এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার–সংযোগ এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের জন্য পণ্যের বহুমুখী বিক্রেতা খুঁজে পেতে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ৪ থেকে ৫ অক্টোবর ২০২৩ বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট আগারগাঁও ঢাকায় দুই দিনব্যাপী ক্রেতা–বিক্রেতা সম্মিলন ও পণ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের সাধারণ ব্যবস্থাপক ফারজানা খান জানান ক্রেতা–বিক্রেতা সম্মিলনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ২৪ আগস্ট ২০২৩ পণ্য উৎপাদনকারী নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি প্রস্তুতিমূলক কর্মশালা আয়োজন করা হয়। এ কর্মশালায় উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও পণ্যের পাইকারি বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ, ক্রেতার চাহিদা ইত্যাদি বিবেচ্য বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বুটিকস, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, জুয়েলারি ও হস্তশিল্প পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নির্বাচিত নারী উদ্যোক্তারা অংশ নেন। সম্মিলনে নির্বাচিত সেরা পণ্য নিয়ে ৮৫ জন নারী উদ্যোক্তা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য ও সরবরাহ–সক্ষমতা বাণিজ্যিক ক্রেতাদের উদ্দেশে প্রদর্শন করছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশন ২০১০ সালে যখন তাদের কাজ শুরু করে, তখন দেখা গেল অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যাঁরা ভালো কাজ করেন কিন্তু কীভাবে পণ্য পরিবেশন করলে ক্রেতাদের পছন্দ হবে, কী ধরনের রং ও নকশা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের পছন্দ হবে—এ বিষয়ে তাঁদের ধারণায় কিছু কমতি রয়ে গেছে। তখন থেকেই এসব ক্ষেত্রে নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় প্রথম উদ্যোক্তা মেলা গুলশানের স্পেক্ট্রা সেন্টারে করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের পণ্যের মান উন্নয়নে সহায়তা করে। উদ্দেশ্য ছিল, যাতে চাহিদা তৈরি হয় বড় পরিসরের ক্রেতাদের কাছে।
প্রদর্শনীতে দেখা গেল, ঢাকার বাইরের অনেক উদ্যোক্তার কাজ খুবই সুন্দর। জানা গেল, তাঁদের পণ্যের গুণগত মান ও পরিবেশনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে শাণিত করার প্রয়াস নিয়ে আসছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে অনেকেই জাতীয়ভাবে ও ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন।
মেলায় যশোরের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথার একটি নান্দনিক কর্নার রয়েছে। রাঙামাটিতেও পণ্য উন্নয়ন নিয়ে কাজ হচ্ছে জানা গেল। কলাপাতা থেকে তৈরি শাড়ি বেশ প্রশংসিত হয়েছে এখানে। সিলেটের রাধা রানীকে দিয়ে সেটি তৈরির প্রশিক্ষণও স্থানীয় নারীদের দেওয়া হয়েছে। যশোর নকশিকাঁথা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মরিয়ম নারগিস জানালেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের ১৭৪টি ক্লাস্টারের মধ্যে একটি এটি। তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রং ও নকশার সবকিছুর বিষয়ে তাঁদের শেখানো হয়। তিন হাজার নারী কাজ করছেন তাঁর উদ্যোগের আওতায়।
আয়োজনে এসেছিলেন দেশের সুপরিচিত ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ খান। তিনি জানান, তাঁরা যখন কাজ শুরু করেন, সে সময় ইন্টারনেট মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। পণ্যের সন্ধানে দূরদূরান্তে যেতে হতো। কিন্তু এসএমই ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগ নেওয়ার পর পণ্যের গুণগত মানের উন্নতি হচ্ছে। এর ফলে দেশীয় ক্রেতা আর সেই সঙ্গে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে দেশি পণ্যের।
৩০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া কাঁসা–পিতল নিয়ে কাজ করছেন শিউলি আক্তার। ক্রেতাদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। জামালপুর শরীয়তপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের কারিগরদের তৈরি করা কাঁসার তৈজস দেখা গেল এখানে। কৈফিয়া তাঁতঘরের ডিজাইনার রওশন আরা কাজ করছেন সিলেটের ৩০০ বছরের পুরোনো মণিপুরি তাঁতবস্ত্র নিয়ে। মূলত শাড়ি ও ফিউশনওয়্যারের মতো পোশাক দেখা গেল সেখানে। রিসাইকেল করা মণিপুরি শাড়ি দিয়ে ব্যাগ বানাচ্ছেন তাঁরা। মণিপুরি গামছাও রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোগ নিয়ে ছিল রং, কারুজ, মুয়াজ কালেকশন, স্থপতি জয়ন্তী। সামান্তা ছিলেন ম্যাক্রেমের গয়না নিয়ে। কুঞ্জরী কপারের গয়না নিয়ে এসেছে। মুক্তা নিয়ে আসে পার্ল লাভার ও প্রবাহিণী। কাঠের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন সুলতানা রাজিয়া ডিজিটাল হস্তশিল্প উদ্যোগ।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হিসেবে ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া খানম, দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব ইকমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি শমী কায়সার এবং প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিবি প্রোডাকশনসের স্বত্বাধিকারী বিবি রাসেল।
ছবিঃ লেখক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেইজ