যে ৫টি বিষয় খেয়াল রাখলে আয়ত্বে থাকবে পরিবারের মাসিক বাজেট
শেয়ার করুন
ফলো করুন

প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো পরিবারের মাসিক মোট আয় ও ব্যয় বের করতে হবে। এরপর দেখুন কোনটি বেশি। যদি আয় বেশি হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই, আর যদি সমান সমান কিংবা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি তাহলে কিন্তু ভাবতেই হবে। কোন কোন খাতে খরচ তুলনামূলক কমানো যায় বা বাড়তি আয়ের কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। অথবা পরিবারে এমন কোনো সদস্য আছে কি না যে পরিবারের খরচে অংশ নেয় না, তাকেও কিছুটা দায়িত্ব ভাগ করে  দেওয়া। আবার এমনও হতে পারে পরিবারে আয় করার মানুষের সংখ্যা বেশি হলে কাউকে দিয়ে দিন বিল দেওয়ার দায়িত্ব কাউকে মাসিক শুকনো বাজার আর কেউ নিল কাচা শাক সবজির ভাগ। এটাও কিন্তু করে দেখতে পারেন এতে করে একজনের ওপর যেমন চাপ কমবে তেমনি ছোট সদস্যরাও দায়িত্ব নেওয়া শিখবে। আসুন তবে এবার নজর দেই কীভাবে ব্যালেন্স করা যায় বাজেটে-

মাসিক খরচ নির্দিষ্ট করা

প্রতি মাসে খরচের কিছু বিষয় থাকে ধ্রুবকের মত যেমন,
• ভাড়া বাসায় থাকলে, বাসা ভাড়া
• বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট বা অন্যান্য সকল বিল
• দৈনন্দিন বাজার
• ওষুধ-পত্র
এ ধরনের খরচগুলোতে মাসিক পরিবর্তন খুব একটা আসে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে কিছুটা হেরফের হলেও তা ভারসাম্য যোগ্য। হয়তো এই মাসে মুরগির দাম বেড়েছে আপনি প্রতি মাসে ৫কেজি মুরগি কেনেন তাহলে এই মাসে ৩ কেজি কিনুন বাকি ২ কেজি মাছ কিংবা ডিম দিয়ে চালিয়ে নিন। অথবা নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে এক মাস তা কম খেলে ক্ষতি কি। তবে মাথায় রাখুন এসব খাতে আপনার প্রতি মাসে খরচ যদি ২৫ হাজার হয়। পণ্যের দাম বাড়লে এই খরচ ২৭-২৮ হাজার হতেই পারে কিন্তু তা ৩০ হাজার করা যাবে না।

বিজ্ঞাপন

ভরণপোষণ বাবদ ব্যয় নিয়মতান্ত্রিক করুন

পরিবারের সদস্য সংখ্যার ওপর নির্ভর করে এই খাতের ব্যয়টাও নির্দিষ্ট করতে হবে। যেমন ছোট বাচ্চা থাকলে একই সঙ্গে তার ৩ মাসের কাপড় কিনে ফেলুন। যা তাকে ৬/৭ মাস অনায়াসে পড়াতে পারবেন। আর বড়দের ক্ষেত্রে বছরে ২ বার একটু উন্নত টেকসই কাপড় কিনুন তবে উৎসবগুলোকে এর আওতায় না আনাই ভালো। সময় সুযোগ বুঝে কিছুটা বুদ্ধিমানের পরিচয় দিন। যেমন শীত কিংবা গ্রীষ্ম তো আসবেই সকলেরই জানা তাই ঋতু আসার আগেই উপযুক্ত কাপড় কিনে ফেলুন। যা তুলনামূলক কম দামেও পাওয়া যাবে আর আপনিও প্রস্তুত থাকতে পারবেন যে কোনো পরিস্থিতির জন্য।

ধর্মীয় উৎসব বা পারিবারিক যে কোনো উৎসবের বাজেট আলাদা করুন

ধর্মীয় উৎসবগুলো প্রতিবছর আসবে এটি অবধারিত তো এর প্রস্তুতি আগে থেকে নিলে ক্ষতি কি। ধরুন আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। আপনি জন প্রতি ৩ হাজার করে খরচ করতে চান। এবং বছরে বড় উৎসব হয় ২ বা ৩টি, তার মানে আপনার ৫০ হাজার টাকা লাগছে অতিরিক্ত। এখন আপনি এই বড় অঙ্কের টাকা যদি একবারে বের করতে চান নিশ্চয়ই তা কষ্টসাধ্য তাই এই ধরনের উৎসব বাবদ যদি আপনি প্রতি মাসে ৫ হাজার আলাদা করে ফেলেন তাহলে কত হয়- ৬০ হাজার টাকা! কোনটা বেশি সহজ নিজেই মিলিয়ে নিন। টাকার অঙ্কটা উদাহরণ হলেও বিষয়টি কিন্তু এমনই।

বিজ্ঞাপন

ভবিষ্যৎ সঞ্চয় করুন নিয়মিত

প্রতি মাসে হোক না ৫০০টাকা তবুও নিয়মিত সঞ্চয় করা জরুরি। বিপদ আপদ কিংবা প্রয়োজন কিন্তু বলে আসবে না। বড় কোনো পদক্ষেপ নিতেও কিন্তু এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরি মানে জমানো টাকা অনেক বেশি উপকারে আসবে। কোন শখ বা বছরে পরিবার নিয়ে ট্যুরও কিন্তু হতে পারে এই খাতের টাকা দিয়ে।

মাসিক কিছু সঞ্চয় হোক সিকিউরিটি মানি

দৈনন্দিন খরচ এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন যেন কিছু টাকা থাকে সিকিউরিটি মানি হিসেবে। কোন মাসে অতিরিক্ত অতিথি আসতে পারে কিংবা নিকটাত্মীয়দের দাওয়াত বা সামাজিক কোন কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ হতেই পারে সেসময় যেন ঋণগ্রস্ত হতে না হয় বা টাকার চিন্তায় ঘুম হারাম করতে না হয়। মাস শেষে এই খাতের টাকা যদি থেকে যায় তাহলে তা দিয়ে শখের কোন কাজ সেরে ফেলতে পারেন বা প্রয়োজনীয় কোন আসবাবপত্র কিনে ফেলতে পারেন। অথবা পরিবার নিয়ে মাসে একদিন বাইরে খেতে তো যেতেই পারেন এরপরও যদি কিছু থেকে যায় সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে ভাবতেও কিন্তু দোষ নেই।

পরিবার আপনার তাই কোন খাতে কত খরচ করতে হবে তা অবশ্যই আপনি ভালো বুঝতে পারবেন তবে খরচের হাতটাকে উদার করা যাবে না আবার মিতব্যয়ীতা যেন কৃপণতার পর্যায়ে না পৌছায় সে বিষয়ে নজর রাখাও জরুরি। নিজের এবং পরিবারের সকল প্রয়োজন সাধ্যের মধ্যে মিটিয়ে কিছু সঞ্চয় হোক আগামীর জন্য, পরিবারের খারাপ সময়ে ঢাল হয়ে থাকবে আপনার সঞ্চয়। আর আজ আপনি কতটুকু নিয়ম মতো চলছেন তার ওপর। অপব্যয় করলে তো আপনার জন্য একটি লাইন মনে করে দিতে হয় তা হলো- ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি, আশু গৃহে তার দেখিবে না আর নিশিতে প্রদীপ ভাতি।’

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন