মেটার প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি একাধিক সাক্ষাৎকার, পডকাস্ট ও প্রযুক্তি সম্মেলনে এমন এক ভবিষ্যতের রূপরেখা দিয়েছেন, যেখানে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।
সম্প্রতি স্ট্রাইপের এক সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জাকারবার্গ বলেন, “ভবিষ্যতে মানুষ এমন প্রযুক্তি চাইবে যা একজন মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে চিনবে, জানবে। তার পছন্দ, অপছন্দ ও চাহিদা একজন বন্ধুর মতো বুঝতে পারবে। যেমনটা ফিড অ্যালগরিদম করে।” তার মতে, গড়পড়তা একজন আমেরিকানের প্রকৃত বন্ধু সংখ্যা তিনজনেরও কম। অথচ একজন মানুষের প্রায় ১৫ জন প্রকৃত বন্ধুর প্রয়োজন। এই সামাজিক শূন্যতাই পূরণ করবে এআই বন্ধু।
অন্য এক পডকাস্টে জাকারবার্গ বলেন, “যাদের বাস্তব থেরাপিস্ট নেই, ভবিষ্যতে তাদের প্রত্যেকেরই থাকবে একটি এআই থেরাপিস্ট। একইভাবে, যে কোনো পণ্য কিনতে এখন যেমন আমরা বন্ধুর সাহায্য নেই। তেমনই এই সাহায্যের জন্য থাকবে এআই বিজনেস এজেন্ট। যা মানুষকে প্রতিদিনের নানা ধরনের সমস্যার সমাধান দেবে।
মেটা ইতিমধ্যে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে- এআই চ্যাটবট যুক্ত করেছে। এমনকি রে-বান স্মার্ট গ্লাসেও কাজ করবে এই এআই। জাকারবার্গের দাবি করেন, বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ মেটা এই ব্যবহার করছে।
ভবিষ্যতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেমন হবে। এমন প্রশ্নে জাকারবার্গ জানান, ভবিষ্যৎ এআই কেবল তথ্যভিত্তিক নয়, বরং একজন মানুষের প্রতিদিনের জীবন যাপনের প্রেক্ষাপটে ‘ভালো বন্ধু’র মতো আচরণ করবে। সেই এআই চিনবে আপনি কে, বুঝবে আপনার জীবনে কী ঘটছে এবং জানবে আপনার মনের অবস্থা।
তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সবাই জাকারবার্গের এই ভবিষ্যতের সঙ্গে একমত নন। যেমন ইনস্টাগ্রামের সাবেক এক্সিকিউটিভ মেঘনা ধর বলেছেন,“যে প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের একাকিত্ব বাড়িয়েছে, তারাই এখন সেটির সমাধান দিতে চায়। এটি যেন আগুন লাগিয়ে আবার নিজেই দমকল হতে চাওয়া।”
এ ছাড়া ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর এক প্রতিবেদনে মেটার চ্যাটবটের কিছু সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হয়েছে। এবং এই সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে মেটা। সমালোচনাকারীদের অভিযোগ, মেটার চ্যাটবট শিশুদের সঙ্গেও রোমান্টিক রোল-প্লে-তে যুক্ত হয়েছে। যা বড় ধরনের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন শুলার এ বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এআই কখনোই প্রকৃত বন্ধু বা থেরাপিস্টের জায়গা নিতে পারবে না। তবে যাদের কাছে কিছুই নেই, তাদের জন্য এই চ্যাটবটই হতে পারে অনেক কিছু। তাই ‘চ্যাটবট বনাম শূন্যতা’ এই দ্বন্দ্বে কখনো কখনো চ্যাটবটই অনেক সময় উপকারী হতে পারে।”
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন জাকারবার্গের ভবিষ্যৎ কল্পনা যেমন উদ্ভাবনী, তেমনি বিতর্কিত। সামাজিক শূন্যতা পূরণে এআই বন্ধুরা হয়তো কিছুটা সহায়ক হবে, কিন্তু মানুষ কি আদৌ কৃত্রিম বন্ধুত্বে পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আর হলেও তা মানব সভ্যতার জন্য কতটা উপকারী বা বিধ্বংসী হবে। প্রযুক্তির অগ্রগতির পাশাপাশি এই প্রশ্নটিও এখন আমাদের ভবিষ্যতের অংশ হয়ে উঠেছে।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
ছবি: পেকজেলসডটকম ও ইনস্টাগ্রাম