মাত্র ৫টি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকলে একজন নেতা দেশকে বদলে দিতে পারেন, বলছে ফোর্বস
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বিখ্যাত মার্কিন বিজনেস ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ফোর্বসের কথা কে না জানে! সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জনজীবনের নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিক নিয়ে তাদের বিভিন্ন আর্টিকেল বিশ্বব্যপী সবসময় থাকে আলোচনায়। গবেষণা ও অথেনটিক স্টাডিনির্ভর হওয়ায় বেশ গুরুত্ব পায় এই মিডিয়া কোম্পানি বা ম্যাগাজিনের তাত্বিক ও পারিপার্শ্বিক বিশ্লেষণ। এ বছরই নেতৃত্বের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য আর এর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে বদলে দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে এক চমৎকার আর্টিকেল প্রকাশিত হয় ফোর্বসে। 'ক্যারেক্টার ইন লিডারশিপ ফোর ওয়েজ আ পলিটিকাল লিডার শেপস দ্য নেশন' শীর্ষক এই নিবন্ধটি লিখেছেন মার্কিন অধ্যাপক ও স্ট্র্যাটেজিক লিডারশিপের গ্লোবাল এক্সপার্ট ম্যারি ক্রসান। আর আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আসলে নেতা নির্বাচন করতে গিয়ে আমাদের এই বিষয়গুলো ভাবতে হবে। আর যারা নেতা হয়েছেন বা হতে চান, তাঁরাও এই বৈশিষ্ট্যগুলো মাথায় রাখলে একজন আদর্শ নেতা হতে পারবেন, সফল হবেন ও সকলের মন জয় করবেন।

একজন আদর্শ নেতার চরিত্রে কোনো নীতিগত দুর্বলতা থাকা চলবে না
একজন আদর্শ নেতার চরিত্রে কোনো নীতিগত দুর্বলতা থাকা চলবে না

১, চরিত্রের নীতিগত দৃঢ়তা

নেতৃত্বের উৎকর্ষতা মূল্যায়ন করা হয় চরিত্রের নীতিগত দৃঢ়তা, দক্ষতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি– এই তিনটির ভিত্তিতে। চরিত্রের দিক থেকে একজন নেতার বড় সুযোগ থাকে কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করার, অথবা রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রে পুরো একটি জাতির চরিত্র গঠনের। আমরা প্রায়ই প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার উদাহরণ দিই, যাঁর ব্যক্তিগত চরিত্র গভীরভাবে একটি জাতির চরিত্রকে গঠন করেছিল।
চরিত্রের ভিত্তি আসলে নৈতিক গুণাবলিতে। এটি আমরা কে তা নির্ধারণ করে এবং এর মাধ্যমে আমরা কী করি ও কীভাবে করি, তা প্রভাবিত হয়। এই চরিত্রগত দিকগুলো মানুষের বিকাশ ও দীর্ঘমেয়াদি উৎকর্ষ নিশ্চিত করে, যা যেকোনো প্রতিষ্ঠান ও জাতির মৌলিক ভিত্তি হওয়া উচিত। মূল্যবোধ ও নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সেই নীতিমালাকে কার্যকর করে যে বিচারবোধ, তার ভিত্তি হলো চরিত্র। যদি কোনো নেতার মধ্যে ন্যায়বোধের অভাব থাকে, তবে তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুর্বল হবে, মূল্যবোধ ক্ষয় হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি উৎকর্ষ ও কল্যাণ কমে যাবে।

বিজ্ঞাপন

২. ঘাতসহতা

নেতৃত্বের চরিত্রের চারটি ধরন আছে: দুর্বল, শক্তিশালী, অসমতাপূর্ণ এবং ঘাতসহ। আমাদের প্রয়োজন শক্তিশালী চরিত্রের নেতা, কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় এমন নেতাই আসেন, যাঁদের চরিত্রে বড় ধরনের অসমতা থাকে। যদি দীর্ঘদিন তা নজরে না পড়ে, শেষ পর্যন্ত যেকোনো আঘাতেই তাঁরা পরাস্ত হয়ে যান। ভোটাররা সাধারণত কাকে পছন্দ করে বা অপছন্দ করে তা ঠিক করার সময় তারা প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি বা দলের দিকে বেশি নজর দেয়। ফলে খুব কম মানুষই বোঝে কীভাবে একজন নেতার চরিত্রের শক্তি বিচার করতে হয় বা কেন তা গুরুত্বপূর্ণ।

আঘাতের পর আবার উঠে দাঁড়িয়ে ঘাতসহতা প্রদর্শন করতে পারলেই আদর্শ নেতা হওয়া যায়
আঘাতের পর আবার উঠে দাঁড়িয়ে ঘাতসহতা প্রদর্শন করতে পারলেই আদর্শ নেতা হওয়া যায়

উদাহরণস্বরূপ, আমরা কাউকে সাহসী মনে করে পছন্দ করতে পারি, কিন্তু সেই সাহসকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অন্য চরিত্রগত গুণগুলো উপেক্ষা করে ফেলতে পারি। ফলে চরিত্রগত ভারসাম্যহীন নেতারাও নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন। তবে চরিত্র গড়ে তোলার বিষয়শ। তাই প্রত্যেক নেতারই নিজের চরিত্র উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। ভুল থেকে শিখে নিয়ে বা আঘাতের পর আবার উঠে দাঁড়িয়ে ঘাতসহতা প্রদর্শন করতে পারলেই কেবল তা সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

৩. বিনয়

মানুষের বিকাশ ও জাতির দীর্ঘমেয়াদি উৎকর্ষ—উভয়ের জন্যই নেতার বিনয়ী চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অযথা ইগো বা দম্ভ নয়, বরঞ্চ নেতার চরিত্রের মাধ্যমে যে মর্যাদা ও গর্ব আসে তা-ই কাম্য। কিন্তু এখানেই বিনয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি নেতৃত্ব ও শাসনের একটি বড় ভিত্তি। তবে বিনয়কে কার্যকর শক্তি হিসেবে কাজ করতে হলে অন্যান্য চরিত্রগত গুণের সমর্থন প্রয়োজন।

নেতাদের মাঝে অন্যদের চরিত্রকে সক্রিয় করার ক্ষমতা থাকতে হবে
নেতাদের মাঝে অন্যদের চরিত্রকে সক্রিয় করার ক্ষমতা থাকতে হবে

৪. দশে মিলি করি কাজ এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাস

একজন নেতা একা সব করতে পারেন না। নেতাদের মাঝে অন্যদের চরিত্রকে সক্রিয় করার ক্ষমতা থাকতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা জাতির ক্ষেত্রে একজন নেতার কথা ও আদর্শ যদি অন্যদের চরিত্র জাগিয়ে তুলতে না পারে, তবে তা ফল দেয় না। শুধু অন্যদের দক্ষতা বা সুনাম কাজে লাগালেই হবে না, তাদের চরিত্রের শক্তিও বিবেচনায় নিতে হবে। নেতা যাকে দায়িত্ব দেন, সেই নির্বাচনও তাঁর চরিত্রের প্রতিফলন। এভাবে একসঙ্গে কাজ করার মানসিকতা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং জাতিকে বিভক্ত না করে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।

৫. অভিন্ন উদ্দেশ্যের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারা

জাতীয় উদ্দেশ্য টিকিয়ে রাখতে যে শক্তিশালী চরিত্র দরকার, তা খুব কমই দেখা যায় আজকাল। উদ্দেশ্য ও আদর্শের ভিত্তি হলো চরিত্র। শুধু স্পষ্ট কোনো উদ্দেশ্যই যথেষ্ট নয়—হিটলারের নেতৃত্ব তার উদাহরণ। যেসব নেতা সব দিক থেকে শক্তিশালী চরিত্রের অধিকারী, তাঁরা নেতৃত্বের জটিলতা সামলে মানুষের কল্যাণ ও দীর্ঘমেয়াদি উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে পারেন।

জাতীয় উদ্দেশ্য টিকিয়ে রাখতে যে শক্তিশালী চরিত্র দরকার, তা যেন নেতার মাঝে থাকে
জাতীয় উদ্দেশ্য টিকিয়ে রাখতে যে শক্তিশালী চরিত্র দরকার, তা যেন নেতার মাঝে থাকে

তপ্রতিষ্ঠানে বিভাজনমূলক রাজনীতি থাকতে পারে, কিন্তু জাতির ক্ষেত্রে বিভাজনমূলক রাজনীতি গ্রহণযোগ্য নয়। এটি নির্বাচনের সময় আরও তীব্র হয়। ভিন্নমত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তবে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা জাতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো—শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতায় আটকে না পড়া, যাতে গঠনমূলক ও সহযোগিতামূলক পথ বন্ধ হয়ে না যায়।

সূত্র: ফোর্বস

ছবি: এআই

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন