আব্দুল ইলার বাংলা চ্যানেল পাড়ি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বঙ্গোপসাগর আমাদের। নামটা শুনলেই কেমন একটা গর্ববোধ হয়। সুবিশাল নীল এই সমুদ্র আর তার ঢেউ দেখলে শিহরণ জাগে মনে। আর সেই সমুদ্রপথ যদি পাড়ি দিতে হয় সাঁতরে, তাহলে যে অনেক বেশি সাহসী হতে হবে, তা তো বলাই বাহুল্য। বঙ্গোপসাগরের বুকে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ থেকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের ফেরিঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জলপথ হচ্ছে বাংলা চ্যানেল। ২০০৬ সালে আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার ও স্কুবা ডাইভার কাজী হামিদুল হকের নেতৃত্বে একদল উদ্যমী সাঁতারু প্রথম পার করেন বাংলা চ্যানেল৷ এই নাম তাঁরই দেওয়া। এবারের আসরের নাম দেওয়া হয় ১৮তম বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২৩।

এ বছর এই সাঁতারের আয়োজন করেছে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার ও এক্সট্রিম বাংলা। বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে এবং মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বাংলা চ্যানেলে প্রতিবছর সাঁতারের আয়োজন করে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার। ইংলিশ চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলা চ্যানেলও বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করেছে এখন। এ বছর এতে অংশগ্রহণ করেন ২ নারীসহ ৪৩ জন। কিশোর আলোর প্রদায়ক, স্বেচ্ছাসেবক ও আলোকচিত্রী কিশোর আলো ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাবের সহসমন্বয়ক আব্দুল ইলা এতে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ইলার সঙ্গে কথোপকথনে জানা যায়, ২০২৩ সালে তাঁর একটাই লক্ষ্য ছিল। সেটা হলো, বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

এ জন্য রোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলে সকাল-বিকাল অনুশীলন করতেন তিনি। চাকরি হওয়ার পর পুলে যাওয়ার সময় পেতেন না। তাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পুকুরে গিয়ে চার ঘণ্টা অনুশীলন করে এরপর অফিসে যেতেন। অফিস থেকে ফিরে আবার ঘণ্টাখানেক অনুশীলন। আব্দুল ইলা টেকনাফে পৌঁছান আয়োজনের তিন দিন আগে।

প্রথম দিন দেড় ঘন্টা আর পরের দিন দেড় ঘন্টা সমুদ্রে সাতার কাটার পর গা ব্যথা হয় ইলার কিছুটা। তাই মূল আয়োজনের আগের দিন বিশ্রাম নিয়েছেন তিনি। তাঁর পরদিনই সরাসরি চলে যান মূল আয়োজনে। সেখানে খুব একটা ভয় কাজ করেনি ইলার। এই শৌখিন সাঁতারু জানান, বাংলা চ্যানেলে সাঁতার কাটার সময় একই গতিতে সাঁতার কাটেন এমন আরেকজন সাঁতারু পাশাপাশি থাকেন। একে তো বিস্তীর্ণ সমুদ্র, পাঁচ-ছয় ঘণ্টার দীর্ঘ সময়ে একাকী সি-সিকনেস কাজ করতে পারে। সে কারণেই এটা করা হয়। যদিও বাংলা চ্যানেল ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার লম্বা, কিন্তু ইলা অতিক্রম করেছেন ১৭ কিলোমিটারের খানিকটা বেশি। সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে কিছুটা বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়েছে তাঁকে।

বিজ্ঞাপন

ইলা জানান, মূলত সাগরের বড় বড় ঢেউ থাকে পাড়ের কাছে, যেগুলোর উচ্চতা পাঁচ থেকে সাত ফুট হয়ে থাকে। মূলত ঢেউয়ের শীর্ষে চলে যেতে পারলেই আর কোনো ভয় নেই, এই কৌশল ঠিকঠাক রপ্ত করতে পারলেই সমুদ্র পাড়ি দেওয়া সম্ভব। ঢেউয়ের নিচে পড়ে গেলেই বিপদ। যা–ই হোক, সেই কৌশলেই ইলা পাড়ি দেন বাংলা চ্যানেল। মজার বিষয় হচ্ছে, এবার জীবনে প্রথম ইলা সেন্ট মার্টিনে গিয়েছেন স্পিড বোট, ট্রলার কিংবা জাহাজে নয়, সাঁতার কেটে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে।

অন্যবারের চেয়ে এবার সমুদ্র বেশ শান্ত ছিল বলে জানান ইলা। তিনি বলেন, ইচ্ছা ছিল, জাহাজ বা ট্রলারে নয়, সাঁতার কেটেই আসবেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। সাঁতার শেষ করতে পেরে তাই অসম্ভব আনন্দ হয়েছে তাঁর। ইলার এই পুরো অংশগ্রহণের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল ‘মনের বন্ধু’। আব্দুল ইলার স্বপ্ন, ভবিষ্যতে ট্রায়াথলনে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশেকে বিশ্বের মঞ্চে তুলে ধরা।

ছবি: আব্দুল ইলা

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭: ২৫
বিজ্ঞাপন