ফিরে আসছে ডাম্ব ফোন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আজকাল প্রায়ই শোনা যায়, ‘ফোন এখন স্মার্ট আর মানুষ হলো ডাম্ব বা বুদ্ধিহীন।’ দিন দিন স্মার্ট থেকে স্মার্টতর হচ্ছে মুঠোফোন। আর আমরাও ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেটে সংযুক্ত আছি এর কল্যাণে। স্মার্টফোন ছাড়া জীবন যেন চলতেই চায় না। এদিকে আধুনিক সমাজের ডিকশনারিতে ইন্টারনেট-সুবিধা নেই আর বোতাম টিপে চালাতে হয়, এমন ফোনকে ডাম্ব ফোন বা বোকা ফোন বলে ডাকা হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, সম্প্রতি সারা বিশ্বে এই ডাম্ব ফোনের ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার বেড়েছে অপ্রত্যাশিত রকমের বেশি। ডিজিটাল ওয়েল বিয়িং, ইন্টারনেট থেকে ডিসকানেক্টেড থেকে শান্তি নিশ্চিত করা, এমন অনেক কারণ উঠে আসছে এর পেছনে।

এক সময় বাটন ফোনগুলোরই রাজত্ব ছিল সারা দুনিয়ায়
এক সময় বাটন ফোনগুলোরই রাজত্ব ছিল সারা দুনিয়ায়
ছবি: পেকজেলসডকম

মোবাইল ইন্টারনেট ও টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তি আসার আগে বাটন ফোনগুলোরই রাজত্ব ছিল সারা দুনিয়ায়। ২০০৪ সালে ফেসবুকের উত্থানের পর অনেকটাই বদলে যায় দৃশ্যপট। এরপর ইনস্টাগ্রাম, টিকটক আর টুইটারের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ডাম্ব ফোন অনেকটা হারিয়েই যায়। যখন-তখন সেলফি আর ছবি তোলার প্রয়োজনীয়তা, ইন্টারনেট থেকে গান শোনা ইত্যাদি বিষয়ও বোতাম ফোনগুলোকে পিছিয়ে দিচ্ছিল অনেকটা।

বিজ্ঞাপন

তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, এসইএম রাশ নামের একটি সংস্থা পরিচালিত এক বৈশ্বিক জরিপে উঠে এসেছে, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই সনাতন ধাঁচের ইন্টারনেট কানেকশনবিহীন ডাম্ব ফোনের বিশ্বব্যাপী বিক্রি বেড়েছে ৮৯ শতাংশ। শুধু কল করা বা মেসেজ পাঠানোর উপযোগী এই বেসিক ডিজাইনের ফোনগুলো ২০২১ সালেই সারা পৃথিবীতে ১ হাজার মিলিয়ন বিক্রি হয়েছে; যেখানে ২০১৯ সালে এই বিক্রির সংখ্যা ছিল ৪০০ মিলিয়ন। বিলাতে এই বোতাম টেপা ডাম্ব ফোন ব্যবহার করেন প্রতি ১০ জনে ১ জন।

নিজেকে স্বস্তিতে রাখতেই এই ফোনের চাহিদা বাড়ছে
নিজেকে স্বস্তিতে রাখতেই এই ফোনের চাহিদা বাড়ছে

বিবিসির এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এমন ডাম্ব ফোনে ফিরে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, আগে আমার দিনের সময়ের বিশাল একটি অংশ যেত ফোনের পেছনে।’ অনেকেই এই ডাম্ব ফোন বেছে নিচ্ছেন এখন নিজের জীবন, কর্মক্ষেত্র ও পরিবারে সময় দেওয়ার জন্য।

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল ওয়েলবিয়িং বা ওয়েলনেস; অর্থাৎ ভালো থাকার ধারণাটিই আসলে এই বিশ্বব্যাপী বাটন ফোন বা ডাম্ব ফোনের ফিরে আসার জন্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। ফোনে কল করা, মেসেজ পাঠানো, ক্যালকুলেটর ব্যবহারসহ বিভিন্ন কেজো উপযোগিতার দিক থেকে ডাম্ব ফোন কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। তাই নতুন প্রজন্মের অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত ও অনেকটা অনৈচ্ছিকভাবেই ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকার মানসিক চাপ নিতে চায় না বলেই স্মার্টফোন ত্যাগ করছে। এতে পেশাগত কার্যকারিতা ও মানসিক শান্তি—দুই-ই নিশ্চিত হচ্ছে বলে অনেকেই জানান।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২২, ০৯: ৪৬
বিজ্ঞাপন