কর্মক্ষেত্রে হয়তো খুব খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হলো অথবা উদ্যাপিত হলো বড় কোনো ব্যক্তিগত সাফল্য। হয়তো সম্পর্কের টানাপোড়েনে জীবনে বারবার করা ভুলগুলো খুব স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠল মনে। আবার সেবামূলক কাজের ক্ষেত্রে মাথায় এল দারুণ কিছু আইডিয়া। ডায়েরিতে লিখে রাখা যায় এ সবকিছুই। নিত্যদিন জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা-দুর্ঘটনা, মনের যত উছলে ওঠা আবেগ আর মাথায় খেলে যাওয়া পরিকল্পনা বা আইডিয়া নিজের জন্য লিখে রাখাই জার্নালিং।
আলবার্ট আইনস্টাইন, মেরি কুরি, ফ্রিদা কাহলো, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই তাঁদের অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা বা অনুভূতি সংরক্ষণ করতে জার্নালিং করতেন। কাহলো ও দা ভিঞ্চি আবেগ প্রকাশ করতে জার্নাল লিখতেন ছবি এঁকে।
এই জার্নালিং নিয়ে লাইফস্টাইল ও ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা নতুন করে ভাবছেন এখন। অনেকেই এর উপকারী দিকগুলো তুলে ধরছেন বিভিন্ন নিবন্ধে।
ইন্টারনেটের যুগে খাতা-কলমে ডায়েরি কিংবা জার্নাল লেখাকে অনেকে অপ্রয়োজনীয় ভাবতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিগত জার্নালিংয়ের রয়েছে অনেক উপকারিতা। নিজের লক্ষ্য ও কাজের সমন্বয় ঘটাতে, নিজস্ব পর্যবেক্ষণ এবং চিন্তাভাবনাগুলো সংরক্ষণ করতে ডায়েরি বা জার্নালের জুড়ি মেলা ভার।
ব্যক্তিগত জার্নাল আমাদের পর্যবেক্ষণ, অনুভূতি আর নানা ধরনের অভিজ্ঞতার প্রতিফলনের রেকর্ড। পরবর্তী সময়ে এই ব্যাপারগুলো পড়তে গিয়ে ভেবে দেখা যায় এ-সম্পর্কিত সবকিছু। কেন এমন হয়, কেন মানুষ একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট ধরনের প্রতিক্রিয়া দেয়, লেখা থাকলে এসবের অনেক কিছুই পরে বোঝা যায়। যা কিছুই পর্যবেক্ষণ করা হয়, সে সম্পর্কে চিন্তাগুলোই সাধারণত ডায়েরি বা জার্নালে লেখা হয়। জার্নালিংয়ের রয়েছে কিছু বিশেষ উপকারিতা।
দিনের প্রয়োজনীয় কাজের তালিকা কিংবা জীবনের লক্ষ্যগুলো লিখে রাখতে জার্নাল ব্যবহারের বিকল্প নেই। এতে নিজের তরফ থেকেই একধরনের দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধ তৈরি হয়।
জার্নালিং করার কাজটিকে একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করা গেলে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সহজে ধারণা পাওয়া যাবে। নিজের কাজ ও নিজেকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর।
লিখিত তালিকার কাজগুলোর অগ্রগতি নিজের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এগিয়ে আসার পথে মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জ ও বাধাবিপত্তির কথা মনে করে নিজেকে সাহস দেওয়া যায়। গর্ব করা যায় নিজের অগ্রগতিতে।
যেকোনো কাজের মতোই লেখালেখিতে দক্ষতা অর্জন করতে চাইলে প্রয়োজন প্রচুর অনুশীলন। জার্নালিংয়ের মাধ্যমে লেখার চর্চা হওয়ায় বাড়ে ভাষাগত দক্ষতা। নিজের ভাবনাগুলো গুছিয়ে লেখার অভ্যাস গড়ে ওঠে বলে এর মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পারদর্শী হওয়া যায়।
কখনো কখনো নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও আবেগ আমাদের মাথায় চক্রাকারে লুপের মতো চলতেই থাকে। চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে এসব নেতিবাচকতা অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কাগজে লিখতে গিয়ে এই নেতিবাচক ভার কিছুটা লাঘব হতে পারে, বেরিয়ে আসতে পারে সমাধানও।
সূত্র: গ্রেটার গুড ম্যাগাজিন (বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়), সাইক সেন্ট্রাল, হোলস্টি ডটকম, ভেরি ওয়েল মাইন্ড