সড়কে নিরাপদ চলাচলের বেশ কিছু নিয়ম থাকলেও মানতে অনীহা আমাদের। এতে বিশৃঙ্খলা যেমন বাড়ে তেমন বাড়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। এখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ছাত্রদের কল্যাণে দেখা যাচ্ছে এই আইনগুলোর বাস্তব রূপ। চলুন জেনে নেই কোন ট্রাফিক নিয়মগুলো আমরা সকলেই জানি কিন্তু মেনে চলি না।
১.গণপরিবহনে যত্রতত্র উঠা-নামা
নির্দিষ্ট বাস স্টপে না নেমে সুবিধা মতো জায়গায় নামার একটা প্রবণতা আছে আমাদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একইভাবে অনেকেই চলন্ত গাড়িতে উঠে পড়েন। আমরা এতে এতই অভ্যস্ত যে গণপরিবহনগুলোও নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়াই যাত্রী উঠা-নামা করায়। অথচ ট্রাফিক নিয়ম স্পষ্ট বলে 'চলন্ত গাড়িতে ওঠা ও নামা থেকে বিরত থাকুন'। নির্ধারিত স্থান ব্যতীত রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করাও ট্রাফিক আইনের লঙ্ঘন।
২.পারাপারে ফুট-ওভারব্রীজ/আন্ডারপাস/জেব্রাক্রসিং ব্যবহার না করা
রাস্তাপারে আমরা ট্রাফিক লাইটের চেয়ে হাতের ব্যবহার বেশি করি। আবার সড়ক বিভাজক টপকিয়ে পারাপারের দৃশ্যও নিয়মিত। ব্যস্ততম সড়কগুলোতেও এই অনিয়ম চোখে পড়ে। হাতের ইশারায় কিংবা বিভাজক টপকে গাড়ি থামিয়ে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার দণ্ডনীয় অপরাধ। আমাদের উচিত রাস্তা পারাপারে সবসময় নিকটবর্তী ফুট-ওভারব্রীজ, আন্ডারপাস বা জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করা।
৩.পারাপারে অসচেতনতা
সবাই জানি যে জেব্রাক্রসিং, আন্ডারপাস কিংবা ওভারব্রিজ না থাকলে ভালো ভাবে দুপাশ দেখে সড়ক পার হতে হয়। কিন্তু এসময় ফোনে কথা বলা কিংবা ইয়ারফোনে গান শোনা ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তা পারাপারের সময় ইয়ারফোন ব্যবহার করা ও মোবাইলে কথা বলা উচিত না।
৪.ফুটপাত ব্যবহার না করা
মূল সড়কগুলোতে চওড়া ফুটপাত থাকে। কিন্তু আমরা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক সময় সড়কেই হাঁটা শুরু করি। গল্প করতে করতে ফুটপাতে পাশাপাশি হাঁটার দৃশ্যও হরহামেশা চোখে পড়ে। কিন্তু ট্রাফিক নিয়ম বলে ফুটপাতে পাশাপাশি নয় বরং সারিবদ্ধ হয়ে হাঁটতে হয়। যেন অন্যপাশ দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারে৷ আর যেখানে ফুটপাত নেই সেই রাস্তায় ডান পাশ দিয়ে হাঁটাই নিয়ম।
৫.রাস্তায়/ফুটপাতে নির্মাণ সামগ্রী/দোকানের মালামাল/দোকানের সাইনবোর্ড রাখা
রাস্তা কিংবা ফুটপাত দখল করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু বিভিন্ন সড়কে চোখে পড়ে বালু,ইট,রড,সিমেন্টের মতো নির্মাণ সামগ্রী। কাঠ-বেতের ফার্নিচারে দোকান, স্যুটকেস, এমন অনেক পণ্যও ক্রেতাদের নজর কাড়তে দোকানের পাশে ফুটপাতে রেখে থাকেন দোকানীরা। এতে গাড়ি ও পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সুনাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব রাস্তা দখল না করা, বিশেষ করে গলির ভেতরের সরু রাস্তাগুলো।
৬.সিটবেল্ট না বাঁধা
মামলার ভয়ে লাইসেন্স বা প্রয়োজনীয় কাগজ সঙ্গে রাখলেও চালকদের অনীহা আছে সিটবেল্ট বাঁধার প্রতি। চালকের পাশের সিটে কেউ বসলে তাঁকেও সিটবেল্ট বাঁধতে হবে৷
৭.হেলমেট ছাড়া বাইক বা সাইকেল চালানো
মোটর সাইকেল চালকেরা অনেকে হেলমেট ব্যবহার করলেও আরোহীদের বেশির ভাগ সময় দেখা যায় হেলমেট ছাড়া। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হেলমেট চালক ও আরোহী দুজনের জন্যই সমান প্রয়োজন। কোনো অবস্থাতে মোটর সাইকেলে তিনজন ওঠা যাবেনা। এটাও নিয়ম। যদিও এই অনিয়মও চোখে পড়ে অহরহ।
আর সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে হেলমেট না পড়াটাই স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের দেশে। কিন্তু এই হালকা যান চালানোর সময় ব্যবহার করতে হবে হেলমেট।
৮.উলটো পথে গাড়ি চালানো
গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছাতে একটু ঘুরে ইউ-টার্ন নেওয়ার বদলে উলটো পথে গাড়ি ঢুকানোও খুব নিয়মিত ঘটনা। বিশেষ করে রিকশা, সিএনজি, বাইক, সাইকেল এই অনিয়মগুলো বেশি করে।
৯.ঘনঘন লেন পরিবর্তন
ওভারটেক করার জন্য কিংবা আগে পৌঁছানোর জন্য যেদিকে তুলনামূলকভাবে যানবাহন কম, সেদিকে গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়ার চিত্রও হরহামেশা চোখে পড়ে।
১০.নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং ও যাত্রীর উঠা-নামা
নো পার্কিং জোনে গাড়ি, নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী উঠা-নামা, ফুটপাতে বাইক, সাইকেল তুলে দেওয়াও অন্যান্য অনিয়মের মতো নিয়মিত ঘটনা। অথচ ট্রাফিক আইন বলে ইন্টারসেকশনে এবং রাস্তায় যাত্রী উঠানো/নামানো হতে বিরত থাকুন। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করাবেন না। গাড়ী থামানোর ক্ষেত্রে সর্বদা রাস্তার বাম ঘেঁসে থামাবেন। যাত্রী উঠানো নামানোর স্থান ছাড়া যাত্রী ওঠানো/নামানো থেকে বিরত থাকুন।'অথচ আমরা মানি না এই নিয়মও।
ছবি: প্রথম আলো