আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের বড় একটি অংশ নিয়মিত জিমে যান শরীরচর্চার জন্য। হাই ইন্টেনসিটি ট্রেনিং, ভারী ওজন তোলা (ওয়েট ট্রেনিং), ইন্টেন্সিভ কার্ডিও ফিটনেসপ্রেমীদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। এদিকে, মাঝেমধ্যে সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে অল্পবয়সী কেউ জিম করতে গিয়ে হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা গেছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, জিমে ওয়ার্কআউট করা কি সত্যিই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়? এ নিয়ে কথা হলো মাল্টি জিম প্রিমিয়াম ও আর জিম মোহাম্মদপুরের ফিটনেস ট্রেনার নাহিয়ান রানার সঙ্গে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও হার্ট অ্যাটাক কী
অনেকেই হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিয়াক অ্যারেস্টকে এক মনে করেন। আসলে, দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হার্ট অ্যাটাক হয় যখন হার্টে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। অন্যদিকে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় যখন হার্ট হঠাৎ করেই ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়, অর্থাৎ হার্ট পাম্প করা বন্ধ করে দেয়। এটি আরও মারাত্মক এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে প্রাণহানির সম্ভাবনা বেশি।
জিমে ওয়ার্কআউট করা কি আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ
স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও চিকিৎসকরা বলেন, শরীরচর্চা সাধারণভাবে হার্টের জন্য উপকারী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ওজন কমায়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। জিম ওয়ার্ক আউটের কারনে গুড হরমোন ডোপামিন রিলিজ হয়, যা রক্ত প্রবাহ বাড়ায়,অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ে যা সার্বিকভাবে আমাদের ভালো রাখে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু বিষয় মেনে না চললে বিপত্তি হয়তে পারে। জেনেটিক বা ডায়াগনোসিস হয় নি এমন হৃদরোগ অনেকের শরীরে জন্মগত বা লুকায়িত হৃদরোগ থাকে, যা তারা জানেন না। হঠাৎ করে ভারী ওয়ার্কআউট সেই সমস্যাকে তীব্র করে তুলতে পারে। হতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
ওভারট্রেনিং
ফিটনেস ট্রেনার নাহিয়ান রানা বলেন, বিশ্রাম ও পেশির পুনরুদ্ধারের (রিকভারি) সময় না দিয়ে যদি কেউ প্রতিদিনই উচ্চ মাত্রার ওয়ার্কআউট করেন, তবে এটি হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে। তিনি আরো কিছু বিষয়ের কথা জানালেন, যেগুলো জিম রুটিনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
স্টেরয়েড ও সাপ্লিমেন্টের অপব্যবহার
কিছু মানুষ দ্রুত ফল পেতে স্টেরয়েড বা বিভিন্ন শক্তিশালী প্রি-ওয়ার্কআউট সাপ্লিমেন্ট নেন, যা হার্টের রিদম ব্যাহত করতে পারে।
ডিহাইড্রেশন ও ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স
ওয়ার্কআউটের ফলে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে লবণ ও মিনারেল বের হয়ে যায় তা হার্টের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। সেকারণে ওয়েট ট্রেনিংয়ের সময় পর্যাপ্ত ইলেকট্রোলাইট ও পানি পান করা জরুরী।
কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন
যাঁদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে
ধূমপায়ী বা অ্যালকোহল গ্রহণকারী
যাঁরা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা অপর্যাপ্ত ঘুম হয় যাঁদের
ওয়ার্মআপ ছাড়া হুট করেই ভারী ব্যায়াম শুরু করে দেন যাঁরা
কীভাবে সচেতন থাকা যায়
মেডিক্যাল চেকআপ করুন
জিম শুরু করার আগে হার্টের প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিন
নিজের শরীর বুঝে ধাপে ধাপে ওয়ার্কআউট বাড়ান
পেশাদার ট্রেনারের নির্দেশনা নিয়ে ব্যায়াম করুন
প্রতিটি সেশনের শুরুতে ও শেষে অবশ্যই ওয়ার্মআপ ও কুলডাউন করতে হবে
সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান ও প্রতিদিন অন্তত ৬–৮ ঘণ্টা ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়
ফিটনেস এক্সপার্ট ও চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট ও স্টেরয়েড এড়িয়ে চলুন।
নাহিয়ান রানার বয়ানে, জিমে ওয়ার্কআউট নিজে থেকে কোন রোগ সৃষ্টি করে না, বরং এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে ভুল পদ্ধতিতে, শরীর না বুঝে ও অতিরিক্ত চাপে শরীরচর্চা করলে হৃদযন্ত্র বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। সঠিক জ্ঞান, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারাই পারে এই ভয় কাটিয়ে স্বাস্থ্যকর ফিটনেস নিশ্চিত করতে। সতর্কতা, সচেতনতা ও সংযম এই তিনটি হল নিরাপদ শরীরচর্চার মূলমন্ত্র।
ছবি: পেকজেলস ডট কম