জীবনকে সহজ ও আয়েশি করার লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবন করেছে মালপত্র বহনে সক্ষম রোবট স্যুটকেস-ট্রলি। এর যান্ত্রিক মস্তিষ্কে মানুষ সেই বুদ্ধি এমনভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে একান্ত সহচরের মতো সে তার মালিকের পিছু নেবে। হাতে, কাঁধে বা মাথায় চাপিয়ে কিংবা চাকা লাগিয়ে টেনে নিতে হবে না। অবশেষে কষ্টকর মালপত্র বহন অথবা বিরক্তিকর টানাটানি থেকে মানুষ মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
এ নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন আমার মাথায় তিনটি জায়গার কথা আসছে। কারওয়ান বাজার, গাবতলী আর কমলাপুর রেলস্টেশন। এই তিন জায়গায় মানুষ গীতা নিয়ে গেলে কী অবস্থা হবে? কার গীতা কোথায় যাবে? কিংবা ছিনতাইকারী নিয়ে যাচ্ছে, আপনি মুঠোফোনে দেখতে পেয়েও কিছু করতে পারছেন না। এসব বেশ চিন্তার বৈকি! তবে সে ভার আপাতত আপনাদের ওপর ছেড়ে দিয়ে বরং গীতা নিয়ে দু–চার কথা বলা যাক।
রাস্তাঘাট, বাজার, শপিং মল, স্টেশন কিংবা বন্দরে ছুটতে থাকা ব্যস্ত কারও কারও ঠিক পেছনেই অনুসরণ করে সমান গতিতে অদ্ভুত নকশার ব্যাগ-স্যুটকেস ছুটতে থাকলে, তা দেখে বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই। অচিরেই প্রায় সর্বত্র চোখে পড়বে চমৎকার নকশার দৃষ্টিনন্দন স্যুটকেসসদৃশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর রোবট। বড় দুটি চাকা লাগানো এই রোবট স্যুটকেস একেবারে অনুগত ভৃত্যের মতো নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নীরবে এর মনিব, অর্থাৎ মালিকের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাকে অনুসরণ করতে সক্ষম। ব্লুটুথের প্রয়োজন নেই। এতে সংযুক্ত করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্যামেরা ও রাডার। এটি আশপাশের অবস্থা, পরিবেশ বিশ্লেষণ করে খুব দক্ষতায় বাধাবিপত্তি এড়াতে চৌকস।
দিনে যেমন নিপুণ, তেমনই রাতের আঁধারে বা বৃষ্টিভেজা পিচ্ছিল পথে চলতেও সমান পারদর্শী। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২ মাইল (৩৫ কিমি) গতিতে চলতে সক্ষম। চলতে চলতে প্রয়োজনে হঠাৎ থেমে যেতেও পারে। তবে তুষার আচ্ছাদিত পথে বা বালুতে চলতে পারে না এই রোবট স্যুটকেস। এমন স্যুটকেস-ট্রলি উদ্ভাবনে চালকবিহীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গাড়ির ধারণা ধার করে অত্যন্ত দক্ষতায় কাজে লাগানো হয়েছে। একটি অ্যাপস রয়েছে, স্মার্টফোনে সেটি বসিয়ে নিয়ে ফোনের পর্দায় চোখ রেখে এমন চমৎকার যান্ত্রিক সঙ্গীকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেই সঙ্গে গতি, অতিক্রান্ত দূরত্ব, কতটুকু চার্জ অবশিষ্ট আছে ইত্যাদি তথ্য জানা যাবে।
পিয়াজজিও ফাস্ট ফরোয়ার্ড সম্প্রতি ‘গীতা’ নাম দিয়ে রোবট ট্রলির বড় ও ছোট দুটি মডেল বাজারে ছেড়েছে। ২ ঘণ্টা চার্জ দিলে বড় মডেলের ট্রলিটি ৪ ঘণ্টায় একনাগাড়ে ১২ মাইল (প্রায় ২০ কিমি) পথ যেতে পারে। আর ছোট মডেলটি ৭ ঘণ্টা কার্যক্ষম থাকে এবং চলতে পারে প্রায়ই ২১ মাইল (৩৩ কিমি) পর্যন্ত।
বর্তমানে ২০ কেজি ধারণক্ষমতার বড় আকারের (৬৯x৫৭x৬১ সেমি) ট্রলির জন্য গুনতে হবে ২ হাজার ৯৫০ মার্কিন ডলার। আর ১০ কেজি ধারণক্ষমতার ছোটটির মূল্য ১ হাজার ৮৫০ ডলার। উদ্যোক্তাদের মতে জনপ্রিয় হতে শুরু করলেই প্রযুক্তির উৎকর্ষ এমন অমূল্য বুদ্ধিমান এবং বিশ্বস্ত ট্রলি-স্যুটকেস ‘গীতা’র মূল্য কমে আসবে, হবে আধুনিক মানুষের নিত্যদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী।