শাঁখারীবাজারে সাকরাইনের কেনাকাটা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পুরান ঢাকার ঐতিহ্য অন্যান্য অঞ্চলের জন্য বরাবরই ঈর্ষণীয়। পুরান ঢাকাইয়াদের বচন, চালচলন, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও উৎসব তাঁদের করেছে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাঁদের প্রাচীনতম উৎসবগুলোর মধ্যে সাকরাইন অন্যতম। এই উৎসব প্রতিবছর পৌষ ও মাঘের সন্ধিক্ষণে ধুমধাম করে উদ্‌যাপন করা হয়। মূলত সর্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবে রূপ নিয়েছে এই সাকরাইন। পুরান ঢাকার অলিগলিও মেতে ওঠে উৎসবের আমেজে। শাঁখারীবাজারেও চোখে পড়ে সেই চিত্র।

সাকরাইন উৎসব ঘিরে প্রতিবছর পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গেন্ডারিয়া, নয়াবাজারসহ বেশ কিছু মহল্লায় ঘুড়িসামগ্রী কেনাবেচার ধুম পড়ে। স্থায়ী পেশার পাশাপাশি মহল্লার ব্যবসায়ীরা এ সময়ে দোকানে ওঠান হরেক রকমের ঘুড়ি, নাটাই আর সুতা। এ ছাড়া দেখা মেলে রাস্তার পাশেই পাটি কিংবা টেবিল ফেলে অস্থায়ীভাবে বসানো সুতা, নাটাই আর ঘুড়ির পসরা। কিছু কিছু ব্যবসায়ী ২০-২৫ বছর ধরে করে আসছে ঘুড়ির ব্যবসা। বেশ পুরোনো ব্যবসায়ীরা সারা বছর তাদের দোকানে ঘুড়িসামগ্রীর পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যও কেনাবেচা করে থাকে।

শাঁখারীবাজারের স্বপ্নচূড়া ডিপার্টমেন্ট স্টোর অ্যান্ড গিফট কর্ণধার সুদেব সুর জানান, ‘সাকরাইন এলে আমরা আমাদের দোকানের অন্যান্য জিনিস বিক্রি বন্ধ করে দিই। এ সময় দোকানে শুধু  ঘুড়ি, সুতা আর নাটাই বিক্রি করি। কারণ, উৎসবে এর চাহিদা বেশি থাকে, বেচাও বেশি হয়। তা ছাড়া সারা বছর কোথাও ঘুড়ি না থাকলে কাস্টমার আমাদের কাছে যেকোনো সময় ঘুড়ি পাবে।’

বিজ্ঞাপন

খুচরা-পাইকারি সব ধরনের কেনাবেচা হচ্ছে এখানে। মহল্লার ছেলেদের দেখা যাচ্ছে, খুব আগ্রহের সঙ্গে বন্ধুবান্ধবসহ বিভিন্ন দোকান ঘুরে দামাদামি করে ভালো নাটাই ও সুতা কিনছে। ১৯ বছর বয়সী মাসুদকে ঘুড়ি, নাটাই ও সুতার কী কী বৈশিষ্ট্য দেখে কেনা হচ্ছে, জানতে চাওয়া হলে সে বলে, ‘ঘুড্ডির কান আর ফিনিশিং দেখে কিনতে হয়।

যে ঘুড্ডির ফিনিশিং ঠিকঠাক, সেটা ভালো উড়বে। আর ঘুড্ডি ভাগ্য ভালো হলে উড়বে, না হলে উড়বে না। এ জন্য একসঙ্গে এতগুলো কিনছি। আগে কাঠের নাটাই কিনত সবাই, এগুলো বেশি দিন থাকে না, এখন এগুলো চলেও কম। আমরা এবার স্টিলেরটা নিলাম। সুতার মধ্যে সম্রাট সুতা বেশি ভালো, এটাই নিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

শাঁখারীবাজারের দোকানগুলোয় বিক্রি হচ্ছে বাহারি সব ঘুড়ি। চশমাদার, কাউটাদার, চিলদার, রুমালকাট, স্টার, পক্ষীরাজ, প্রজাপতি, চক্ষুদার ইগল, চারবোয়া, দুবোয়া, টেক্কা, মালদার বিভিন্ন রঙের দেশি ও লেজুড়ে ঘুড়ি ছাড়াও আছে ভারত ও চীন থেকে আসা ঘুড়ি। আকৃতিভেদে ঘুড়ির দাম ভিন্ন। ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকা আবার বেশ বড় সাইজেরগুলো ১০০ থেকে ৩০০ টাকা করেও বিক্রি হচ্ছে। কাঠের নাটাই, লোহার নাটাই, বাটিওয়ালা নাটাইসহ বেশ কয়েক ধরনের নাটাইও মিলছে ঘুড়ির পাশাপাশি।

ইদানীং স্টিল ও লোহার নাটাইগুলোর চাহিদা বেড়েছে তুলনামূলক। কারণ, একটি কিনলে অনেক দিন টেকে। তা ছাড়া বাঁশ ও কাঠের নাটাইয়ের মধ্যে বাটিসহ নাটাইগুলোর চাহিদা বেশি। জানান দোকানিরা। কারণ, বাটি হাতে ঘুরিয়ে টানতে সহজ হয়। নাটাইগুলোর দাম পড়ে প্রকারভেদে ৭০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। তবে মাঞ্জা দেওয়া সুতার যে প্রচলন ছিল, তাতে ভাটা পড়েছে। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসঙ্গে বসে মাঞ্জা দেওয়ার সময় পাওয়া যায় না এখন।

তাই রেডিমেড সুতাগুলোই কিনছে সবাই। বিকেলের আগে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে সারা বিকেল পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে চলবে ঘুড়ি ওড়ানো, কাটাকাটির মহোৎসব। সাকরাইন উৎসবকে মূলত ঐক্য ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

ছবি: আশিকুর রহমান

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০০
বিজ্ঞাপন