আপনার সন্তানের গেমস আসক্তির জন্য যেভাবে আপনিই দায়ী হতে পারেন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ঘরে শিশু বা কিশোর বয়সী কেউ আছে, আর সে গেমস খেলায় আসক্ত নয়, এটা আজকাল যেন হতেই পারে না। বর্তমান বাংলাদেশের প্রতিটি নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পরিবারের খুব সাধারণ একটি দৃশ্য এটি। বর্তমান সময়ের প্রতিটি মা-বাবা অভিযোগ করেন যে তাঁদের সন্তান গেমস খেলায় আসক্ত। কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন কি, যে কেন তারা গেমসে ডুবে থাকে? কী এমন আছে এই গেমগুলোতে যে এগুলো তাদের এত আরাধ্য কিছুতে পরিণত হয়েছে? ঘন্টার পর ঘন্টা তাকে আটকে রাখতে পারছে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিন কিন্তু অন্য কোনো কিছুতেই তার আগ্রহ বা মনোযোগ নেই। কিন্তু এই দোষ কি তার একার? আসুন আজ তবে এর কিছু কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করি, যেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে।

স্মার্ট ডিভাইস আমরাই তুলে দেই তাদের হাতে

বাবা-মাদের অভিযোগ থাকে, শিশু মোবাইল ফোন ছাড়া খাবার খায় না। আচ্ছা বলুন তো, আপনার সন্তান যখন খেতে শিখেছে তখন মোবাইল বা কার্টুনের সঙ্গে তার পরিচয় কে করিয়েছে? আপনি আপনার কাজের সুবিধার্থে কিংবা সে যেন অন্যমনষ্ক হয়ে পুরো খাবারটাই খায় সে উদ্দেশ্যে কি আপনি ওর হাতে মোবাইল ফোন বা স্মার্ট ডিভাইস তুলে দেন নি? ধীরে ধীরে সে এটাকে অভ্যাসে পরিনত করেছে। অথচ এখন এর পুরো দায় নিতে হচ্ছে সেই ছোট্ট শিশুটিকে।

বিজ্ঞাপন

কর্মব্যস্ত বাবা-মায়ের সন্তানের অবসর কাটে কীভাবে?

সারাদিনের অফিস কিংবা ব্যবসা সামলে এসে সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দেওয়ার মানসিকতা আমরা কয়জন রাখি? একজন নারী যখন মা এবং একই সঙ্গে কর্মজীবী, তাঁর জন্য ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স করা অবশ্যই কঠিন। আর এক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্য, বিশেষ করে বাবাদের ভূমিকা প্রায়ই অপর্যাপ্ত হয়। বিভিন্ন সম্মিলিত অ্যাক্টিভিটি, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া আর শিশু-কিশোরদের সঙ্গে তাদের চাহিদামতো সময় কাটানো হয়না আমাদের। আর নিজেদের জীবনকে সহজ করতে অবচেতন মনেই সন্তানের হাতে স্মার্ট ডিভাইস তুলে দিয়ে আমরা নিজেরাই তাকে পরিচয় করে দিচ্ছি দ্রুত আসক্তি তৈরি করা গেমসের সঙ্গে। সন্তান বাবা-মায়ের সান্নিধ্য চাইবে এটাই স্বাভাবিক। আর যখন সে তা পাবে না তখন বিকল্প উপায়ে তার ভালো সময় কাটানোর চাহিদা পূরণ করবে, এটাও কিন্তু দিনের আলোর মতো সত্য। সে পরিবারকে পাশে পাবে না, চাইলেই বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে তো সে গেমসকে ভালোবাসবেই।

একাকিত্ব বা বিষন্নতা কাটাতে গেমস

৮০-৯০ এর দশকের শিশু-কিশোরদের ছিল অবাধ স্বাধীনতা বন্ধুত্ব তৈরির ক্ষেত্রে। ছিল পাড়ার বন্ধু আর যৌথ পরিবারের কাজিনদের দল। অথচ বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, একজন শিশুর বেড়ে ওঠার সময়টায় সে সবচেয়ে একা থাকে। ফলে বিষন্নতায় ছেয়ে থাকে মন। শারীরিক-মানসিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে কথা বলার যখন কেউ থাকে না। তখন তাকে কোয়ালিটি উপহার দেয় বিভিন্ন গেমস। গ্রুপ ভিত্তিক অনলাইন গেমগুলোর মাধ্যমে তার একটি সার্কেল তৈরি হয়। সঙ্গীরা মিলে শত্রুদের অ্যাটাক করা বা বিজয়ের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেয় তারা। কিন্তু দিন শেষে আপনার সঙ্গে দাবা, লুডু কিংবা রোজ বিকেলে পাড়ার মাঠে প্রাণ ভরে ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু আর খেলা গেলে হয়তো দৃশ্যপট অন্যরকম হতো।

বিজ্ঞাপন

আপনি সন্তানের সঙ্গে শখের কাজে সময় কাটান কি?

অভিভাবকদের আরেকটি অভিযোগ, ‘আমার সন্তান ফোকাসড না, পড়াশুনায় বা অন্য কোন কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারেনা। কিন্তু কেন এমন হয়,কখনও জানতে চেয়েছেন? আচ্ছা, আপনি জানেন কি আপনার সন্তানের শখ কী? জিজ্ঞাসা করলে হয়ত বলবে গেমস, আর এ কথা বললেই যেন বিপত্তি! কিন্তু আপনি কি কখনও তাকে অন্য কাজে উৎসাহিত করেছেন আদৌ? তাকে সঙ্গে নিয়ে বাগান করা, তাকে লাইব্রেরিতে নিয়ে যাওয়া, একসঙ্গে ছবি আঁকার মতো কাজ আমরা কয়জন করি?

গেমসের সবকিছুই খারাপ নয়

আপাত দৃষ্টিতে গেমসের কোন উপকারিতা না দেখা গেলেও গভীরভাবে ভাবলে এর কিছু ভালো দিক উঠে আসে।

১. গেমগুলো যেহেতু ধাপে ধাপে সাজানো থাকে, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।

২. উপস্থিত বুদ্ধির বিকাশ হয়, যেহেতু এখানে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় খুব কম থাকে

৩. প্রতিটি ধাপ পার করার পর তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে

৪. খেলার জন্য দক্ষতা অর্জন করতে হয়

অভিভাবকরা নিশ্চয়ই বাঁকা চোখে দেখছেন এই পয়েন্টগুলো। আর মাত্রাতিরিক্ত গেম আসক্তি অবশ্যই প্রত্যেকের জন্যই খারাপ। তবে পেছনের কারণ না খুঁজে আর নিজের ভূমিকার কথা না ভেবে গেমস খেলা নিয়ে সন্তানকে শাসন করে লাভ হবে না। আপনার সন্তানকে সময় দিন, তার খেয়াল রাখুন। তাকে গেমস ছাড়াও বিভিন্ন গঠনমূলক ও মজার শখের কাজের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। আর সময় বদলেছে। প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদনের এক অনন্য মাধ্যম হতে পারে গেমস খেলা। আপনি নিজেও তাতে অংশ নিতে পারেন, এ নিয়ে গল্প করতে পারেন সন্তানের সঙ্গে। এতে আপনার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে তার সহজেই।

তথ্যসূত্র: মমস অফ টিনস

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩: ১৩
বিজ্ঞাপন