সময়টা বড় অদ্ভুত। একদিকে বিপ্লব ও জয়ের অবর্ণনীয় রক্ত টগবগ করা অনুভূতি। আরেক দিকে এই সময়ের কাণ্ডারী, জেন-জি প্রজন্মের ভাইরাল কথা ও মিমস সংস্কৃতি। সবকিছুকেই এই প্রজন্ম একধরনের ডার্ক হিউমার বা কিছুটা নিজস্ব ঘরানার ক্রুর রসিকতা দিয়েই মোকাবিলা করে। সার্কাজম তাদের কাছে বা হাতের খেল। সব প্রতিকূলতাই তাদের কাছে মিম ম্যাটেরিয়াল। আর গত কয়েক দিনে এমন সব কথা আর ভাইরাল মিমই হয়ে উঠেছে প্রেরণার উৎস। এর কোনোটি কাঁদায় আমাদেরকে, কোনোটি জাগায় হাসির হুল্লোড়। আবার কোনো কোনো স্লোগান বা কথা রক্তে আগুন লাগায়। বিপ্লবের মন্ত্র হয়ে মিমসও যে উদ্দীপনা জাগাতে পারে, তাই দেখতে পেল এবার সবাই। এবারে চলুন এই স্লোগান, ভাইরাল মিমস আর কথাগুলো মনে করি আবার।
তুমি কে, আমি কে
পরিচয় সংকট খুব বড় যন্ত্রণার উৎস হয়ে দাঁড়াতে পারে অনেক সময়। সেই ৭১ সাল থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার শব্দটি আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত ও পতিত একটি শব্দ।
আর এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে এই ব্যাপারটির অনুভূতি আসলে কতটা শক্তিশালী, তা টের পাওয়া গেছে এবার। অভিমান আর প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে তারা তুমি কে, আমি কে? রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার স্লোগানে। এই স্লোগানের উত্তাপ ছড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও। গর্জে উঠেছে সবাই নিজেদের অনুভূতি জানান দিতে এভাবেই।
মারলু ক্যানে
আবু সাঈদের মৃত্যুই মনে হয় এই বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে। বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো নিরস্ত্র আবু সাঈদের বুকে চালানো গুলিতে তাঁর মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারেনি। স্পষ্ট ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলিতে নিহত হয়েছেন আবু সাঈদ।
এই মেধাবী ছেলেটি মরে গিয়ে সবাইকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর মায়ের সেই অসহায় আকুতির মতো প্রশ্ন, 'মোর ছাওয়াক মারলু ক্যানে' সকলের অন্তরে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে বারবার। ক্ষোভ দানা বেঁধেছে, ফেঁটে পড়েছে জনরোষ।
পানি লাগবে, পানি
পানির বোতল দেখলে হৃদয়টা খানখান হয়ে যাচ্ছে সকলের। মুগ্ধকে কি ভোলা যায়? আন্দোলনের সময় রাজপথে সকলকে পানি দিচ্ছিল এই দারুণ প্রতিভাবান ছেলেটি।
তার কন্ঠে পানি লাগবে কারো পানি এই কথাটি ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়ে গেল। আর গুলিতে নিহত হওয়া মুগ্ধ রয়ে গেল আমাদের অন্তরে।
ইন্টারনেট নিজে নিজে বন্ধ হয়ে গেছে
ট্রলের শিকার হয়েছে এই কথাটি একেবারে ভাইরাল পর্যায়ে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরেও নেমে আসে খাড়া।
এই প্রজন্ম আসলে এমনিতে অত্যন্ত ইন্টারনেট নির্ভর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবকিছু শেয়ার না করলে যেন চলে না তাদের একেবারেই। আর তাদের আন্দোলনকে বাধা দিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে ইন্টারনেট নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো হাস্যকর উক্তি পরিণত হয়ে গেছে এক কালোত্তীর্ণ মিমে।
ওই মামা না প্লিজ
এই শব্দগুচ্ছ বেশ আগে থেকেই জেন-জিদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়। সার্কাজম হিসেবে ব্যবহার হওয়া এই ডায়লগ সকলের মুখে মুখে ফেরে। কাউকে বাড়াবড়ি রকমের কিছু থেকে নিরস্ত বা বিরত রাখতেই এটা বলা হয়ে থাকে।
এই নামে একটি ফেসবুক পেজও আছে। আর এই প্রজন্ম যে নিজের বাবা ছাড়া সবাইকেই মামা ডাকে তা অজানা নেই কারো। আর এই 'ওই মামা না প্লিজ' কথাটিই এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে বিভিন্ন আপত্তিজনক ও সীমা ছাড়ানো কথা ও কাজের বিপরীতে।
ভুয়া
প্রায় সময়ই খেলায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এভাবে দুয়ো দেওয়ার সংস্কৃতি আছে বহু যুগ ধরেই। তারপরেও এর কোনো বিকল্প নেই কিন্তু। আর এবার রাজনীতির মাঠে এই ভুয়া শব্দটি যেন পেয়েছে এক অন্য রূপ। নিজেদের প্রতিবাদ আর প্রত্যাখ্যানের অকুন্ঠ প্রকাশ ঘটেছে সমস্বরে এর মাধ্যমে।
নাটক কম করো পিও
ফানি টিকটক ভিডিওর এই ডায়লগ এখন সকলের মুখে মুখে। যখনই দেখা গেছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে যেকোনো কর্তৃপক্ষ মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে বা কপট শোক প্রকাশ করেছে, তখনই নাটক কম করো পিও বলে ভাইরাল মিমের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর তার প্রভাবটিও ছিল বেশ শক্তিশালী। তাই তো বারবার ফেসবুকের ওপরেই বারবার আঘাত এসেছে।