আজকের বই: রূপচিন্তা ও সাজমহল
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সারা বিশ্বে প্রতিদিন অসংখ্য বই প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। ফ্যাশন, বিউটি, লাইফস্টাইল–বিষয়ক বইও আছে এই তালিকায়। যদিও এসব বিষয়ে বই আমাদের দেশে খুব কমই প্রকাশিত হয়ে থাকে। আমাদের সংগ্রহে থাকা কিছু বইয়ের কথা আমরা আগামী কয়েক দিন আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। শুরু করেছি গতকাল বিশ্ব বই দিবস উপলক্ষে। অবশ্য এসব বই কোনো না কোনোভাবে যাপননিষ্ঠ। আজ থাকছে সাজগোজ বিষয়ে দুটি বই।

নিজেকে সুন্দর দেখাতে কে না চায়। এখানে বস্তুত নারী আর পুরুষে ভেদাভেদ নেই। বরং আদিকাল থেকে উভয়েই নানাভাবে সৌন্দর্যচর্চা করে আসছে। যেখানে রূপচর্চার পাশাপাশি পোশাক, অলংকার আর সৌরভের ভূমিকাও রয়েছে। বিজ্ঞানের উন্নতি আর গবেষণার উৎকর্ষ সৌন্দর্যচর্চা পেয়েছে অন্যতর মাত্রা। ফলে এসব বিষয় এখন সারা বিশ্বে পাঠ্য হিসেবে যেমন আদৃত, তেমন পেশা হিসেবেও। তবে আমরা সেদিকে না গিয়ে বরং বই দুটো নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করতে পারি। একটি বই অবশ্যই বিরল। অন্যটি তা নয়। দুটি বই–ই কলকাতা থেকে প্রকাশিত।

বিজ্ঞাপন

রূপচিন্তা

শুরুতেই আমাদের দেশে প্রকাশিত বইটির কথা বলা যাক। এই বইয়ের লেখক মালিনী। তিনি বইটিকে বলেছেন রূপচর্চার সচিত্র গাইড। যদিও এখানে কেবল রূপচর্চা নেই, বরং আছে আরও কিছু। বইটির প্রথম প্রকাশ ১৯৮৪ সাল। এর চার বছর পর দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে আরও মুদ্রণ হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। বইটি আমি ফুটপাত থেকে কিনেছিলাম কয়েক মাস আগে। ৯টি অধ্যায়ে বিধৃত হয়েছে সৌন্দর্যচর্চার নানা বিষয়। যেগুলো হলো: ত্বক, চুল, স্তন, অন্যান্য অঙ্গ, মেকআপ, স্নান, সাজপোশাক ও অলংকার, সুগন্ধি, খাদ্য ও সৌন্দর্য। এখানে রূপের সঙ্গে স্বাস্থ্যচর্চার যাবতীয় বিষয়, সমস্যা ও প্রতিকার আলোচিত হয়েছে। ২১২টি ছবি ও ২১টি তালিকাও আছে এই বইয়ে। পাঠকের সুবিধার জন্য। লেখকের পরিচয় এখানে পাওয়া যায় না। তাঁর বিশেষত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়ার সুযোগ অতএব থাকে না।

তবে এই বইয়ে আজ থেকে ঠিক ৪০ বছর আগে তিনি যেসব বিষয়ে আলোকপাত করেছেন, সেসব সমসময়েও সমান প্রাসঙ্গিক। ফলে পড়তে গিয়ে অবাক না হয়ে পারা যায় না। আর রূপচিন্তা কেবলই বাহ্যিক নয়, বরং আত্মিকও। এমনকি স্বাস্থ্যের সঙ্গে এর সম্পর্ক ওতপ্রোত। সেটাও চমৎকার করে উল্লেখ করেছেন। মাত্র ২৩১ পৃষ্ঠার বইটি পাঠের আনন্দ দেয়। সঙ্গে অনেক বিষয় জানাও হয়ে যায় প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা এই বইয়ের নানা বিষয় থেকে।

বিজ্ঞাপন

সাজমহল

লেখক জয়িতা দাস। বইটির উপজীব্য ‘ঔপনিবেশিক বাংলার মেয়েদের সাজগোজ’। ২০১৫ সালে প্রথম প্রকাশ। কলেবর বৃহৎ নয়। মাত্র ২২৩ পৃষ্ঠা। গোড়ার কথা, বস্ত্র পুরাণ, গয়নার বাক্স, কামিনী কুন্তল কথা, অঙ্গরাগের সাতসতেরো ও শ্রীচরণেষু–শু—এই ৬টি অধ্যায় বলা হয়েছে নানা বিষয়। সঙ্গে আছে গ্রন্থঋণ। পেশায় শিক্ষক লেখক এখানে ইতিহাসকে আশ্রয় করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের নারীদের সাজগোজ নিয়ে লিখেছেন। ফলে পোশাকের, গয়নাগাঁটি, কেশ পরিচর্যা, প্রসাধনী ও মেয়েদের প্রথম জুতা পরার মতো বিষয়ও এখানে আলোচিত হয়েছে। সাজ আর পোশাকের যুগলবন্দীর নিটোলতায়   সেই সময়ের নারীদের লুকও ধরা পড়েছে তাঁর বর্ণনায়।

ইতিহাস এখানে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। সময় হয়ে উঠেছে প্রধান নিয়ামক। ফলে রাজনৈতিক পটবদলও গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হয়েছে। কারণ, পলাশীর যুদ্ধ–পরবর্তীতে ক্ষমতার হাতবদলে প্রেক্ষাপট বদল হয়েছে। সেই রেশ ধরেই লেখক এগিয়েছেন; বলা চলে পাঠককেও সেই টাইম ট্রাভেলের অংশ করেছেন।
 ছবি: হাল ফ্যাশন

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ৫৯
বিজ্ঞাপন