রাশিয়ানরা যে ৪ কারণে সহজে হাসে না
শেয়ার করুন
ফলো করুন

রাশিয়ায় কখনো ঘুরতে গেলে অদ্ভুত এক বিষয় আপনার চোখে নিশ্চয়ই পড়েছে—লোকজন খুব একটা হাসছে না। তারা প্রায় সব সময়ই গম্ভীর, যেন তাদের জীবনে হাসি কিংবা আনন্দের কোনো জায়গা নেই। মনে কি প্রশ্ন জেগেছে কখনো রাশিয়ানরা কেন এত গোমড়ামুখো? কেন তারা সহজে হাসতে চায় না?

রাশিয়ানরা কেন এত গোমড়ামুখো? কেন তারা সহজে হাসতে চায় না?
রাশিয়ানরা কেন এত গোমড়ামুখো? কেন তারা সহজে হাসতে চায় না?

এ ধরনের আচরণ কিন্তু শুধু ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের জন্য নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে অনেক গভীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক কারণ। রাশিয়ার গোমড়ামুখী মানুষদের হাসি না পাওয়ার পেছনে আছে তাদের শতাব্দীর পর শতাব্দীর ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রভাব।

বিজ্ঞাপন

রাশিয়ানদের এই গোমড়ামুখের পেছনের কারণগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কেও ধারণা নিতে হবে। চলুন জেনে নেই রাশিয়ানরা কেন সহজে হাসে না।

এই দেশে সৌজন্য দেখানোর জন্য হাসি ব্যবহৃত হয় না

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতির মধ্যে এই বিষয় বেশ সাধারণ ব্যাপার হলেও রাশিয়ানদের জন্য খানিক ভিন্ন। রাশিয়ায় সৌজন্য প্রকাশে কেউ হাসে না। বরং, তারা মনে করে সব সময় হাসিমুখে থাকা অনেক সময় ভুল বার্তা দিতে পারে। তাদের ধারণা, কেউ কিছু লুকাতে বা আসল অনুভূতি প্রকাশ করতে না চাইলেই অকারণে হাসে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো রাশিয়ার সমাজকাঠামো। তাদের সমাজে একেক জন একেক ক্লাস বা শ্রেণির। কেউ উঁচু শ্রেণির আবার কেউ নিচু শ্রেণির। জেনে অবাক হবেন নিচু শ্রেণির কেউ কোনো ভুল করলে উঁচু শ্রেণির কেউ তাদের শাস্তিও দিতে পারে। তাদের অকারণের হাসি কারও কাছে অগ্রহণযোগ্য হলে মিলতে পারে শাস্তিও। তাই শাস্তির মুখোমুখি যাতে না পড়তে হয়, এই ভেবেও তারা অকারণে হাসে না।

রাশিয়ায় পরিস্থিতি বুঝেই আচরণ করাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়
রাশিয়ায় পরিস্থিতি বুঝেই আচরণ করাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়

তারা পরিস্থিতি বুঝেই আচরণ করে

রাশিয়ায় পরিস্থিতি বুঝেই আচরণ করাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে তারা কোনো ব্যবসায়িক বৈঠকে যেখানে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে কিংবা কারও সঙ্গে প্রথমবারের মতো পরিচয় হচ্ছে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত হাসাহাসিকে সঠিক মনে করে না। তাদের ধারণা, এতে মনে হতে তারা ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে দেখছে না বা প্রতিপক্ষকে সম্মান করছে না। এমনকি এই দেশে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী বা রেস্তোরাঁর ওয়েটারদের কাজের সময় হাসিমুখে থাকে না। কারণ, তাদের কাছে কাজ গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই পরিবেশে হাসি অনুচিত বলে ধরা হয়। রাশিয়ায় শিক্ষকেরাও স্কুলে শিশুদের এই ব্যাপার শেখান।

বিজ্ঞাপন

অপরিচিতের সঙ্গে হাসাহাসি তারা পছন্দ করে না

আমরা যেমন পরিচিত–অপরিচিত সবার সঙ্গে হেসে হেসেই কথা বলি। রাশিয়ানরা এই কাজ করে না। তারা অপরিচিতদের খুব একটা হাসিমুখে অভ্যর্থনা করে না। তবে তারা একেবারেই যে হাসে না তা কিন্তু নয়। তারা পরিচিতদের সঙ্গে হাসাহাসি ঠিকই করে পরিস্থিতি বুঝে। তবে অপরিচিত কোনো রাশিয়ানের দিকে কখনো তাকিয়ে হাসলে কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নেবে না কখনোই। বরং তারা এটিকে গুরুত্বসহকারে দেখবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করেই বসবে, ‘আপনি কি আমাকে চেনেন?’ আরেকটি মজার বিষয় হলো যদি কোনো রাশিয়ান আপনার সঙ্গে হাসতে শুরু করে তবে বুঝে নিতে হবে সে আপনাকে মন থেকেই আপন ভেবে নিয়েছে।

অপরিচিতের সঙ্গে হাসাহাসি তারা পছন্দ করে না
অপরিচিতের সঙ্গে হাসাহাসি তারা পছন্দ করে না

মিথ্যা হাসিতে তারা বিশ্বাসী নয়

রাশিয়ায় হাসি সাধারণত প্রকৃত সুখ বা আন্তরিক সম্পর্কের প্রতিফলন। এটি সৌজন্যের জন্য ব্যবহৃত হয় না। যখন একজন রাশিয়ান আপনার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে, তখন বুঝতে হবে সে সত্যিই ভালো মেজাজে আছে বা আপনার প্রতি সত্যিকার অর্থেই যত্নশীল।

ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৭: ০১
বিজ্ঞাপন