কেয়ার অব ঢাকার প্রদর্শনী: নিজেকে আর নিজের ঘর সাজাতে বৈচিত্র্যময় অনুষঙ্গের আয়োজন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আমার ঢাকা। ফেসবুকভিত্তিক পপআপ স্টোর কেয়ার অব ঢাকার আসন্ন অফলাইন প্রদর্শনী অটাম ক্লাউডসের থিম এটিই রাখা হয়েছে। আসলে ঢাকা তো আমারই। এই আমি মানে আমি–আপনি সবাই। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষকে যেমন বুড়িগঙ্গাবিধৌত এই উদার শহর আপন করে নিয়েছে, তেমনি পরিযায়ীদের সংস্কৃতি যুগ–যুগান্তর ধরে ঢাকাকে করেছে ঋদ্ধ।

তাই আমার ঢাকা বললে সবাই আমরা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠি। ঢাকার সমৃদ্ধ অতীত, ঝলমলে মেট্রোপলিটনসুলভ বর্তমান আর আশাজাগানিয়া ভবিষ্যৎ আমাদের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অটাম ক্লাউডস প্রদর্শনীর আয়োজনে ঢাকার বিশিষ্ট প্রতীকগুলোকে অনুষঙ্গ হিসেবে পাওয়া যাবে। এ এক দারুণ ব্যাপার না হয়ে যায় না!

বিজ্ঞাপন

হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাইয়ের জোর ভলিউমে শুনে সবার কান ঝালাপালা করে দেওয়া ‘হাওয়া মে উড়তা যায়ে’ গানটার কথা তো সবারই মনে আছে। ঢাকার অলিগলিতে কিন্তু এ চিত্র খুবই পরিচিত সেই যুগ যুগ ধরে। পুরোনো দিনের ক্যাসেট প্লেয়ারে গান বাজত বাড়িতেও। সেসব সুরেলা স্মৃতির প্রতি ট্রিবিউট দিতে চামড়ার নান্দনিক সব ব্যাগের জন্য জনপ্রিয় গুটিপা এনেছে মেলো টেপ মেসেঞ্জার ব্যাগ, যা একেবারে সেই টেপ রেকর্ডারের আদলেই তৈরি। এ ছাড়া গুটিপার ডিজাইনার ও স্বত্বাধিকারী তাসলিমা মিজির ডিজাইন করা চমৎকার সব সিগনেচার টোট, স্লিং, ক্রস বডি, ক্লাচ, ব্যাকপ্যাক তো থাকছেই।


ব্যাগ আসলে ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে একেবারেই অপরিহার্য। কিন্তু তার সঙ্গে বাস্তবসম্মত আর সুবিধাজনকও হওয়া চাই ব্যাগগুলো। সেদিকে দ্য হকার্সের কর্ণধার তাসনিয়া এরা কোনো ছাড় দেন না। ব্যাগের এ উদ্যোগ এই প্রথম কোনো প্রদর্শনীতে অংশ নিতে যাচ্ছে। ব্যস্ত ঢাকার বড় বড় অট্টালিকার ভিড়ে, রোদে পুড়ে, জ্যাম ঠেলে কার্জন এলাকায় রিকশায় ঘুরে বেড়ানোর প্রশান্তি, একদল স্বপ্নবাজ টগবগে তরুণ–তরুণীদের দোতলা লাল বাসে হইহুল্লোড় করা ঢাকার এমন সব বাস্তব চিত্র নিয়ে দ্য হকার্স এনেছে এমন একটি ব্যাগ, যা নিত্যব্যবহার্য জিনিসের বোঝা নিয়ে আপনার দশভূজা রূপ মেলে ধরতে পাশে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার লাল দোতলা বাসের কথা যখন এলই, অহংয়ের ব্যতিক্রমী কাঠের ক্লাচগুলোর কথা বলতেই হয়। ডিজাইনার নিশাত ফেরদৌস আনিকার নকশার মুনশিয়ানার প্রমাণ মেলে এই থিমভিত্তিক ক্লাচ ব্যাগগুলোতে। এদিকে কেউ ঢাকার রাস্তায় হাঁটল আর বিআরটিসির লাল টুকটুকে ডাবল ডেকার বাস দেখল না, এমন তো হতেই পারে না। অহং আমার ঢাকা থিমে কাঠের ক্লাচে তাই নিয়ে এসেছে বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসকেই। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হলো, এ বাসের প্রতিটি জানালায় রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার প্রতিকৃতি।


ইয়ামিনস নামে দুই বোনের ফ্যাশন উদ্যোগটি পোশাক আর অনুষঙ্গ—দুটিই নিয়ে আসছে অটাম ক্লাউডস প্রদর্শনীতে। আমার ঢাকা থিমে তাদের পাট ও চামড়ার সমন্বয়ে তৈরি ব্যাগটিতে নয়নমনোহর ময়ূরের প্রতিকৃতি। আর তা করা হয়েছে সূচিশৈলীর মাধ্যমে। নিখুঁত হাতের কাজটির দিকে খেয়াল করে তাকালেই বোঝা যাবে, ছবিটি ঢাকার প্রিয় সিগনেচার বাহন রিকশাচিত্রের আদলে করা।

আমার ঢাকা থিমে রিকশার প্রভাব রয়েছে আরও একটি চমৎকার উদ্যোগের পণ্যে। নাম তার সবুজ সাথী ইকো ফ্রেন্ডলি সেন্টার। সবুজ সাথী কাজ করে পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট নিয়ে। অটাম ক্লাউডস প্রদর্শনীর জন্য বানানো তাদের সুন্দর চাবির রিংগুলোতে আমাদের প্রাণের শহর ঢাকাকে নিয়ে করা হয়েছে রিকশা পেইন্ট। প্রিয় শহর ঢাকাকে দূষণমুক্ত রাখা আর পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন সবুজ সাথীর প্রভা অরোরা।


শুধু নিজেকে নয়, নিজের ঘরটিকে নান্দনিক সব অনুষঙ্গে সাজানোর আয়োজন থাকছে কেয়ার অব ঢাকার অটাম ক্লাউডস প্রদর্শনীতে। প্রথমে আসা যাক বেনী বুননের গল্পে। পাটের পণ্য বেনী বুননের সিগনেচার প্রোডাক্ট। সব সময় জুট রাগ বা হোম ডেকর পণ্য নিয়ে কাজ করলেও আমার ঢাকা প্রজেক্টে বেনী বুনন নিয়ে এসেছে রিকশা থিমের জুটের তৈরি ওয়াল হ্যাঙ্গিং। রিকশা আসলে ঢাকার একেবারেই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বেনী বুননের শাহেদুল ইসলাম তাই এটিকেই বেছে নিয়েছেন।

আমাদের ঢাকা শহরের শহুরে জীবনের বাসাবাড়িতে জায়গা খুব বেশি থাকে না। এই ছোট্ট জায়গাগুলোকে কত সুন্দরভাবে, নান্দনিকভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করা যায়—এসব এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কাজ করেছে মৃৎ। উদ্যোক্তা মাধুরী দেবীর নেতৃত্বে মৃৎ সব সময় অত্যন্ত সৃজনশীল আর সেই সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনের গৃহসজ্জার সামগ্রী তৈরি করে বাঁশ বা মাটি দিয়ে। সঙ্গে কানের দুল বা হাতে আঁকা ফতুয়ার কাপড়ও পাবেন এখানে।


মতিঝিলের শাপলা চত্বরের শাপলা ফুলের কাঠামো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চারু ও কারুশিল্পের উদ্যোগ আর্ট ওয়েভ ডিজাইন করেছে গাছ সাজিয়ে রাখার চমৎকার একটি হোম ডেকর পণ্য। আর্ট ওয়েভ মূলত অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন আর বাস্তবসম্মত তাক, স্ট্যান্ড আর বিভিন্ন নকশার টেকসই গৃহসজ্জা পণ্য বানায় স্টিল দিয়ে। সঙ্গে কাচ ও কাঠের ব্যবহারও করেন এ উদ্যোগের স্বত্বাধিকারী ও নকশাকার সাকিয়া রশীদ মুন্নী।

কেয়ার অব ঢাকা একটি ফেসবুকভিত্তিক পপআপ স্টোর। তারা ৬ থেকে ৭ অক্টোবর আয়োজন করছে তাদের দ্বিতীয় অফলাইন প্রদর্শনী অটাম ক্লাউডস। এবার ৩০টি ব্র্যান্ড অংশ নিচ্ছে এ আয়োজনে। তারা সবাই তৈরি করেছে এমন একেকটি বিশেষ পণ্য, যা প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের প্রিয় শহর ঢাকাকে। এই অভিনব উদ্যোগের আদ্যোপান্ত জানতে হলে চোখ রাখতে হবে কেয়ার অব ঢাকার পেজে এবং আসতে হবে অটাম ক্লাউডস বাই কেয়ার অব ঢাকা মেলায়, ধানমন্ডি ২৭–এর মাইডাস সেন্টারে। উল্লেখ্য, এই চমৎকার আয়োজনে কেয়ার অব ঢাকার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে বাংলাদেশের প্রথম ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ওয়েব পোর্টাল হাল ফ্যাশন।

ছবিঃ কেয়ার অব ঢাকা ও উদ্যোক্তাদের ফেসবুক পেইজ

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৩: ০০
বিজ্ঞাপন