চলছে বর্ষাকাল। বৃষ্টির দিনে ঘরে থাকা মানেই নিজের মতো করে কাটানো। ধোঁয়া ওঠা চায়ের সঙ্গে হাতে থাকবে পছন্দের লেখকের বই। ঝরঝর বাদর দিনে ঘরে বসে ‘নেটফ্লিক্স অ্যান্ড চিল’ও চলতে পারে। কিন্তু নিজের জন্য এভাবে কিছুটা সময় নিজ অন্দরের আরামদায়ক পরিবেশে নির্বিঘ্নে পেতে হলে নিজের এই ছোট পৃথিবী মানে বাসস্থানের দেখভালে নিতে হবে কিছু পদক্ষেপ। কারণ, বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, অতি আর্দ্রতায় ঘরের ইন্টেরিয়র-এক্সটেরিয়রের ক্ষতি, মশা, ঘরে মোল্ড পড়া, পোকামাকড়সহ বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। আপনার বাসাকে বর্ষার জন্য প্রস্তুত করতে চাইলে চলতে হবে কিছু প্রফেশনাল টিপস।
আপনার বাসার চারদিকে কিংবা যেকোনো খোলা জায়গায় লাইনে সংযুক্ত কাটা কিংবা খোলা তার আছে কি না, তা দেখতে হবে। তারগুলো সঠিকভাবে প্লেসিং ও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মেইন সুইচবোর্ডের লোকেশন খেয়াল করে কোথাও কোনো ড্যাম্প আছে কি না, দেখতে হবে। কারণ, বৃষ্টির মধ্যে এই খোলা তারের গুচ্ছ থেকেই শর্টসার্কিট হয়ে থাকে। ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং সিস্টেমও দেখিয়ে নিতে হবে। এতে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
বাড়ির ব্যালকনিতে রাখা ফুলের টবগুলো সঠিক জায়গায় রাখতে হবে। অনেক সময় বারান্দায় বৃষ্টির ছাটে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়। তাই ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে। টবে পানি জমে মশা এবং পোকার আক্রমণ হতে পারে। আবার প্রচণ্ড বাতাসে বারান্দায় ঝুলে থাকা বা ছাদের রেলিংয়ে রাখা টবগুলো ভেঙে কিংবা ওপর থেকে পড়ে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই টবগুলোকে এমনভাবে প্লেস করতে হবে, যাতে আলো-বাতাস নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
আজকাল অনেকেই ব্যালকনি বা ছাদে আর্টিফিশিয়াল ঘাসের কার্পেট ব্যবহার করে থাকেন, যাতে ভারী বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। অনেক বাসায় যেমন জানালা বা বারান্দায় পুরোটাই গ্রিল দেওয়া থাকে কিংবা নেটিং করা থাকে। আবার অনেক বাসার বারান্দায় শুধুই রেলিং থাকে, যেটাকে ওপেন বারান্দা বলা যেতে পারে। গ্রিলের সঙ্গে ওয়াটারপ্রুফ ম্যাটেরিয়ালের ব্লাইন্ডস বা শাটার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা বেশ টেকসই। খোলা বারান্দার ক্ষেত্রে ওয়াটারপ্রুফ ক্যানপি রাখা যায়, যাতে বৃষ্টির পানিতে ঘর ভেসে না যায়। ট্র্যাডিশনাল উপায়ে অনেকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে করা ব্লাইন্ড বারান্দায় দিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে বাইরের দিকটি পানিনিরোধী করতে সবচেয়ে কম খরচে যা করা যায় তা হলো রেক্সিন দিয়ে এই ব্লাইন্ডগুলো মুড়িয়ে ফেলা, যাতে পচন না ধরে।
বৃষ্টির দিনে কাঠের পোকার উপদ্রব খুব বেড়ে যায়।
আবার বাসার যেকোনো কাঠের ফার্নিচার এবং কাঠের দরজা-জানালাগুলো নিজের শেপ হারিয়ে ফেলে অতিরিক্ত আর্দ্রতায় অসম সংকোচন ও প্রসারণের জন্য। সাধারণ নিয়মে অবশ্যই যেকোনো ফার্নিচার দেয়াল থেকে অবশ্যই তিন-চার ইঞ্চি দূরে রাখতে হবে। দরজা-জানালাগুলো বর্ষার দিনে অনেক সময় ঠিকমতো লাগতে চায় না ময়েশ্চার জমে কাঠ ফুলে যায় বলে। তাই বৃষ্টির আগেই ল্যাকার পলিশ কিংবা ক্লিয়ার বার্নিশ করা গেলে এই অতিরিক্ত আর্দ্রতার জন্য কাঠের আকার বদলায় না। এখন বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ডিহিউমিডিফায়ার পাওয়া যায়, যা ব্যবহারে ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভ
ক্লগিং হওয়া বা আটকে যাওয়া ড্রেনেজ সিস্টেম বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে বড় ঝামেলা বাধায়। বাসার আশপাশের ড্রেনেজ সিস্টেম পরিষ্কার রাখতে হবে। বৃষ্টির পানির ধারা বের হওয়ার ফিল্টারগুলো আটকে আছি কি না, তা খেয়াল করতে হবে। বর্ষাকালে বাসার পোর্চের ওপরে সব সময় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। সেখানে পানিনিষ্কাশনের পাইপলাইনে ময়লা জমে আছে কি না, দেখতে হবে।
এই সময়ের সবচেয়ে কঠিন বিপদ হচ্ছে এডিস মশার প্রজনন। তাই অবশ্যই দু-তিন দিন অন্তর বাসার আশপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে। ভাঙা জিনিসপত্র, ডাবের খোল, পুরোনো টায়ার ও ময়লা-আবর্জনা কেউ ফেলে রেখেছে কি না দেখতে হবে। পরিষ্কার করার পাশাপাশি মশার ওষুধ ছিটানো আর ব্লিচিং পাউডার দিয়ে রাখার দায়িত্ব কিন্তু নিজেদেরই। আর পোর্চ কিংবা ছাদের কোণে জমে থাকা শেওলা তুলতে মেটাল ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে।