ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এখন সকলের মনোযোগের কেন্দ্রে। এই এলাকার পাথর লুটপাটের ঘটনা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। সিলেট জেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যসমৃদ্ধ এলাকা। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের এই স্থান অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের ভিতরে ও বাইরে থেকে আগত ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এটি। আর এখানকার মূল আকর্ষণই হচ্ছে এর পাথর কোয়ারি।
কোয়ারি বলতে আসলে বোঝায় খোলা খনি। এখানে প্রাকৃতিকভাবেই পাথর মজুদ হয়েছে, গড়ে উঠেছে এই কোয়ারি। প্রধানত চুনাপাথর ও জীবাশ্মযুক্ত ঝিনুক দিয়ে গঠিত এই পাথরগুলো লক্ষ লক্ষ বছর ধরে নদীর প্রবাহে ক্ষয়প্রাপ্ত ও মসৃণ হয়েছে। এর ফলে এক অপূর্ব সুন্দর পাথরের সমাহার সৃষ্টি হয়েছে, সবুজ পাহাড় ও ঘন বনভূমির মাঝে সাদাপাথরের এই পাথরের সজ্জা সত্যি মনোহর।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের রয়েছে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বও। শত শত বছর ধরে এখানকার পাথর মন্দির, প্রাসাদ ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে। স্থানীয় কারিগররা এই পাথর দিয়ে সূক্ষ্ম নকশা ও ভাস্কর্য তৈরি করেন, যা পর্যটকদের কাছে স্মারক হিসেবে বিক্রি হয়। মূলত শৌখিন সাজসজ্জা ও নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয় সাদাপাথরের পাথর।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা এগুলো দিয়ে বাড়ি, বাগান এবং অন্যান্য জায়গা সাজান। এছাড়াও এগুলো ভবন, রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণেও ব্যবহৃত হয়।
শৌখিন ব্যবহার
মসৃণ ও সাদা রঙের এই পাথর দেখতে সুন্দর এবং বাগান বা আঙিনায় সাজানো পথ, বর্ডার বা বিশেষ নকশা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
নির্মাণ উপকরণ
এই পাথর মজবুত, তাই বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ইট ও কংক্রিটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
স্থানীয় গুরুত্ব
সাদাপাথর জাফলং-এর বড় একটি পর্যটন আকর্ষণ, এবং অনেক স্থানীয় মানুষ এগুলো সংগ্রহ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
পরিবেশগত প্রভাব
অপরিকল্পিত খনন পরিবেশের ক্ষতি করছে—যেমন ভোলাগঞ্জ এলাকায় অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাদাপাথরের এই পাথরের নানাবিধ ব্যবহার ও মূল্যমান মাথায় রেখে নির্বিচারে লুটপাটে পুরো এলাকা পাথরশূন্য হয়ে পড়েছে সম্প্রতি। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ পরিমাণে লুট ও চুরি হওয়া পাথর। সাদাপাথরের এই পাথর কোয়ারি আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই একে সুরক্ষিত রাখতে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম