মা-বাবা হওয়া যেকোনো ব্যক্তির জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঘটনা। তবে সন্তান লালন-পালন অত্যন্ত দায়িত্বের কাজ। অনেকই, মূলত যাঁরা প্রথমবার মা-বাবা হয়েছেন, তাঁরা বুঝতে পারেন না, সন্তানকে কী শেখাবেন, কখন শেখাবেন। শুধু সন্তানের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করলেই হবে না; বরং জীবনে ভারসাম্যের গুরুত্বও বোঝাতে হবে। শিশুরা ছোট বয়স থেকেই তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে। সে যা দেখে, তা–ই শেখে। তাই তাকে কিছু শেখানোর হলে সবার আগে সুস্থ পরিবেশ দিতে হবে। এ ছাড়া নিজেদেরও এমন কাজ করতে হবে, যা দেখে সে অনুপ্রাণিত হতে পারে। ইতিবাচক লালন-পালন বা পজিটিভ প্যারেন্টিংয়ে সহায়ক হতে পারে, এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
অভিভাবক কোনো কাজের জন্য সন্তানের প্রশংসা করলে বা তাদের পুরস্কৃত করলে তারা উৎসাহিত হয়। বাচ্চাদের উৎসাহিত করলে তারা নিজে থেকেই নিজের ভুলগুলো ধরতে শুরু করবে। এর ফলে ইতিবাচক পদ্ধতিতে তাদের ভুল শোধরানোর কাজ করতে পারবেন অভিভাবকেরা।
শিশুদের দুরন্তপনা সহজাত। ফলে তারা কমবেশি দুরন্ত হবেই। দুষ্টুমিও করবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে তার দুষ্টুমি যেন কারও অসুবিধার কারণ না হয় বা সে যেন কারও ক্ষতি না করে।
বাচ্চা রেগে গেলে বা কোনো অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন কথা বলে বসলেও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো যাবে না। তাহলে বাচ্চারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে ও আপনার কথাও মনোযোগসহকারে শুনবে।
খুব ছোটবেলায় তাকে দুটি শব্দ শিখিয়ে দিন—প্লিজ বা দয়া করে আর থ্যাংক ইউ বা ধন্যবাদ। এই শব্দ দুটি তাকে বিনয়ী হতে শেখাবে। শেখাবে সৌজন্যতাবোধ। সে আরও শিখবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে।
ভাগ করে নিতে শেখান। খাবার হোক বা খেলার পুতুল কিংবা পড়াশোনার সামগ্রী, এসব সঙ্গীদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে শেখাতে হবে। তাহলে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা উদার হয়ে বড় হবে।
বড়রা কথা বললে সেখানে তাদের উপস্থিতি যে বিশেষ বিশেষ সময়ে কাম্য নয়, সেটা তাদের শেখাতে হবে। বিশেষত দুজন ব্যক্তির কথা বলার মধ্যে কোনো বাচ্চা যেন ব্যাঘাত না ঘটায় বা তার কারণে তখন যাতে কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হয়, সেটা শেখাতে হবে।
বাচ্চাদের জন্য বুলিং একটা সংক্রামক রোগে পরিণত হয়েছে। মা–বাবা সচেতন হলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এ জন্য বাচ্চাকে বোঝাতে হবে সে যেন কখনোই কারও দৈহিক গঠন বা গড়ন, গায়ের রং ও পরিবারের আর্থিক সক্ষমতা-অক্ষমতা নিয়ে যেন মন্তব্য না করে। বুলিং বিষয়টা তাকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে।
কোনো কাজ করার আগে অনুমতি নেওয়া শেখানো জরুরি। কেউ অনুমতি না দিলে, সেটা না করা ও সেটার সম্মান রাখা—এই দুটি বিষয়ও বাচ্চাকে শেখাতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তাহলে কোনটি করণীয় আর কোনটি নয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা সে পেতে পারবে। এর ফলে অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।
গোপনীয়তা বিষয়টি কী, সেটা তাকে বোঝাতে হবে। এটা কতটা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও তার জানা উচিত।
খাবার টেবিলে কী করে ভদ্রতা বজায় রাখতে হয়, সেটাও খুব ছোটবেলায় সন্তানকে শিখিয়ে দিতে হবে, তাহলে সে এ বিষয়ে সচেতন থাকবে। বিশেষ করে অতিথিদের সামনে এমন কিছু করবে না, যাতে অভিভাবকদের বিব্রত হতে হয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জীবনের জরুরি একটি বিষয়। এটা ভালো থাকার জন্য যে জরুরি, সেটা ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের জানানো প্রয়োজন। তাহলে নিজেকে তারা পরিচ্ছন্ন রাখতে পারবে।
কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব শেখাতে হবে। সব সময় জিততেই হবে, সবার চেয়ে বেশি নম্বর পেতে হবে, এমন মনোভাব ত্যাগ করা শেখাতে হবে। তাহলে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে এবং বাচ্চা উদার হবে। একই সঙ্গে তার ওপর অনাবশ্যক চাপও থাকবে না।
ছবি: পেকজেলসডটকম