একবার ব্যবহারোপযোগী প্লাস্টিক পণ্যকে বলা হয় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের গ্লাস, কাপ, চামচ, প্লেট, বাটি, বোতল, পলিব্যাগ ইত্যাদি সর্বত্রই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। প্লাস্টিকের সামগ্রী থেকে সৃষ্ট পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের সব সরকারি অফিসে বিকল্প পণ্যসামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এমন ১৭ ধরনের বস্তু, সামগ্রী ও পদার্থকে 'সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক' হিসেবে নির্ধারণ করে এগুলোর বিকল্প ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে। প্লাস্টিক দূষণমুক্ত থেকে পরিবেশের জন্য এটা একাধারে প্রশংসনীয় ও অনুসরণীয়।
সরকারি অফিসের পাশাপাশি নিজেদের যাপনেও এই পরিবর্তন আনার এখনই উপযুক্ত সময়। সরকারি অফিসের পাশাপাশি বাসাবাড়ি, বেসরকারি অফিস, হোটেল ও রেস্তোরাঁসহ সর্বত্র এই চর্চা শুরু করা যেতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্লাস্টিকমুক্ত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলার এখনই সময়। সে ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ আমরা নিতে পারি। এমন ৫টি বিষয় আমাদের যাপনের অংশ করলে কমে আসবে প্লাস্টিক দূষণ।
পুনর্ব্যবহার উপযোগী শপিং ব্যাগ
ভালো কিছুতে ব্যয় করা বুদ্ধিমানের কাজ। একবার ব্যবহার যায়, এমন ব্যাগ বারবার না কিনে বরং একবারেই এমন কিছু কেনা উচিত, যা বহুদিন ব্যবহার করা যাবে। প্রতিদিন বাজার শেষে ব্যাগটি ধুয়ে শুকিয়ে নিলেই আবার ব্যবহার করা যাবে। চাইলে ব্যাপারটিকে আরও ফ্যাশনেবল করা যায়।
হালের ট্রেন্ডি টোটব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ফ্যাশনও হবে আবার প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো যাবে। পলিথিন ব্যাগকে না বলা বাজার করতে যাওয়ার সময় আমরা চট বা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে যেতে পারি। তাতে সম্মানহানি হবে না; বরং পরিবেশ বাঁচবে। আর যেটিই কিনি না কেন, পলিথিন ব্যাগ দিতে নিষেধ করতে পারি বা পলিথিন ব্যাগ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি।
কাচ বা ধাতব বোতল ব্যবহার করা
শরীরকে হাইড্রেটেড সঙ্গে পানি রাখতে হয়। কর্মক্ষেত্রে ও বাসার টেবিলে প্লাস্টিকের বোতল বা জগের জায়গা নিতে পারে কাচের বোতল বা জগ। আর সারা দিন বহন করার ক্ষেত্রে হালকা ওজনের স্টেইনলেস স্টিলের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। সঙ্গে বোতল রাখার অভ্যাস থাকলে কোথাও গিয়ে গ্লাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয় না। শুধু বোতল নয়, চাইলে সঙ্গে একটি চামচ আর স্ট্র–ও রেখে দেওয়া যেতে পারে। এতে একবার ব্যবহার উপযোগী গ্লাস, চামচ ও স্ট্রর ব্যবহার কমবে।
রিফিলযোগ্য সামগ্রী ব্যবহার
প্লাস্টিকের বোতল বা কৌটায় থাকে, এমন সামগ্রী বারবার না কেনাই শ্রেয়। একটু খোঁজ নিয়ে জেনে নিতে হবে কোথায় রিফিলিং স্টেশন আছে। তাহলে পুরোনো বোতল বা কৌটায় সেই পণ্য নিয়ে আসা যায়। নতুন করে আরেকটি প্লাস্টিক কিনে নিজের প্লাস্টিক দূষণে অবদান কমিয়া আনা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন সুপারমলগুলোতেও আছে রিফিলিং স্টেশন। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিরও এ ক্ষেত্রে আরও সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে। প্রচারণা বাড়িয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাহলে সহজেই সব এলাকার মানুষ এই সুবিধা নিতে পারবে।
প্লাস্টিকের মোড়কজাত পণ্যের বিকল্প
চাল, ডাল, বিভিন্ন মসলাসহ অন্যান্য দ্রব্য প্লাস্টিকের প্যাকেটে বেশি আসে। বিশেষ করে সুপারশপে যেগুলো পাওয়া যায়। এটা এড়িয়ে চলতে চাইলে আমরা দোকান থেকে প্রয়োজনমতো খুচরা কিনতে পারি, যেটা কাগজের ঠোঙায় দেওয়া হবে। এতে প্লাস্টিকের প্যাকেটের ব্যবহার কমবে। অনলাইন কেনাকাটায় প্লাস্টিক প্যাকেট কমানো কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে একটু মনোযোগী হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। যে বিক্রেতারা পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং করছে তাঁদের গুরুত্ব দিতে হবে। অথবা অর্ডার দেওয়ার সময় বলে নিতে হবে কেমন প্যাকেজিং চাই। এভাবে ক্রেতার মনোভাবে পরিবর্তন এলে, পরিবর্তন হবেন বিক্রেতারা। সবাই মিলে দায়িত্ব নিলে অনলাইন কেনাকাটায় প্লাস্টিক বর্জ্যও কমে আসবে।
পরিবেশবান্ধব মেন্সট্রুয়াল পণ্য
পৃথিবীর একটা বড় সংখ্যায় নারী। প্রতিমাসে তাঁরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করছেন; যা বৈশ্বিক প্লাস্টিক দূষণে প্রভাব ফেলছে। তাই বিকল্প পণ্য নিয়ে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে মেন্সট্রুয়াল কাপ কিংবা কাপড়ের ন্যাপকিন বেছে নেওয়া যেতে পারে। পরিবেশবান্ধব ও অনেকবার ব্যবহারযোগ্য এবং জীবাণুবিয়োজ্য ন্যাপকিনও এখন পাওয়া যাচ্ছে।
মানুষের সচেতনতা বাড়ানো ব্যক্তিপর্যায়ে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী সবার মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে সবাইকে। প্লাস্টিকমুক্ত জীবনযাপনের অভ্যাস ছোটদেরও শেখাতে হবে। এ নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রচারণায় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যেতে পারে।
সূত্র: গুড হাউসকিপিং
ছবি: পেকজেলস ডট কম