আর্ট ওয়েভ বাই সাকিয়া: হোম ডেকরের নান্দনিক ও নিরীক্ষাধর্মী উদ্যোগ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

দেশীয় নকশার অনুপ্রেরণায় করা হলেও আধুনিক নান্দনিকতার উপস্থিতি বেশ জোরালো সাকিয়ার করা প্রতিটি নকশায়। “আর্ট ওয়েভ বাই সাকিয়া”-র যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালে। একজন স্থপতি হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফিল্ড সার্ভে করতে হচ্ছিল উদ্যোগটির কর্ণধার সাকিয়া রশিদ মুন্নী। লক্ষ্য করেন, বাংলাদেশে একই সঙ্গে নান্দনিক ও পেশাদার মানের হোম ডেকর নেই বললেই চলে।

আর্ট ওয়েভ বাই সাকিয়া–এর উদ্যেক্তা সাকিয়া রশিদ মুন্নী
আর্ট ওয়েভ বাই সাকিয়া–এর উদ্যেক্তা সাকিয়া রশিদ মুন্নী

এই ভাবনা থেকেই আর্ট ওয়েভের জন্ম। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশীয় ম্যাটেরিয়ালে এমন সব হোম ডেকর তৈরি করা যা হবে অভিনব, দেখতে সুন্দর ও টেকসই। কারণ এই তিন বৈশিষ্ট্য যে আসবাবে আছে তার বেশির ভাগই আমদানি নির্ভর এবং বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়। সাকিয়া জানান, তিনি বরাবরই ভেবেছেন কীভাবে মানুষের সমস্যার সমাধান করা যায়। দীর্ঘ এক যুগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি হোম ডেকরের নকশা করা শুরু করেন। মহামারির সময় শুরু করেছিলেন বলে প্রথমদিকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে। এ ছাড়াও এ ধরনের উদ্যোগ তখন বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। ম্যাটেরিয়াল পাওয়াও ছিল বেশ কষ্টের। তবে পাঁচ বছর পর এসব সীমাবদ্ধতা দূর করে নিজের উদ্যোগ নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি।

আর্ট ওয়েভের পণ্যের প্রধান ম্যাটেরিয়াল হিসেবে লোহা বা মাইল্ড স্টিলের ব্যবহার হয়। কারণ এটি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী। দেখতে একই রকম বলে অনেকেই এটিকে ভুল করে ‘রট আয়রন’ও ভেবে বসেন। তবে লোহা আর স্টিল দুটোই বাংলাদেশে সহজলভ্য। এ কথা মাথায় রেখেই সাকিয়া তাঁর পণ্যের ম্যাটেরিয়াল হিসেবে এগুলো বেছে নিয়েছেন। স্থানীয় মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করার পর কারিগরেরা এই লোহা ও স্টিলে তৈরি করেন আসবাব। সাকিয়া বলেন, “শেষ ধাপে আমি লোহার ওপর পাউডার কোট রং ব্যবহার করি। এতে করে সহজে জং ধরে না। রং চটে না। অনেক দিন টেকসই হয়।”

উদ্যোগটির প্রতিটি নকশা একটি গল্প বলে। বাহারি ডিজাইনে তাদের সংগ্রহে আছে টেবিল ডেকর, প্ল্যান্ট ডেকর, ওয়াল ডেকর ইত্যাদি। প্ল্যান্ট ডেকর গুলো বেশ সুন্দর। নিরীক্ষাধর্মী নকশায় তৈরি বলে, কখনো বা কাচের বোতলের শিলুয়েটে টিউব, মোড়া, বৃত্ত ও শিকের আদলে তৈরি প্ল্যান্ট স্ট্যান্ড ইত্যাদি নজর কাড়ে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আসবাব নিয়ে কাজ আর্ট ওয়েভের। এর মধ্যে আছে সোফা, কোজি চেয়ার, টেবিল, ল্যাম্প ইত্যাদি। থ্রি ডায়মেনশনাল বা ত্রি-মাত্রিক ডিজাইনে তৈরি শেলফ আপনার ঘরের কোণে এনে দেবে নান্দনিকতার ছোঁয়া। চাবি হারিয়ে ফেলার বিপত্তি থেকে বাঁচতে ‘কি হোল্ডার’ এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে বেশ কয়েক বছর যাবৎ। আধুনিক ও উত্তরাধুনিকতার মিশেলে নকশা করা হচ্ছে। যেমন, বর্তমানে পিনটারেস্টের অনুপ্রেরণার দাবা বোর্ডের আদলে তৈরি কি-হোল্ডার হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়। সাকিয়া কি হোল্ডার ও স্ট্যান্ড নিয়েও কাজ করছেন। পশু পাখি মোটিফে তৈরি কি-হোল্ডার আর্ট ওয়েভের বিশেষত্ব।

এই উদ্যোগের সবচেয়ে উপযোগী সংযোজন হচ্ছে পোর্টেবল ডিসপ্লে। অনলাইন উদ্যোক্তারা যারা মেলায় অংশ নেন তাঁদের কাছে এই পণ্যের চাহিদা বেশি। কাপড়ের হ্যাঙ্গার, ব্যাগ হোল্ডার, গয়নার সাজানোর হোল্ডার তৈরি করে সাকিয়ার এই উদ্যোগ। ক্রেতার প্রয়োজনের ভিত্তিতে কাস্টমাইজ করেও দেন তাঁরা।

আর্ট ওয়েভ বাই সাকিয়া একটি অনলাইন উদ্যোগ। উদ্যোগটি চেষ্টা করে শুধু ধনীদের জন্য ডিজাইনার আসবাব নয়, বরং সাধ্যের মধ্যে সকলেই যেন ডিজাইনার হোম ডেকর ব্যবহার করতে পারেন। একটি আসবাব শুধু এক কাজে নয়, বরং এর ব্যবহার হতে পারে বহুমুখী। সাকিয়া মানুষের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। যেমন, একটি গাছ শুধু বারান্দার টবে না, প্ল্যান্ট হোল্ডারে ঘরের ভেতরেও সুন্দর করে রাখা যেতে পারে। এতে করে প্ল্যান্ট হোল্ডারটি শো-পিস হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

ক্রেতারা যাতে দেখে ও নকশা বেছে পণ্য কিনতে পারেন, সেজন্য বিভিন্ন মেলায় অংশ নেন তিনি। আসবাব ও হোমডেকরের ওজন তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এখনো দেশের বাইরে রপ্তানি করতে পারছেন না তিনি। তবে ভবিষ্যতে দেশের বাইরে নিজের নকশা করা পণ্য পাঠানোর ইচ্ছা আছে তাঁর।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেসবুকে “আর্ট ওয়েভ বাই সাকিয়া” - র শিরোনাম হচ্ছে, “ আপনার বাড়ির জন্য ডিজাইনার পোশাক।” সাকিয়ার প্রতিটি নকশা যেন বাক্যটির যথার্থ প্রমাণ।

ছবি: আর্ট ওয়েভ বাই সাকিয়া

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৩৮
বিজ্ঞাপন