কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি একটি গুরুতর বিষয় এবং আইন অনুযায়ী এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, কর্মক্ষেত্রে প্রতি পাঁচজনে একজনের বেশি শারীরিক ও মানসিকভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অশ্লীল ছবি দেখানো বা দেখাবার চেষ্টা করা, কোনো সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বা বঞ্চিত করার হুমকি দিয়ে যৌনসুবিধা দাবি করা, ইভ টিজিং ইত্যাদি।
যদিও নারীরা কর্মক্ষেত্রে বেশি যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষেরাও এর শিকার হতে পারেন। একজন সহকর্মীর কাছ থেকে অবাঞ্ছিত স্পর্শ, উপহাস বা আপত্তিকর কৌতুকও হয়রানির একটি অংশ হতে পারে। তাই যদি কখনো নিজেকে এমন পরিস্থিতিতে খুঁজে পান বা লক্ষ করেন যে আপনার কোনো সহকর্মী একই রকম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাহলে আওয়াজ তুলতে দ্বিধা করবেন না।
প্রতিষ্ঠানে একটি কর্মচারী হ্যান্ডবুক থাকে। কেউ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন মনে করলে কর্মচারী হ্যান্ডবুকে নিজের অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি যৌন হয়রানি রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে অভিমত জানানো যেতে পারে।
প্রতিবাদ করেও নিপীড়নকারীকে নিবৃত্ত করতে না পারলে অভিযোগ কমিটি বা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গুছিয়ে সুস্পষ্টভাবে অভিযোগগুলো লিখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে সাক্ষী বা প্রমাণসহ অভিযোগ উপস্থাপন করতে। প্রমাণের কপি একাধিক জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে এক সেট নষ্ট হয়ে গেলেও অন্য সেট এনে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়।
নিজের আবেগকে সম্মান করতে হবে সবার আগে। ভাবা যাবে না যে ভুক্তভোগী অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন বা অতিরিক্ত সংবেদনশীল হচ্ছেন। এ জন্য নিজের বিশ্বাসের ওপর দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখতে হবে।
অনেকে আপনাকে অপছন্দ করতেই পারেন। মনে রাখতে হবে, যাঁরা আপনাকে অপছন্দ করেন, তাঁদের পছন্দ হওয়ার চেয়ে আপনার নিজস্ব সুখ ও মঙ্গল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ; যা নিজেকে অস্বস্তি দেয় তার বিরুদ্ধে দৃঢ় কণ্ঠে কথা বলতে হবে। অবশ্যই সাধারণভাবে আপনি যেভাবে কথা বলেন, সেভাবে নয়, বরং আরও জোরে।
মানসিক শক্তি অটুট ও দৃঢ় রাখতে হবে। ভয় পেয়ে দুর্বল হয়ে গেলে চলবে না। অনেক সময় পুরো লড়াইটা একা একাই লড়তে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে ভেঙে পড়লে চলবে না। অফিসে আপনার কাছের মানুষদেরও আপনার পাশে রাখার চেষ্টা করতে হবে। একের আওয়াজের চেয়ে দশের আওয়াজ বেশি শক্তিশালী।
অফিসের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির কাছে অভিযোগ করে যদি কেউ মনে করেন যে ন্যায়বিচার দেওয়া হয়নি, তাহলে আদালতে যাওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে। আইনি পরামর্শের জন্য একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। যত দ্রুত সম্ভব আপনার যৌন হয়রানি ঘটনার একটি রিপোর্ট তৈরি করুন।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে নিজেকেই। কী ঘটেছে, কেন হয়রানি করা হয়েছে এবং কারা কবে, কোথায় কী করেছে, সেটার সঙ্গে কোনো সাক্ষী থাকলে তাঁর নামসহ একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তৈরি করতে হবে। অভিযোগের একটি কপি নিজের কাছেও রাখতে হবে।
তবে সবকিছুর আগে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, লজ্জা বা ভয় পেয়ে এমন পরিস্থিতিতে দমে গেলে চলবে না। আবার হুটহাট রেগে গেলেও পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেবে। তাই ঘটনা মোকাবিলা করতে হবে সব দিক বিবেচনা করে।
ছবি: পেকজেলসডটকম