প্লাস্টিক একবার তৈরি হলে শত শত বছরেও তা নষ্ট হয় না, থেকে যায় বিষাক্ত বোঝা হয়ে।
আধুনিক জীবনযাপনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের ওপর আমাদের নির্ভরতা বাড়ছে। অথচ আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, এই নির্ভরতার মূল্য দিতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। কারণ প্লাস্টিক একবার তৈরি হলে শত শত বছরেও তা নষ্ট হয় না, থেকে যায় বিষাক্ত বোঝা হয়ে। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনের তাগিদেই প্লাস্টিকের আবিষ্কার হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি পরিণত হয়েছে পৃথিবীর জন্য এক নীরব ঘাতকে।
• প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে পড়ে, যা সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
• প্লাস্টিক পোড়ালে নির্গত হয় বিষাক্ত গ্যাস, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
• বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৮ লাখ টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার বড় অংশই পুনর্ব্যবহৃত হয় না।
• শহরাঞ্চলে পলিথিন, প্লাস্টিক বোতল ও প্যাকেটের যথেচ্ছ ব্যবহারে পরিবেশ ভয়াবহ হুমকির মুখে।
বাংলাদেশ ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, যদিও এর বাস্তবায়ন ছিল দুর্বল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২১ সাল থেকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক স্ট্র, কাঁটাচামচ ও কাপ নিষিদ্ধ করেছে। কেনিয়া ২০১৭ সালে সবচেয়ে কঠোরভাবে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করে, যার লঙ্ঘনে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। জার্মানি ও সুইডেনেও রিফিল ব্যাগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমাদের দেশেও কিছু সুপারশপে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ চালু করা হয়েছে, যা আশাজনক পদক্ষেপ।
• পাট বা কাপড়ের ব্যাগ:
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাট বিশ্বে ‘গোল্ডেন ফাইবার’ নামে পরিচিত। বাজার করতে গেলে প্লাস্টিক নয়, পাটের ব্যাগ বেছে নিন। এটি আভিজাত্যপূর্ণ, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব।
• কলাপাতা ও শাল পাতার প্লেট:
খাবার পরিবেশনে আবারও ফিরুক প্রকৃতির ছোঁয়া। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক রেস্টুরেন্ট ও উৎসবে এখন শাল পাতার প্লেট ব্যবহার হচ্ছে। ঢাকার হাজির বিরিয়ানিও পরিবেশিত হয় কাঁঠাল পাতার বাটিতে।
• বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক:
ভুট্টা, আখ, আলুর মতো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি বায়োপ্লাস্টিক সহজেই মাটিতে মিশে যায়।
• বাঁশ, নারকেলের মালা ও কাগজের স্ট্র:
প্লাস্টিক স্ট্র বর্জন করুন। কাগজ বা বাঁশের স্ট্র ব্যবহার করুন। এটি যেমন নান্দনিক, তেমনি পরিবেশবান্ধব।
• স্টিল ও কাচের বোতল:
পানির জন্য প্লাস্টিকের বোতলের বদলে ব্যবহার করুন রিফিলযোগ্য স্টিল বা কাচের বোতল। এতে খরচও কমবে, পরিবেশও বাঁচবে।
বাংলাদেশের তরুণেরা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ‘ওয়েস্ট হিরো’ নামে একটি স্টার্টআপ স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পরিচালনা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ক্লাব আয়োজন করে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ক্যাম্পেইন ও গাছ রোপণ কর্মসূচি। কিছু উদ্যমী উদ্যোক্তা তৈরি করছেন বাঁশের টুথব্রাশ, কাগজের স্ট্র, এমনকি পাটের ফোন কভার।
• বাজার করতে গেলে সঙ্গে রাখুন পাটের ব্যাগ
• রেস্টুরেন্টে গিয়ে স্ট্র না দিতে অনুরোধ করুন
• সব সময় রিফিলযোগ্য বোতল ব্যবহার করুন
• বাচ্চাদের টিফিন দিন কাচ বা স্টিলের বাটিতে
• সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন সচেতনতা বিষয়ক বার্তা
ছবি: ওয়েষ্ট হিরো, হ্যালো ক্রাফট ও ইনস্টাগ্রাম