অবিশ্বাস্যভাবেই বেঁচে ফিরেছেন বিশ্বাস রমেশ। আমরা সবাই জানি কাল ভারতের আহমেদাবাদে ঘটেছে এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা। ২৩০ যাত্রীর বাকি সবাই মারা গেলেও বেঁচে ফিরেছেন একমাত্র বিশ্বাস রমেশ। এখন তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর কাছে পাওয়া বোর্ডিং পাস বলছে, তিনি বসা ছিলেন প্লেনের ১১ এ নম্বর সিটে। এটি বিমানের একটি জানালাহীন মাঝামাঝি অংশের সিট। সুতরাং, অনেক যাত্রীর কাছেই এই সিটটি দমবন্ধকর এবং বিশেষ অপছন্দের। বিভিন্ন গবেষণা বলে এই অংশের সিটগুলোতে মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। অথচ এই সিটই গতকাল হয়ে উঠেছিল একজনের 'লাইফ সেভার'।
ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ। তাঁর বয়স চল্লিশের কোঠায়। এত ভয়ংকর প্লেন ক্র্যাশে তাঁর বেঁচে যাওয়ার কারণ অলৌকিক হলেও, তাঁর সিটটির অবদান অস্বীকার করা যাচ্ছে না। এই ঘটনা বদলে দিচ্ছে বিমানের 'সবচেয়ে খারাপ' সিট নিয়ে প্রচলিত ভাবনা।ঘটনাটি ঘটে এয়ার ইন্ডিয়া এআই ওয়ান সেভেন ওয়ান ফ্লাইটে। বোয়িং ৭৮৭ মডেলের এই উড়োজাহাজের গন্তব্য ছিল লন্ডন। তবে উড্ডয়নের মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড পরই তীব্র শব্দের সঙ্গে একটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্লেনটি ধ্বসের শিকার হয়।
রমেশ বলেন ,কী করে বেঁচে গেলেন তিনি নিজেও জানেন না। চোখ খুলে উঠে তিনি দৌঁড়াতে থাকেন। এরপর আশেপাশের মানুষ তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলেন। তবে রমেশের ভাই অজয়ের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।এই ঘটনায় প্লেনে অবস্থানরত অন্য যাত্রীদের সকলেই মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রমেশ একমাত্র ব্যক্তি যিনি বেঁচে ফিরেছেন। সবার মনে প্রশ্ন জাগছে এ নিয়ে। বিস্ময়ও। কারণ ১১-এ সিটটিকে সবচাইতে খারাপ সিট হিসেবে ভেবে এসেছেন সবাই এতদিন।গবেষণা অনুসারে, বিমানের পেছনের চল্লিশ শতাংশ যাত্রীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সামনের যাত্রীদের চেয়ে বেশি। তবে এটি একটি মোটা দাগের ধারণা।
২০১২ সালে এম আই টি ও ডিসকভারি চ্যানেল একটি যাত্রীবাহী বিমান ক্র্যাশ সিমুলেশন করেছিল। এতে তারা চমকপ্রদ সব তথ্য পায়। যেমন, সিটবেল্ট পরা এবং ব্রেস পজিশন নেওয়া (মাথা নিচে রেখে হাটু জড়িয়ে ধরাকে বোঝায়) দুর্ঘটনার সময় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে ,বিমানের মধ্যবর্তী অংশে বসা যাত্রীরা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন!
সিট ১১ এ তে জানালা না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই সকলে এটিকে পারতে এড়িয়ে চলেন। বোয়িং ৭৩৭ ও ৭৮৭-এর মাঝখানে এয়ার কন্ডিশনিং ডাক্ট থাকার কারণে অনেক সময় জানালা থাকে না। মাঝ বরাবর থাকায় নামতেও দেরি হয় ,তাই যাত্রীরা এই সিট পছন্দ করেন না।
এম আইটির বিশেষজ্ঞ জন হ্যান্সম্যান এ ব্যাপারে বলেন , 'সাধারণত বিমান দুর্ঘটনায় সামনের অংশটি শক অ্যাবজর্বার হিসেবে কাজ করে, ফলে পিছনের সিট তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।'
তবে আরেক গবেষক ক্যারি গ্রান্ট বলেন 'নিরাপদ সিট বলে কিছু নেই। নিরাপত্তা নির্ভর করে স্পট, অ্যাঙ্গেল ও গতির ওপর'।
এভিয়েশন সিকিউরিটি কনসালট্যান্ট ফার্গুসন জানান, বিমানে ওঠার পর সবচাইতে কাছের এক্সিট আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরি। আর বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে রমেশ ইমার্জেন্সি এক্সিট দিয়েই লাফ দিয়েছিলেন ক্র্যাশ হওয়ার আগে। যদিও তিনি এখনও সেসব স্পষ্ট করে মনে করে বলতে পারছেন না।
আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা আই এ টি এর ২০২৪ সালে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৮,৮০০০ ফ্লাইটে মাত্র ১টি দুর্ঘটনা ঘটে এবং আকাশপথে ভ্রমণ এখনও সবচেয়ে নিরাপদ। তবে দুর্ঘটনার ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিটি দুর্ঘটনার ধরণ আলাদা।রমেশের ফিরে আসাটা রীতিমতো এক অলৌকিক ঘটনা। পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা ব্যাখ্যা করা যায় না। আর প্রচলিত ধারণা ও গবেষণার ফলাফল উলটে যাওয়ায় তার সিট ১১ এ নিয়েও তাই চলছে তুমুল আলোচনা। এরপর বিমানে ভ্রমণ করার সময় কি তবে সবাই এই সিটটিই আগে বেছে নেবেন?
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ট্র্যাহেল অ্যান্ড লেজার ম্যাগাজিন
ছবি: ইন্সটাগ্রাম