চট্টগ্রামে জামাল খান মহল্লায় এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদের অবস্থান। এ মসজিদের নিকটবর্তী লোকালয় কদম মুবারক নামে পরিচিত। এক উৎকীর্ণলিপি থেকে জানা যায় যে মুহম্মদ ইয়াসিন নামে এক স্থানীয় ফৌজদার মুগল সম্রাট মুহম্মদ শাহের শাসনামলে তাঁর নির্দেশেই ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
উঁচু ভিতের ওপর নির্মিত আয়তাকার এই মসজিদের ছাদে আছে তিনটি গম্বুজ। দুপেশ ছোট এবং মাঝে বড়। চারকোণে আছে তিন স্তরবিশিষ্ট অষ্টভুজ মিনার বা বুরুজ। প্রতিটি মিনারের শীর্ষে আছে ক্ষুদ্র গম্বুজ ও তারও ওপরে গোলাকার শীর্ষালংকরণ। আয়তাকার মসজিদের কক্ষের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে একটি করে পার্শ্বকক্ষ।
প্রার্থনা কক্ষের ছাদে আছে তিনটি গম্বুজ এবং এর পার্শ্বকক্ষ দুটি খিলান ছাদ দ্বারা আবৃত। মসজিদ গৃহের বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ১৩ মিটার ও প্রস্থ ৭.৪২ মিটার। এর সঙ্গে বাড়তি পার্শ্বকক্ষ দুটির দৈর্ঘ্য ২৩.১৬ মিটার। মসজিদের পুব দিকে একটি সুপরিসর খোলা আঙিনা ছিল। স্থাপত্যের ক্ষেত্রে মোগলরা খিলান-গম্বুজ ও খিলান-ছাদকে প্রাধান্য দিতো। লতাগুল্মের নকশা, আরবি ক্যালিওগ্রাফি, জ্যামিতিক রেখা চিত্র, মোজাইক নকশা ও পাথরের দ্বারা সজ্জিত এই মসজিদ।
অলঙ্কৃত কুলুঙ্গি সারিতে সাজানো ও দুটি অষ্টভুজ বুরুজ বেষ্টিত এ মসজিদের সম্মুখভাগ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয়। মূল মসজিদগৃহের রয়েছে পাঁচটি দরজা, তিনটি দরজা সম্মুখভাগের দেওয়ালে ও একটি করে দরজা পার্শ্বকক্ষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। পার্শ্বকক্ষগুলোরও নিজস্ব প্রবেশপথ ও জানালা রয়েছে।
মিহরাব রয়েছে পশ্চিম দেওয়ালের সঙ্গে। মসজিদের ভেতরের দেওয়ালগুলো আয়তাকার নানা খোপ বা প্যানেল ও কুলুঙ্গি দ্বারা অলংকৃত। মসজিদ কক্ষটি তিনটি ‘বে’তে বিভক্ত এরং পশ্চিম দেওয়ালের কেন্দ্রে একটি কেন্দ্রীয় মিহরাব রয়েছে।বর্তমানে সম্পূর্ণ কদম রসুল কমপ্লেক্সটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান ।
স্থানীয় মুসল্লিদের কাছ থেকে জানা যায়, মসজিদের মূল কক্ষে রক্ষিত আছে একটি শিলাখণ্ড; এতে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)–এর ডান পায়ের ছাপ আর অন্যটিতে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)–এর পায়ের ছাপ। কথিত আছে, মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মুতওয়াল্লি ইয়াসিন খান হজে গিয়ে মদিনা থেকে মহানবীর পায়ের ছাপসম্বলিত পাথর সংগ্রহ করে দেশে আনেন। সেখান থেকেই এই মসজিদের এরূপ নামকরণ।
ইয়াসিন খান মসজিদ পরিচালনার জন্য রাউজান ও পটিয়া ৪০ একর সম্পত্তি মসজিদের নামে হস্তান্তর করেন। নির্মাণের শুরু থেকেই এই মসজিদের সুনাম দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার জুম্মার দিন হাজার খানেক মানুষ আসে এখানে নামাজ পড়তে। এই মসজিদসংলগ্ন এলাকার নামও কদম মোবারক। বড় পীর আবদুর কাদের জিলানীর পায়ের ছাপওয়ালা পাথর ধোয়া পানি পান করতে একসময় প্রচুর মানুষ ভিড় করত।
ছবি: সংগৃহীত