প্রতিবছরই উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয় কোরবানির ঈদ। রোজার ঈদের চেয়ে আলাদা চিত্র দেখা যায় এই সময়। গরু ছাগলের হাট, ছুরি-বটি আর মসলার দোকানে সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। তবে এসব ব্যবসার সঙ্গে আরো রমরমা হয়ে ওঠে সেটি হচ্ছে পশু খাদ্য, চাটাই বা পাটি ও গাছের গুড়ি কেটে বানানো খাইটার বাজার। বছরে একবার এই এখনই এই জিনিসগুলোর পসরা বসে।
পশু কিনেছেন এমন সবাই=ই খোঁজ করতে থাকেন এসব জিনিসের। তাই পাড়া, মহল্লা ও এলাকায় এলাকায় গড়ে ওঠে এসব সামগ্রীর অস্থায়ী বাজার। মূলত বিভিন্ন রকমের ভুসি, খড় ও তাজা ঘাস, কাঁঠাল পাতাসহ বিভিন্ন ধরনের পশু খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে মাংস কাটার খাইটা, হোগলার পাটি বা চাটািয়ের মতো পণ্য নিয়েই গড়ে ওঠে এই বাজার।
এ বাজার ঘুরে জানা যায় নানা তথ্য। এসব জিনিস যারা বিক্রি করেন তারা বেশিরভাগই কোরবানির সময়টাকে কেন্দ্র করেই এই মৌসুমি ব্যবসায় নামেন। আঁগারগাও তালতলা বাজারে কাজল নামে এক ব্যবসায়ী জানান, বছরের অন্যান্য সময়ে তিনি একটি চায়ের দোকান চালান। তবে কোরবানির সময়টাতে এই ব্যবসায় লাভ বেশি। বিক্রিবাট্টা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রথম কিছুদিন বিক্রি ধীর থাকলেও ঈদের আগের শেষ দুই দিন বেশ ভালোই বিক্রি হয় এসব জিনিস। মূলত পশু খাদ্যগুলো আগে বিক্রি হয়ে যায়, আর শেষ দুই দিন চাটাই ও খাইটার কদর বেড়ে যায়।
এগুলোর মধ্যে খাইটা বেশ কৌতূহল জাগানো এক বস্তু। বাজারে দেখা যায়, সমান করে কেটে রাখা গাছের টুকরো সব একে উপরের উপর সাজিয়ে রাখা, যার নাম খাইটা। এইটি মূলত ব্যবহৃত হয় পশুর মাংস ও হাড় কাটার জন্য। কুরবানির পশুর বড় ও ভারি হাড়, মাথা ও পা ঠিকমত কাটার জন্য মোটা এই গাছের গুড়ির ব্যবহার করা হয়। বিক্রেতা রফিক জানান, এগুলো বেশিরভাগই তৈরি করা হয় তেঁতুল গাছের কাঠ দিয়ে, কারণ এ গাছ অন্যান্য তুলনামূলক গাছের তুলনায় বেশ শক্ত, দা এবং ছুরি কাঁচির আঘাত নিতে পারে।
মূলত কুরবানি ঈদের আগে আগে বিভিন্ন বড় বড় কাঠের কারখানায় এসব তেঁতুল গাছগুলো মাপ মতো কাটিয়ে এবং পালিশ করিয়ে নেয়া হয়। ঈদের বাজারে এটা বেশ লাভজনক ব্যবসা, এবং স্থান ভেদে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে এসব খাটিয়া বিক্রি হয়।
বাজার ঘুরে আরও দেখা যায় তাজা সবুজ ঘাস এবং শুকনো খড়। এছাড়াও ছাগলের প্রিয় কাঁঠাল পাতাও আছে। এসব জিনিস বেশিরভাগই ঢাকার বাইরে থেকে নিয়ে আসা। আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে ট্রাকে করে এসব জিনিস আসে এবং পরবর্তীতে মৌসুমি বিক্রেতারা এগুলো কিনে নেন। তবে অনেকেই নিজস্ব এলাকা থেকেও সরাসরি এগুলো নিয়ে এসে বিক্রি করেন। স্থান ও বান্ডিল এর আকার অনুযায়ী ৩০-৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে এসব বিক্রি হয়, পরিমাণ অনুযায়ী দামেরও তারতম্য হয়।
এছাড়াও ভুসি, খুদ কুড়া ও দানাদার খাদ্যেরও রয়েছে বেশ চাহিদা। ভাতের মাড়ের সাথে মিশিয়ে দেওয়া যায় বলে এ ধরনের খাদ্যের চাহিদাই বেশি। ব্যবসায়ীরা জানান, ভুসির ধরন অনুযায়ী দামে তারতম্য হয়। আবার কেউ চাইলে নির্দিষ্ট মূল্যের পণ্য ভাঙা বা এক কেজির কমও কিনতে পারেন। সময় বাঁচানো ও কাজের সুবিধার জন্য বেশিরভাগ পশু খাদ্যই ওজন অনুযায়ী আলাদা পলিথিনে করে সাজানো থাকে।
আবার প্রায়ই দেখা যায় কুরবানির পশুকে মালা পরিয়ে ও বিভিন্নভাবে সাজিয়ে হাটে রাখা হয়। পশুর বিভিন্ন নাম নিয়েও ওঠে আলোচনার ঝড়। এর মাঝে কোরবানির পশুকে ঘিরে এই সময়ে অলিতে গলিতে গড়ে ওঠা এই বিশেষ সাময়িক বাজার সবারই নজর কাড়ে। ঈদের আমেজ সৃষ্টি করতে এরও ভূমিকা কম নয়।
তাই চলতি পথে হঠাৎ যদি দেখেন দুইপাশের সারি সারি দোকানে বিক্রি হচ্ছে পশু খাদ্য ও মাংস তৈরির সরঞ্জাম, ধরে নিতে পারেন প্রিয় কোরবানির ঈদ এসেছে। আর কাল কোরবানি বলে আজ এগুলো তো লাগবেই।