খ্রিষ্টধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাস বা বড়দিন। এ উৎসবের কথা শুনলে চোখে ভেসে ওঠে ক্রিসমাস ট্রি-এর কথা। আপেল, ঘুঘু, মাছ, ফুল, ফল, মোমবাতি, পাখি, স্বর্গদূতসহ নানা রঙের বৈচিত্র্যময় উপকরণে সাজানো হয় এ বিশেষ সবুজ গাছ। সান্তা ক্লজের লাল-সাদা টুপি ও এই গাছ ছাড়া যেন বড়দিনের উৎসব অপূর্ণ থেকে যায়। তাই ক্রিসমাস ট্রি এ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য রীতি হিসেবে প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত। এই ট্রি হিসেবে ফার বা পাইনের মতো গাছগুলো বেশ জনপ্রিয়।
এ ছাড়া কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি পাওয়া যায় এখন। নতুন বছরের আগমনী বার্তাও থাকে ক্রিসমাসের সাজসজ্জায়। প্রাচীনকালে মোমবাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো শুরু হয়। পরে মোমবাতির স্থান দখল করে নানা রকম রঙিন বৈদ্যুতিক বাতি। তার সঙ্গে থাকে রঙিন বল, কাগজ ইত্যাদি। আর ক্রিসমাস ট্রির চূড়ায় সোনালি তারা লাগানো হয়। এই তারা লাগানো নিয়ে আবার একটি মজার বিশ্বাস আছে। বিশ্বাসটি হলো, তারাটি লাগানোর সময় কোনো কিছু কামনা করলে সে ইচ্ছা পূরণ হয়। এখন ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সবাই বাড়িতে ক্রিসমাস ট্রি সাজান। ঢাকার কোথায় কোথায় পাওয়া যাবে ক্রিসমাস ট্রি এবং সাজানোর উপকরণ, সে খবর রইল হাল ফ্যাশনে।
গুলশান ডিসিসি মার্কেটে কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি পাওয়া যায় দু ধরনের—তিন পায়ের আর চার পায়ের। সবুজ এ গাছের পাতার ধরন হতে পারে কোঁকড়ানো বা মসৃণ। রং হালকা থেকে গাঢ় সবুজ। ছয় ইঞ্চি থেকে আট ফুট উচ্চতার ক্রিসমাস ট্রি পাবেন এখানে ৫০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকার মধ্যে। এর চেয়ে লম্বা ক্রিসমাস ট্রি নিতে চাইলে আগেই প্রি–অর্ডার করতে হবে। দাম পড়বে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ক্রিসমাস ট্রির সবুজ পাতার ফাঁকে সৌন্দর্য বাড়াতে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা নানা রঙের টুনিবাতি দিয়ে সাজানো হয়। বাজারে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের ও বিভিন্ন রঙের লতানো মরিচবাতি পাওয়া যায়।
লাল, সবুজ, নীল, হলুদ, সাদা রঙের মরিচবাতি থেকে বেছে নিতে পারেন যেকোনোটি। লম্বায় ১২ ফুট থেকে শুরু হওয়া মরিচবাতির একেকটি লতার দাম শুরু ১৫০ টাকা থেকে। এ ছাড়া স্টার বা তারাবাতি পাওয়া যাবে ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা, এলইডি বাতি। এগুলো মরিচবাতির মতো জ্বলে-নেভে, তবে তুলনামূলক আকারে একটু বড়। আরও পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের লাল, নীল, গোলাপি রঙের লতানো এলইডি বাতি। পাবেন আঙুর, আম, গোলাপ, প্রজাপতি, সূর্যমুখী, কদম, ছোট্ট পুতুল ইত্যাদির আকারে এলইডি বাতি। নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের এমন সব এলইডি বাতির দাম ২৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। সৌন্দর্য বাড়াতে ক্রিসমাস ট্রির পাতায় পাতায় বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ছোট রঙিন বল। এগুলোতে বিদ্যুৎ-সংযোগের প্রয়োজন নেই, বাইরের আলো বলে এসে পড়লে বল চকচক করে তার ঔজ্জ্বল্য ছড়ায়। লাল, নীল, সোনালি, হলুদ এমন বিভিন্ন রঙের এক সেট বা এক বাক্স রঙিন বলের দাম পড়বে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। ক্রিসমাস ট্রির পাশাপাশি অনেকে রাখেন খড়ের তৈরি ছোট্ট কুঁড়েঘর বা গোয়ালঘর। আকারভেদে একেকটি কুঁড়েঘরের দাম পড়ে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বড়দিনে ঘর সাজানোর অন্যতম অনুষঙ্গ হলো রঙিন জরির কাগজ। পাবেন গুচ্ছ গুচ্ছ করে সেট করা রঙিন কাগজ থেকে শুরু করে কুচি কুচি করে কেটে মালায় গাঁথা রঙিন কাগজ ও নকশা কাটা রঙিন কাগজ। দাম ১০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকার মধ্যে। শুধু প্লাস্টিক কিংবা আসল ক্রিসমাস ট্রিই নয়, আছে পলিথিনে মোড়ানো ক্রিসমাস ট্রি–এর রেপ্লিকা। আরও আছে সান্তা ক্লজ ও মেরির কোলে যিশুর রেপ্লিকা। এ ছাড়া বাংলা অক্ষরে লেখা শুভ বড়দিন বা ইংরেজি অক্ষরে লেখা মেরি ক্রিসমাসসহ আছে অনেক রকমের রেপ্লিকা। পাবেন ২৫০ টাকার মধ্যে।
এ ছাড়া শুভেচ্ছা কার্ড, সান্তা ক্লজের পুতুল, মোমবাতিসহ আরও অনেক কিছু, ৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এর সবই। কিছু কিচু দোকানে উৎসবের দিন ঘর সাজানোর জন্য ছোট-বড় বিভিন্ন প্যাকেজ থাকে। ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় একেকটি প্যাকেজ কিনলে পেয়ে যাবেন ঘর সাজানোর সব অনুষঙ্গ।
আগারগাঁওয়ের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বেশ কিছু নার্সারি আছে, যেখান থেকে কিনে নিতে পারেন সত্যিকারের ক্রিসমাস ট্রি। ঢাকার বড় প্রায় সব নার্সারিতে পাওয়া যাবে আসল ক্রিসমাস ট্রি। পাইন বা ফারজাতীয় গাছগুলো ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২ ফুট থেকে ৫ ফুট উচ্চতার আসল ক্রিসমাস ট্রি পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে।
চকবাজারেও জমেছে বড়দিনের কেনাকাটা। দোকানগুলোতে কৃত্রিম ফুল, তারা, পাটের দড়ি, ঘণ্টা ইত্যাদি নানা রকম ঘর এবং গাছ সাজানোর সামগ্রী খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড়দিন জমকালো করতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন আকার, রং ও আকৃতির মোমবাতি। কোনো কোনো দোকানে সুগন্ধি মোমবাতিও পাওয়া যাচ্ছে। ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর উপকরণগুলো পাইকারিভাবে যাঁরা কিনতে চান বা সাশ্রয়ী মূল্যে, তাঁরা চলে যেতে পারেন পুরান ঢাকার এই চকবাজারে। ৫০ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার মধ্যে সবকিছু পেয়ে যাবেন এখানে। চকবাজারে ক্রিসমাস ট্রি–এর সংগ্রহ চোখে পড়ার মতো। এখানকার দোকানগুলোতে পাওয়া যাবে ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা দামের ক্রিসমাস ট্রি। ছোট আকারের ক্রিসমাস ট্রি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। মাঝারি আকারের ক্রিসমাস ট্রি ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। বড় আকারের ক্রিসমাস ট্রি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।
নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, চকবাজার ও গুলশান এলাকার বেশ কয়েকটি মার্কেটে কেনাকাটার ধুম পড়েছে ক্রিসমাস উপলক্ষে। বসুন্ধরা সিটি, রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, ধানমন্ডির গিফট শপগুলো বড়দিন উপলক্ষে জমে উঠেছে।
নিউমার্কেটের উপহারসামগ্রীর দোকানে দেখা গেল শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়ার জন্য কার্ড আর চকলেট বেশি পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বড়দিন উপলক্ষে শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, পুতুল, ডেকোরেশন পিস, ঘণ্টা, ছোট বল, মগ, ছবির ফ্রেম, চাবির রিং, ম্যাজিক বক্স, পার্টি স্প্রে ও বেলুনের বিক্রি বেড়েছে অনেকখানি। নিউমার্কেটের নিচতলার কৃত্রিম ফুলের দোকানগুলো থেকেও নিতে পারেন ক্রিসমাস ট্রি।
দেশীয় বুটিক অঞ্জনস, কে ক্র্যাফট, আড়ং ও যাত্রায় বড়দিন উপলক্ষে লাল-সাদায় উপহারসামগ্রী তৈরি করেছে। সান্তা ক্লজ টুপি, গিফট বক্স, ব্যাগ, বড়দিনের মোমবাতিসহ শিশু–কিশোরদের পোশাক, ক্রিসমাস র্যাপিংসহ সবই থাকছে এ আয়োজনে। পাশাপাশি বড়দিনের অনুষ্ঠানে শিশুদের উপযোগী সান্তা ক্লজ পোশাকও থাকছে। বর্ণিল এসব উপহার পাওয়া যাবে ৫০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে।এ ছাড়া ঢাকার পুরানা পল্টন পলওয়েল মার্কেট, ফার্মগেটের গ্রিন সুপারমার্কেটসহ তেজগাঁওয়ে অবস্থিত হলিক্রস কলেজের পাশের গির্জার সামনে পাওয়া যাচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি। ফার্মগেটের ফার্মভিউ মার্কেটের দোকানগুলোতে পাওয়া যাবে গোশালা। এগুলোর দাম পড়বে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা।
ছবি: প্রতিবেদক