 'মোহনচূড়া' নামেও পরিচিত। সম্ভবত পাখিটির মাথায় থাকা দৃষ্টিনন্দন বড় মুকুটটির জন্য এমন নামকরণ। শোনা যায় নামটি দিয়েছিলেন গল্পকার বনফুল। আবার কোথাও কোথাও একে ডাকা হয় 'হুপো' নামে। উপ..উপ..উপ আওয়াজ করে ডাকে।
পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানাচ্ছেন—ব্যতিক্রমী, অবিশ্বাস্য এমনকি নানা অলৌকিক কর্মকাণ্ড হুদহুদের ট্রেডমার্ক। বাংলাদেশের মাঠঘাট আর ঝোপঝাড়ে চোখ রাখলেই হুদহুদ পাখি দেখা যায়। কীটপতঙ্গের খোঁজে ময়লা ফেলার জায়গা আর ভাগাড়ে এর নিত্য আনাগোনা। তবে এটি কখনো কাক-শালিকের মতো শোরগোল করে সদলবলে আসে না। মাথায় বিশাল মুকুটটি ভাঁজ করে আর জেব্রা-ডোরা ডানা দুটি গুটিয়ে চোরের মতো লুকিয়ে চলে। এখানে সাধারণত শীতকালেই দেখা মেলে এদের।
হুদহুদের শরীর বাদামি এবং ডানা ও লেজে সাদা-কালো দাগ আছে। মাথায় সুন্দর একটি ঝুঁটি। সেই ঝুঁটির হলদে বাদামি পালকের শীর্ষ কালো রঙের। ইতিহাসের পাতায় জায়গা নেওয়া এই পাখি ২৫-৩২ সেন্টিমিটার (৯.৮-১২.৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
পাখা দুটি ছড়িয়ে দিলে তা ৪৪-৪৮ সেন্টিমিটার (১৭-১৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ওজন ৪৬-৮৯ গ্রাম পর্যন্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Upupa epops আর ইংরেজি নাম Common Hoopoe/ Eurasian Hoopoe।