সন্তানদের প্রথম শিক্ষক তাদের মা-বাবা। কারণ জন্মের পর শিশুরা প্রাথমিক ব্যাপারগুলো মূলত তাঁদের কাছ থেকেই শেখে। এর প্রভাব রয়ে যায় তাঁদের পরবর্তী জীবনেও। তাই সন্তানকে লালন পালনের সময় অনেক দিকেই খেয়াল রাখতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো সন্তানের সামনে কোন কাজগুলো করবেন আর কোন কাজগুলো করবেন না তা খেয়াল রাখা। আপনি যা করছেন তা আপনার সন্তানের জীবনের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলছে তা অবশ্যই জানা উচিত। এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। প্যারেন্টিং এক্সপার্টদের মতামত অনুযায়ী কিছু কাজ আপনার সন্তানের সামনে একবারেই করা যাবে না।
১. উচ্চস্বরে ঝগড়া করা
মা-বাবার মধ্যে একেবারেই কোনো সমস্যা বা মতবিরোধ হবে না তা কিন্তু নয়। সমস্যা আমাদের জীবনের একটি অংশ৷ তবে জানতে হবে কীভাবে এগুলো সমাধান করা যায়। আমরা অনেক সময় কোনো সমস্যা হলে সন্তানদের সামনেই উচ্চস্বরে ঝগড়া কিংবা তর্কে জড়িয়ে পড়ি। এটি আপনার সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে। পরবর্তীতে কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তারাও একই পন্থা অবলম্বন করতে পারে। তাই চেষ্টা করুন সন্তানের সামনে কখনোই উচ্চস্তরে কোনো ঝগড়া কিংবা তর্কে না জড়ানোর।
২. সন্তানের সামনে একে অন্যকে ছোট করা
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আমরা অনেক সময় নিজের সঙ্গীকে বিভিন্ন বিষয়ে ছোট করি। হাসির ছলেও অনেকে এই কাজটি করে থাকেন। যেহেতু শিশুরা দেখে দেখে অনেক কিছু শেখে, তাই তাঁদের সামনে কখনোই এটী করবেন না। এতে তাঁদের মধ্যে এই ব্যাপারগুলোকে স্বাভাবিক মনে হতে শুরু হয়। পরবর্তীতে তাঁরা অন্য কাউকে ছোট করতে একেবারেই দ্বিধাবোধ করবে না।
৩. সন্তানের সামনে সারাক্ষণ মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে ব্যস্ত থাকা
যখন আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে আছেন, তখন মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন না। এটি আধুনিক যুগের সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি ভয়াবহ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কাজটি শিশুদের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এমনকি এতে আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশও বাধা পায়৷ তাঁরা পরবর্তীতে কথা বলা কিংবা সামাজিক ব্যাপারগুলোতে অংশ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই যতক্ষন সন্তানের সঙ্গে থাকবেন, তাঁকে সময় দিন। তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। তাঁকে কথা বলার সুযোগ করে দিন।
৪. সবসময় সমালোচনা করা
গঠনমূলক সমালোচনা খারাপ কিছু নয়। তবে সবসময় শুধু নেতিবাচক দিক নিয়ে কথা বলাও সঠিক কোনো কাজ নয়। আপনি যখন আপনার সন্তানকে সবসময় শুধু সমালোচনাই করেন, তখন তাঁর আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়। কোনো কাজ করার আগেই তাঁদের মধ্যে এক ধরণের ভয় কাজ করতে থাকে। তাই সব সময় সমালোচনা না করে আত্মবিশ্বাস যোগানোর চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে সন্তানের ছোট ছোট অর্জনগুলোকেও উদযাপন করুন।
৫. নিয়ম ভঙ্গ করা
সমাজে বসবাস করতে গেলে ছোট বড় অনেক নিয়ম মেনে বাস করতে হয়। হয়তো এসব নিয়ম পালন করতে গিয়ে আমরা মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে যাই। আর আমাদের মধ্যে এক ধরনের প্রবণতাও আছে নিয়ম বা আইন ভাঙার।
তা হতে পারে রাস্তায় চলাচলের নিয়ম কিংবা অফিস আদালতের কোনো নিয়ম। এই কাজগুলো শিশুদের সামনে কখনোই করবেন না৷ পরবর্তী সময়ে তারাও এই কাজগুলো করবে এবং আপনার ব্যবহার তাঁদের কাজটিকে একধরনের মানসিক বৈধতা প্রদান করবে।
সূত্র: থট ক্যাটালগ
ছবি: পেকজেলস ডট কম