বিড়ালদের সাধারণত একটু রাশভারী স্বভাবের বলেই মনে করা হয়। তারা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো থাকতে বেশি ভালোবাসে। তবে বিড়ালের সঙ্গে একবার ভালোভাবে বন্ধুত্ব করতে পারলেই কিন্তু সে আর আপনার পিছু ছাড়তেই চাইবে না। আপনার বিড়ালের সঙ্গে যদি একেবারেই ভাব না জমে, তাহলে বুঝতে হবে, আপনি তার ভাষায় কথা বলছেন না।
গবেষণা বলছে, বিড়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। তাদের দিকে তাকিয়ে হাসলেই তারা বন্ধুত্বের জন্য এগিয়ে আসে। তবে মানুষের মতো দাঁত বের করে নয়, বিড়ালের মতো করে হাসতে হবে। অর্থাৎ চোখ ছোট করে ধীরে ধীরে পলক ফেলতে হবে। বিড়াল আর মানুষের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এই অভিব্যক্তির মাধ্যমে বিড়ালদের কাছে যাওয়া সহজ। ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের মনোবিজ্ঞানী কারেন ম্যাককম জানান, বিড়াল ও মানুষ খুব সহজেই এভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
বিড়ালরা প্রফুল্ল ও শান্ত থাকলে বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, তারা চোখ অর্ধেক বন্ধ রেখে ধীরে ধীরে পলক ফেলে। বলা হচ্ছে, এটিই হলো বিড়ালদের হাসি। মানুষ যখন এই অভিব্যক্তি নকল করে, তখন বিড়ালরা মনে করে, আপনি তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করছেন এবং তার সঙ্গে মিশতে আগ্রহী।
ঘটনাটি আরও ভালোভাবে বুঝতে দুটি পরীক্ষা চালানো হয়। প্রথম পরীক্ষায় ১৪টি পরিবারের ২১টি বিড়াল এবং তাদের মালিকেরা অংশ নেন। মালিকদের বলা হয় প্রায় এক মিটার দূর থেকে বিড়ালের দিকে ধীরে ধীরে পলক ফেলতে। দেখা যায়, বিড়ালরা এই পলকের প্রতিক্রিয়ায় বিস্ময়করভাবে আরও ধীরে পলক ফেলে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
দ্বিতীয় পরীক্ষায় ২৪টি বিড়াল এবং তাদের সঙ্গে অচেনা কিছু মানুষ অংশ নেন। এখানে মালিকদের পরিবর্তে তাঁরা বিড়ালের দিকে পলক ফেলেন এবং বিড়ালগুলোর প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা হয়। এখানে বেশ অবাক হওয়ার মতো একটি ব্যাপার পর্যবেক্ষণ করা হয়। এবার বিড়ালগুলো শুধু পলকই ফেলে না, বরং তাদের বাড়ানো হাতে এগিয়েও আসে।
এই গবেষণার প্রধান কারেন ম্যাককম বলেন, ‘বিড়ালের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করতে এই পদ্ধতি দারুণ কাজ করে। আপনি আপনার চোখ ছোট করে বন্ধ করুন, দেখবেন বিড়ালও একইভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে।’
বিড়ালরা সাধারণত কুকুরের মতো খোলামেলা না হলেও তারাও মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। বেশ কিছু গবেষণা বলছে, বিড়ালরা তাদের মালিকের মনোযোগ, আবেগ, এমনকি দুঃখও বুঝতে পারে। তারা তাদের মালিকের নাম পর্যন্ত বুঝতে পারে।
বিড়ালরা কেন এই অভিব্যক্তি পছন্দ করে? অনেকের এই ব্যাপারে কৌতূহল রয়েছে। ধারণা করা হয়, বিড়ালরা এই অভিব্যক্তিকে নিরাপদ মনে করে, কারণ বিড়াল একটানা তাকিয়ে থাকাকে হুমকি হিসেবে দেখে। তবে এটাও সম্ভব যে মানুষ এই অভিব্যক্তিতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায় বলেই বিড়ালরা এটিকে নিরাপদ ভাবে।
এ কৌশল শুধু বিড়ালদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রেই যে ভালো, তা কিন্তু নয়; এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করতে সাহায্য করে। যখন বিড়ালরা বুঝতে পারে তারা নিরাপদ আছে এবং তাদের প্রতি কেউ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করছে, তখন তারা বেশ স্বস্তিতে থাকে।
তাই আপনি যদি আপনার বিড়ালের সঙ্গে দ্রুত ভাব জমাতে চান, তাহলে এই সহজ কৌশল ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এটি আপনার বিড়ালকে আপনার প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট করবে এবং আপনাদের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
সূত্র: ডেইলি পজ
ছবি: পেকজেলস ডট কম