ঢাকার বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতায় হতবিহ্বল সবাই। হতাহত মানুষের হিসাব ছাড়িয়ে যাচ্ছে সহ্যশক্তির সীমা। অফিস, বাড়ি, কলকারখানা—সব জায়গাতেই অগ্নিকাণ্ডের ভয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার, ত্রুটিপূর্ণ এসি, শর্টসার্কিট, আশপাশেই হয়তো অজানা কোনো রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম। একধরনের চাপা আতঙ্ক সবার মনে। তবে আগুন লাগলে প্রথমে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কারও বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে হঠাৎ বড় ধরনের আগুন লাগলে অবশ্যই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে জানিয়ে সাহায্য নিতে হবে। তবে তার আগে নিজেদের কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া খুব জরুরি।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো.হাসানুজ্জামান বলেন, সব ধরনের বার্নই ঝুঁকিপূর্ণ, তবে শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক। অনেক সময় দেখা যায়, খালি চোখে শরীরের বাইরে কোনো পোড়া বা ক্ষত নেই, কিন্তু শ্বাসনালি পুড়ে গিয়ে মানুষ অবশ্যম্ভাবীভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। তাই আগুনের মধ্যে পড়লে ও ধোঁয়াকবলিত স্থানে আটকা পড়লে, প্রথমে ভেজা রুমাল বা নিজের পরিধেয় বস্ত্র ওপরে তুলে নাক ও মুখ ঢেকে নিতে হবে, যাতে শ্বাসনালি কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আগুনের ধোঁয়া ঊর্ধ্বমুখী। তাই মেঝের কাছাকাছি নেমে হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করতে হবে ভবনে আগুন লাগলে। গায়ে সরাসরি আগুন লাগলে ভুলেও দৌড়ানো যাবে না, এতে আগুন বেড়ে যাবে। বরং মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি ছোট কোথাও যেমন ওয়েস্ট বাসকেটে আগুন লাগে, ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে তা নিভিয়ে ফেলতে হবে।
আমরা মনে করি, সিলিন্ডারে আগুন লাগলেই তা বিস্ফোরিত হবে, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। সিলিন্ডারের মুখে আগুনের শিখা দেখলে ভয় না পেয়ে মোটা কাঁথা বা ছালা ইত্যাদি দিয়ে চাপা দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলা সম্ভব।
আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে পারলে যে ঘরে আগুন লেগেছে, সেই ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। তবে লক করা যাবে না। এতে করে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে গিয়ে আগুন দুর্বল হয়ে নিভে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কোনো ঘরের দরজা বন্ধ থাকলে বাইরে থেকে তার হাতল গরম অনুভূত হলে কোনোক্রমেই দরজা খোলা যাবে না। এ ছাড়া যদি কোনো ঘরের বাইরে আগুন থাকে, সে ঘরে আটকা পড়লে ভেজা কাপড় দিয়ে ফাঁকফোকর বন্ধ করে সে ঘরের দরজা আটকে মেঝের কাছাকাছি অবস্থান করতে হবে।
আগুনের ধর্মই হচ্ছে ওপরের দিকে ওঠা। তাই ভবনের সর্বোচ্চ ফ্লোর থেকে যদি কষ্ট করে আরও দুই একতলা নেমে যাওয়া যায়, এবং নিরাপদে অবস্থান করা যায়, তবে সেখানেই অবস্থান করা উচিত। এ রকম ক্ষেত্রে লাফ দিলে বা সান শেড দিয়ে নামতে গেলে বরং মৃত্যুঝুঁকি থাকে।
কৃতজ্ঞতা : মো. হাসানুজ্জামান, কর্মকর্তা, লালবাগ ফায়ার স্টেশন
ছবি: প্রথম আলো ও পেকজেলসডটকম