আমরা প্রায় সবাই বিড়াল পছন্দ করি। আবার অনেকেই পোষা প্রাণী হিসেবেও নিজের সঙ্গে রাখতে ভালোবাসেন বিড়াল। কারণ, সঙ্গী হিসেবে বিড়ালের কোনো তুলনা নেই। তবে বাসায় বিড়াল থাকলে কিন্তু অনেকগুলো ব্যাপারে বেশ খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন বিড়ালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ল কি না, সেদিকে খেয়াল রাখা, ঠিকমতো ভ্যাক্সিন দেওয়া ইত্যাদি। আর নিজের প্রিয় বিড়ালটির কোনো কিছু হলে চিন্তার যেন কোনো শেষ থাকে না।
তবে অনেকেই ভুল করে বিড়ালকে এমন কিছু খাবার খাইয়ে ফেলেন, যা বিড়ালের জন্য মোটেও ঠিক নয়। তাই কী খাওয়াচ্ছেন, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
পশুচিকিৎসকদের মতে, এমন অনেক খাবার রয়েছে, যা বিড়ালকে দেওয়া মোটেও ঠিক নয়। এই ধরনের খাবারগুলো বিড়ালকে দেওয়া হলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাঁচটি খাবার সম্পর্কে, যা বিড়ালকে কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না।
১.আঙুর ও কিশমিশ
যদিও আঙুর ও কিশমিশ আমাদের জন্য বেশ সুস্বাদু। তবে এগুলো বিড়ালের স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও ভালো নয়। এগুলো বিড়ালের কিডনির ক্ষতি করতে পারে। পশুচিকিৎসক হুইটনি মিলার বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু জায়গা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, আঙুর ও কিশমিশে থাকা টারটারিক অ্যাসিডের মাত্রা বিড়ালের জন্য ঠিক নয়। অতিরিক্ত টারটারিক অ্যাসিড বিড়ালের কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
বিড়ালকে এসব খাওয়ানো হলে প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অলসতা, ক্ষুধামান্দ্য ও ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পরবর্তী সময়ে বমি, অতিরিক্ত তৃষ্ণা বা প্রস্রাব, পেটে ব্যথার মতো সমস্যাগুলো হতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা না নেওয়া গেলে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
২. চকলেট
চকলেট ও অন্যান্য ক্যাফেইন–জাতীয় খাবার বিড়ালের জন্য বিষাক্ত। নিউইয়র্ক সিটির শোয়ার্জম্যান অ্যানিমেল মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র পশুচিকিত্সক কার্লি ফক্স বলেন, চকলেটে মিথাইলয্যানথিন রয়েছে; অর্থাৎ, ক্যাফেইন এবং থিওব্রোমাইন, যা বিড়ালের জন্য বিষাক্ত। চকোলেট খাওয়ানো হলে বিড়ালের বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া থেকে শুরু করে উচ্চ রক্তচাপ এবং খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। তবে চকলেট খাওয়ানোর পরিমাণ এবং ধরনের ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো কমবেশি হতে পারে।
৩.পেঁয়াজ ও রসুন
পেঁয়াজ ও রসুন বিড়াল থেকে সব সময় দূরে রাখতে হবে। এগুলো বিড়ালের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। মিলার বলেন, পেঁয়াজ ও রসুন বিড়ালের জন্য বিষাক্ত। কারণ, এগুলোতে সালফোক্সাইড এবং অ্যালিফ্যাটিক সালফাইড যৌগ রয়েছে, যা বিড়ালের কোষের ভারসাম্যের ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মসলা বিড়ালের জন্য বিষাক্ত। এসব খাবারের বিষক্রিয়ার প্রভাবে বিড়ালের অলসতা, ফ্যাকাশে মাড়ি এবং বিবর্ণ প্রস্রাবের মতো লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে।
৪.কাঁচা মাংস
মানুষের যেমন কাঁচা মাংস খেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তেমনি বিড়ালেরও দেখা দিতে পারে। অসাবধান হলে মুরগি, ডিমসহ কাঁচা যেকোনো প্রোটিন–জাতীয় খাবার বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। এসব খাওয়ানো হলে বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং অলসতার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
৫.হাঁড় বা কাঁটাযুক্ত প্রোটিন
বিড়াল মাছ পছন্দ করে। তবে এসব খাওয়ানোর আগে নিশ্চিত করুন, যেন কাটা না থাকে। নয়তো মারাত্মক গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অস্থিরতা, দাঁত ভেঙে যাওয়া, খাদ্যনালি কিংবা অন্ত্রে কাঁটা জমা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, অস্থিরতা, খিঁচুনি এবং অতিরিক্ত লালা ঝরার মতো সমস্যা হতে পারে।
তথ্যসূত্রঃ গুড হাউস কিপিং
ছবিঃ পেকজেলস ডট কম