তাঁতের ছোঁয়ায় প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার গল্প বলা এক শিল্পী
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী এখন বসবাস করেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে। কিন্তু তাঁর কাজের শিকড় ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মাটি, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ঐতিহ্যে। তাঁতের মাধ্যমে নাবিলা গড়ে তুলেছেন এমন এক শিল্পভাষা, যেখানে মিশে গেছে অতীত আর বর্তমান, লোকজ গল্প আর পরিবেশ সচেতনতা।

নাবিলার প্রতিটি কাজ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত ও লোকশিল্পকে ঘিরে। তার ভাষায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্র্যাফটে বিএফএ ও এমএফএ করার সময়ই বুননের ভেতর খুঁজে পাই নিজস্ব এক আত্মিক অনুভব। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতির আত্মা কখনো নিঃশেষ হয় না, সে রূপ বদলে ফিরে আসে নতুনভাবে।

এই বিশ্বাস থেকেই তাঁর প্রতিটি বুননে ফুটে ওঠে জন্ম-মৃত্যু-পুনর্জন্মের চক্র, জীবনের আলিঙ্গন এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অদৃশ্য যোগসূত্র। তিনি যেমন লোকজ মোটিফ ব্যবহার করেন, তেমনি পরিবেশ সংকট, মানবিক দুর্বলতা ও আত্মদর্শনকেও তুলে ধরেন তার কাজে।

বিশ্বখ্যাত টেক্সটাইল শিল্পী শীলা হিক্স নাবিলার অন্যতম অনুপ্রেরণা। তাঁর মতো নাবিলাও টেক্সচারের মাধ্যমে স্মৃতি, আত্মা ও সংস্কৃতির গল্প তুলে ধরেন। তবে নিজস্ব ঢঙে, বাংলার মাটি ও গন্ধকে সঙ্গে নিয়ে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে সলফোর্ডে তাঁর প্রদর্শিত ইনস্টলেশন-এ একটি প্রতীকী বৃক্ষ ও গর্ভস্থ শিশুর চিত্রের মাধ্যমে তিনি ‘বন উজাড় ও মানবিক হুমকির সংযোগ’ তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

নাবিলার কাজ ইতিমধ্যে স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। তিনি অংশ নিয়েছেন বেইজিং আন্তর্জাতিক আর্ট বিয়েনালের ৭ম ও ৮ম আসরে, প্রদর্শনী করেছেন তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ফিলিপাইন ও ভুটানে। তাঁর টেপেস্ট্রিগুলো রয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকারি ও ব্যক্তিগত সংগ্রহে।

শুধু প্রদর্শনী নয়। তিনি নিয়মিত ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেন। চলতি বছর নাবিলা, আলজেরিয়ার একটি আন্তর্জাতিক উৎসব এবং দুবাইয়ের একটি শিল্প প্রদর্শনীতে অংশ নিতে যাচ্ছেন। যা তাঁর আন্তর্জাতিক উপস্থিতিকে আরও দৃঢ় করবে।

নাবিলা নবি সুতা আর বুননের মধ্য দিয়ে বলছেন প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও আত্মার কথা। তাঁর হাতে গড়া শিল্প যেন আত্মদর্শনের আয়না, যেখানে প্রতিটি ফোঁড়, প্রতিটি রঙে মিশে থাকে জীবনের গতিময়তা।

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৪: ২৩
বিজ্ঞাপন