বন্ধুত্বের প্রকৃত সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন জীবনের নানা বাঁকে, নানা সময়ে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সম্পর্ক টিকে থাকে। এমনই এক অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েছেন টেক্সাসের চার বন্ধু দম্পতি। তাঁরা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অবসরজীবনে নিজেদের বন্ধন আরও দৃঢ় করতে করেছেন ব্যতিক্রমী বসবাসের ব্যবস্থা। কর্মজীবনের ব্যস্ত অধ্যায় শেষে আলাদা হয়ে নয়, তাঁরা একসঙ্গেই কাটাতে চেয়েছেন। সেই ইচ্ছা থেকেই গড়ে তুলেছেন এক অভিনব প্রকল্প—বন্ধুত্বের শহর। অস্টিন শহর থেকে মাত্র ৮০ মিনিট দূরে ল্যানো নদীর তীরে তাঁরা গড়ে তুলেছেন এক বন্ধুত্বময় শহর ‘বেস্টি রো’।
স্থপতি ম্যাট গার্সিয়ার ডিজাইনে নির্মিত হয়েছে চারটি পরিবেশবান্ধব ছোট ঘর, প্রতিটির আয়তন ৪০০ বর্গফুট; নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৪০,০০০ মার্কিন ডলার। এই ছোট হোমগুলোর ছাদ ঢালু, যেখানে লাগানো হয়েছে বড়সড় পানির ব্যারেল; যা একত্রে পাঁচ গ্যালন পর্যন্ত বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারে। গরম কমাতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিফলক দেয়াল। আছে ইনসুলেটেড জানালা আর ভেতরটা তৈরি করা হয়েছে প্লাইউড দিয়ে, যা ঘরকে দিয়েছে উষ্ণতা আর খোলামেলা পরিবেশ।
এই চার ঘর ছাড়াও আছে একটি বৃহৎ কেন্দ্রীয় কেবিন, যার আয়তন প্রায় ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট। এটি হলো কমন স্পেস, যেখানে আছে যৌথ রান্নাঘর ও বসার ঘর। বন্ধুরা এখানে একসঙ্গে সময় কাটান, গল্প করেন আর উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেন। আবার চাইলে নিজেদের আলাদা ঘরেও ফিরে যেতে পারেন গোপনীয়তা রক্ষা করেই।
মূলত অবসরের জন্য স্থায়ী আবাস গড়ার উদ্দেশ্য থাকলেও বর্তমানে বেস্টি রো পরিণত হয়েছে এক শান্তিপূর্ণ রিট্রিটে; যেখানে বন্ধুরা সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনে এসে প্রকৃতির সান্নিধ্যে একে অপরের সঙ্গে সময় কাটান। প্রতিটি ঘর থেকেই সরাসরি দৃষ্টিতে দেখা যায় ল্যানো নদী। পুরো কমিউনিটি প্রকৃতির সঙ্গে এমনভাবে মিশে আছে যেন সবকিছুই প্রকৃতির অংশ। এটি কেবল অবসরের আবাস নয়, বরং সম্পর্কের দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি।
এই উদ্যোগের পেছনে মূল অনুপ্রেরণা ছিল আজীবন বন্ধুত্বকে জিইয়ে রাখা, সেটা জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসেও। এটি কেবল স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, বরং সম্পর্কের দৃঢ়তায় গড়ে ওঠা এক জীবন্ত শহর।
এই গল্প আমাদের শেখায়, জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন অর্থ, সম্পদ কিংবা সাফল্য নয়; বরং প্রকৃত সম্পদ হচ্ছে সেই মানুষগুলো, যাঁদের সঙ্গে জীবনের মুহূর্তগুলো ভাগ করে নেওয়া যায়। আর সেই মুহূর্তগুলো যদি সচেতনভাবে গড়ে তোলা যায়, তবে বন্ধুত্বের শক্তিতেই সৃষ্টি হতে পারে এক নতুন উষ্ণ পৃথিবী।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
ছবি: ইন্সটাগ্রাম