নান্দনিকতায় অনন্য ‘দ্য রিডিং ক্যাফে’
শেয়ার করুন
ফলো করুন

নতুন প্রজন্মের জেনজি লাইফস্টাইলে বইয়ের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে ‘দ্য রিডিং ক্যাফে’র মতো বুক ক্যাফেগুলোর মাধ্যমে। ঘুরে এসে জানাচ্ছেন আশিকুর রহমান

বিজ্ঞাপন

বই পড়া কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জিনাত বুকস্টল আর সাগর পাবলিশার্সের মতো বনেদি বুকস্টোর। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, নতুন প্রজন্মের জেনজি লাইফস্টাইলে বইয়ের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে বুক ক্যাফেগুলোর মাধ্যমে। এমনই এক নান্দনিক আবহের বই পড়া ও কফি পানের চমৎকার স্থান বনানীর ‘দ্য রিডিং ক্যাফে’।
ছুটে চলা আর অন্তর্জালের আগ্রাসী যুগে বইকে সবার জীবনের অংশ করে তোলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন দ্য রিডিং ক্যাফের স্বত্বাধিকারী তরুণ উদ্যোক্তা আতিকুর রহমান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যেকোনো পছন্দের বই নিয়ে পাঠকেরা সময় কাটাতে পারবেন, এমন স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করেছেন তিনি। শুধু বই পড়তে পারবেন তা নয়, চা-কফি-কুকিজসহ বাহারি সব হালকা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে দ্য রিডিং ক্যাফেতে।

বই কেনার পর বই পড়ার নিরিবিলি জায়গাও প্রয়োজন। আর সঙ্গে যদি থাকে কফি, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ২০১৪ সাল থেকে আতিক বুকস্টোর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বুকস্টোর ও ক্যাফে এক করে ২০২১ সালে যাত্রা শুরু করে বনানীর এই বুক ক্যাফে।
বনানী ই ব্লকের ১০ নম্বর রোডে সুপারমার্কেট মসজিদের বিপরীত পাশে ২১ নম্বর হাউসের দ্বিতীয় তলায় অবস্থান এই নান্দনিক ক্যাফের। ভেতরে প্রবেশ করার পর রাস্তার যানজট, গাড়ির শব্দ, মানুষের কোলাহল সব ভুলে যেতে বাধ্য হবে সবাই। নরম আলো বাড়িয়েছে ক্যাফের স্নিগ্ধতা। প্রশান্তির সংগীত কিছুক্ষণের জন্য আপনাকে মুক্তি দেবে জাগতিক অস্থিরতা থেকে। চারদিকে সাজানো সারি সারি অরিজিনাল প্রিন্টের বই বইপ্রেমীদের দেবে স্বর্গীয় অনুভূতি।

সবকিছু মিলিয়েই দ্য রিডিং ক্যাফে টেনে আনছে বইপ্রেমীদের। এমনকি পুরো দিন ক্যাফেতে সময় কাটান দ্য রিডিং ক্যাফের সদস্যরা জানান বুক ক্যাফের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পিনক। এলেই বই কিনতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। তাই শান্ত পরিবেশ খুঁজতে থাকা অনেকেই এসে ক্যাফেতে কফি উপভোগ করেন। বইয়ের সঙ্গে ছবিও তোলেন।

বিজ্ঞাপন

শুধু নান্দনিক পরিবেশ বইপ্রেমীদের ধরে রাখতে পারে না, চাই উপযুক্ত বইও। দ্য রিডিং ক্যাফের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ইংরেজি অরিজিনাল প্রিন্টের বইগুলো। সাধারণত যাঁরা ইংরেজি সাহিত্যের পাঠক, বই কিনতে তাঁদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। কারণ, অরিজিনাল প্রিন্টের দাম বেশি হওয়ায় লোকাল বইয়ের দোকানগুলোয় তা পাওয়া যায় না। আর যেগুলো পাওয়া যায়, সব পাইরেটেড কপি। দ্য রিডিং ক্যাফেতে সেসব বইয়ের অরিজিনাল প্রিন্ট মিলবে।

দুই বাংলার বাংলা সাহিত্য, ফিকশন, নন–ফিকশন, জীবনী, আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ, কমিকস, ছোটদের বইসহ রান্নার বইয়েরও বিশাল সমাহার সজ্জিত আছে তাকগুলোতে। পাঠকদের পড়ার সুবিধার্থে আরামদায়ক আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। পড়তে পড়তে এক ঘেয়েমি চলে এলে পাঠক কফিতে চুমুক দিয়ে চাঙা করে নিতে পারেন নিজেকে।

এই রিডিং ক্যাফের পাঠকদের জন্য মেম্বারশিপ পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে। তিন বছর ও সারা জীবন—দুই ধরনের সেবা আছে পাঠকদের জন্য। কিশোর, তরুণ, মধ্যবয়স্কসহ সব বয়সের পাঠক এই বুকস্টোরের সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারবেন। তাঁদের যতগুলো শাখা বুকস্টোর রয়েছে, একটি থেকে সদস্যপদ নেওয়া থাকলেই বই নিতে পারবেন যেকোনো আউটলেট থেকে। ওপেনিং টাইম থেকে শুরু করে ক্লোজিং পর্যন্ত এখানে অবস্থান করে পড়তে পারবেন পছন্দের সব বই।

পিনক বলছিলেন, অভিজাত পাঠকদের পছন্দের জায়গা এই রিডিং ক্যাফে। প্লাটিনাম, প্রিমিয়াম, সিগনেচার—এই তিন ক্যাটাগরিতে মেম্বারশিপ দিয়ে থাকে দ্য রিডিং ক্যাফে। ক্যাটাগরিভেদে আছে নানা সুযোগ–সুবিধা। বনানী ছাড়াও উত্তরা, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও গুলশানে শাখা রয়েছে তাদের। তা ছাড়া এয়ারপোর্টের পাশে ও মহাখালী ডিওএইচএসে নতুন দুটি শাখার কাজ চলছে।

ব্যস্ত নগরীর ছুটে চলা  ক্লান্ত বইপ্রেমীদের একটু জিরিয়ে নেওয়ার একটি চমৎকার জায়গা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছে এই বুক ক্যাফে। ‘নিরিবিলি বসে বই পড়ার জায়গা আসলে কমছে। ঢাকার হাতে গোনা এমন কয়েকটি বুক ক্যাফে আমাদের মতো পাঠকদের জন্য খুব স্বস্তির’ জানান এখানে বই পড়তে আসা জারিন।

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৫০
বিজ্ঞাপন