আপনার কি এমন কখনো হয়েছে যে কোনো এক কারণে অফিসে আপনার বসের ওপর প্রচন্ড রেগে গিয়েছেন আপনি? আমাদের সবার জীবনেই কিন্তু এমন হতেই পারে। রাগ একটি নেগেটিভ ইমোশন। তবে একে ম্যানেজ করতে হবে পজিটিভভাবে। মনে রাখবেন, এটা আপনার বন্ধুদের আড্ডা বা পাড়ার চায়ের দোকান নয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি ভুল পদক্ষেপের জন্য আপনাকেই মূল্য চোকাতে হতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্রে এমন অপ্রিয় পরিস্থিতি হলে কীভাবে তা সামাল দেবেন, তা মাথায় রাখা উচিত।
অফিসে যদি আপনার বসের ওপর কোনো কারণে রাগ হয়, তখন সরাসরি রেগে প্রতিক্রিয়া দেখানোর বদলে শান্তভাবে ও গঠনমূলকভাবে বিষয়টা মোকাবিলা করাই সবচেয়ে ভালো। কথাগুলো বলা খুব সহজ। কিন্তু মাথায় রাগ চাপলে বাস্তবে তা করা খুবই কঠিন। তারপরেও আমাদেরকে অফিস এটিকেট, প্রটোকল আর পেশাদারিত্বের খাতিরে এই বিষয়গুলো অনুশীলন করতে হবে।
নিজের রাগ ও রাগের কারণ নির্ণয় করুন ও বুঝে নিন
রাগ লাগছে সেটা স্বীকার করুন। নিজেকে বোঝান, হ্যাঁ, আমি রেগে আছি। এটা স্বাভাবিক। এটিই আসলে অফিসে ভালোভাবে অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট করার প্রথম ধাপ।
রাগের কারণ খুঁজুন
ঠিক কোন কথাটা বা ঘটনার কারণে আপনি বিরক্ত হলেন? ট্রিগারটা খুঁজে বের করতে পারলে অন্তত ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হওয়া যাবে।
তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেবেন না
মাথা গরম থাকলে কাউকে কিছু বলবেন না। একটু সময় নিন।
নিজেকে শান্ত করুন
একটু দূরে যান যদি সম্ভব হয়। কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন বা কোথাও একা বসে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিন
কাউকে মন খুলে বলুন সব
খুব কাছের ও বিশ্বাসযোগ্য কাউকে ব্যাপারগুলো বললে মন হালকা হয়। আর তিনি যেন কোনোভাবেই আপনার সহকর্মী না হন। অফিসে কাউকেই শতভাগ বিশ্বাস করতে হয় না। এটাই বাস্তব।
লিখে ফেলুন যা মনে আছে
কী বলবেন বা কী মনে হচ্ছে, সেটা খসড়া করে লিখলে মাথা পরিষ্কার হয়। তখন উলটোপাল্টা কিছু বলার সম্ভাবনা কমে আসে।
সমস্যাটা সংশ্লিষ্ট কাউকে বা আপনার বসকেই শান্তভাবে বোঝান
অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে একটা মিটিং ঠিক করুন। বসের সঙ্গে একা বসে কথা বলার সময় চান। নয়তো পুরো বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিশিয়াল বা বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলুন।
প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলুন
আবেগভরা অভিযোগের কোনো মূল্য নেই অফিসে। যুক্তি দিয়ে কথা বলুন। উদাহরণ সহযোগে নিজের কথা বোঝান।
শ্রদ্ধাশীল থাকুন
কথা বলার সময় ঠান্ডা মাথায় বলুন। দোষারোপ করে লাভ নেই। সমাধান খুঁজে বের করুন।শুনতেও শিখুনআলোচনার সময় বসের কথা মন দিয়ে শুনুন। বসের দিকটাও বুঝতে চেষ্টা করুন। কথা থামিয়ে বা বারবার কথায় বাধা দিয়ে তর্ক করলে হিতে বিপরীত হবে।
যদি রাগের মাথায় কিছু বলে ফেলেন
দায় নিন। বলুন,'আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারিনি, দুঃখিত'। মন থেকে দুঃখ প্রকাশ করুন। ছোট করে হলেও আন্তরিকভাবে বলুন।
নিজেকে ঠিক করার চেষ্টা করুন।
পরবর্তীতে রাগ নিয়ন্ত্রণে কী করবেন, সেটা ভেবে রাখুন।
এই বিষয়গুলো অনুশীলন করুন। চেষ্টা করলে রাগ নিয়ন্ত্রণ শেখা সম্ভব।
শেষ কথা
রাগ হওয়া দোষের না, কিন্তু রাগ সামলানোর ধরনটাই আপনার পেশাগত ভাবমূর্তি তৈরি করে। ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিষয়টি সামলাতে পারলে আপনার ও বসের সম্পর্ক আরও ভালো হতে পারে। তাই বসের ওপরে প্রচন্ড রাগ হলেও এভাবে ধাপে ধাপে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করুন। এই অফিসে বসের সঙ্গে ঝামেলা করে না হয় ইস্তফা দিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা আপনার পেশাদারিত্বের দুর্বলতা হয়ে দাঁড়াতে পারে পরবর্তী চাকরিতেও। তবে সব ব্যাপারে সমঝোতা করা ঠিক নয়। অন্যায়, অনাচার বা অনৈতিক ব্যাপারে জোরালোভাবে নিজের মত প্রকাশ করুন, প্রতিবাদ করুন আর প্রয়োজন হলে আইনি ব্যবস্থা নিন।
সূত্র: থট ক্যাটালগ
ছবি: পেকজেলস