স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার। ঈদ আসলেই এই গানের কথাগুলো আমাদের আবেগী করে তোলে। সারা বছর মানুষ এই দিনের জন্য অপেক্ষা করে কবে ঈদ বা কোনো উৎসব আসবে এবং তারা বাড়ি ফিরবে। ঈদ আসলেই নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া সকলের কাছেই খুব আরাধ্য। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-স্বজনসহ সবার সঙ্গে দেখা করার জন্য, আনন্দ ভাগাভাগির জন্য সবাই ছুটে যায় নাড়ির টানে নিজের শিকড়ের কাছে। আমাদের ঈদের মতো এতো ব্যাপকভাবে দেখা না দিলেও অন্যান্য ধর্মের উৎসবেও দেখা যায় বাড়ি ফেরার গল্প। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উৎসবে দেখা যায় এভাবে বাড়ি ফেরার দৃশ্য। আজ নানা দেশের বিভিন্ন উৎসবে নাড়ির টানে মানুষের বাড়ি ফেরার মর্মস্পর্শী গল্প তুলে ধরা হলো।
ফিলিপাইন
ফিলিপাইনে, 'বালিকবায়ান' নামে পরিচিত একটি ঐতিহ্য রয়েছে। তাগালগ ভাষায়, বালিকবায়ান অর্থ স্বদেশে ফিরে যাওয়া। বিদেশে কাজ করা অনেক ফিলিপিনো নাগরিকের জন্য, 'বালিকবায়ান বাক্স' তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার প্রতীক, যদিও বা তারা শারীরিকভাবে বাড়ি ফিরে না পারে। বালিকবায়ান বাক্সে বিভিন্ন জিনিস থাকে। যেমন ব্যবহৃত পোশাক, খাবার, খেলনা আর ফিলিপাইনের পরিবারগুলিতে পাঠানো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস।
এই ঐতিহ্যটি ১৯৭০ এর দশকে অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে এই বাক্স পাঠানোর চল গ্রামের দুস্থ পরিবারগুলিকে সহায়তা করার জন্য শুরু হয়েছিল। বালিকবায়ান বাক্সটি ফিলিপাইন ও বিশ্বব্যাপী ফিলিপিনো প্রবাসীদের মাঝে এক বন্ধন গড়ে তোলে। অন্য দেশে বসবাসরত ফিলিপিনো নাগরিকদের তাদের মাতৃভূমিতে আসতে এবং দেখার জন্য উৎসাহিত করার জন্য ফিলিপাইন সরকার বালিকবায়ান প্রোগ্রামটি চালু করেছিল।
চীন
চীনে সবচেয়ে বড় বাড়ি ফেরার ঢল নামে বসন্ত উৎসবে, যা চীনে চুয়ান উৎসব নামে পরিচিত। চীনা পত্রিকার সূত্র মতে, প্রতিবছর বসন্ত উৎসবে লাখ লাখ চীনা মানুষ শহর থেকে তাদের শিকড়ের টানে যার যার গ্রামে ছুটে যান। এই যাত্রাটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জার্নি হিসাবে ধরা হয়।
অনেকের কাছে এটিই সারাবছরে তাদের পরিবারের সাথে একমাত্র সাক্ষাতের সুযোগ হিসাবে আসে। চীনা নববর্ষ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোক তাদের শহর থেকে কাজ করা বা পড়াশোনা করা পরিবারের সাথে পুনরায় একত্রিত হওয়ার জন্য উম্মুখ হয়ে ওঠে। এই ছুটি প্রায় দুই সপ্তাহ লম্বা হয়ে থাকে, যা অনেকের জন্য একটি আদর্শ ভ্রমণের সময়।
ব্রাজিল
'ফেস্তা জুনিনা' ব্রাজিলের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রতি জুন মাসে এটি উদযাপিত হয়।
উৎসবটি ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজদের প্রভাবে শুরু হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে এর একটি ধর্মীয় অর্থ ছিল। সান্তো আন্তোনিও এবং সাও জোয়াও এর মতো সাধুদেরকে মনে করা হয় এই উৎসবে।
দক্ষিন কোরিয়া
কোরিয়ান থ্যাংকসগিভিং হিসাবে পরিচিত 'চুসোক' দক্ষিন কোরিয়ার অন্যতম বড় উৎসব গুলোর একটি। প্রতিবছর এ উৎসব উপলক্ষে বহু কোরিয়ান বাড়িতে ছুটে যান। চুসোকে তিন দিনের ছুটি থাকে, যা প্রতি শরতে উদযাপিত হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ছুটির দিন যেখানে সবাই নতুন ফসল দেখার জন্য তাদের শিকড়ের পানে ফিরে যায়। চুসোক কোরিয়ার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিন এবং কোরিয়ান সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ।
এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবে চার আচারের মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন সংপিয়ন, শিমের ভর্তাসহ রাইস কেক ও অন্যান্য বিভিন্ন খাবার উপভোগ করে থাকেন। যদিও সময়ের সঙ্গে কিছু ঐতিহ্য হ্রাস পেয়েছে বা আধুনিকীকরণ হয়েছে, তবুও পরিবারের সঙ্গে দেখা করা এই উদযাপনের মূল বিষয় হিসাবে রয়ে গেছে। অনেক লোক তাদের প্রিয় পরিবারের সঙ্গে এই উৎসবে একত্রিত হওয়ার জন্য দীর্ঘ দূরত্ব ভ্রমণ করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
মেক্সিকো
'মৃতদের দিন' হল মেক্সিকোর একটি ঐতিহ্যবাহী হলিডে, যার মাধ্যমে পরিবারের মৃত সদস্যদের উদযাপন এবং স্মরণ করা হয়। মৃত্যুর বিষণ্ণ ধারণার বিপরীতে এই ঐতিহ্য মৃত্যুকে আরও আনন্দ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে উদযাপন করতে শেখায়।
এদিনের ঐতিহ্যের মধ্যে আছে গাঁদাফুল দিয়ে কবর সজ্জিত করা, মৃত ব্যক্তির ছবি ও প্রিয় খাবার দিয়ে একটি বেদী বা অফ্রেন্ডা তৈরি করা এবং খাবার এবং পানীয় সহযোগে তাদের জীবন উদযাপন করা। অনেক মেক্সিকান পরিবারের সঙ্গে এই দিনটি উদযাপন করতে এবং একত্রে প্রার্থনা করতে তাদের শহরে ফিরে আসে।
সূত্র: টেম্পো ডট কম