শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে থাকলে দূর হবে ৩টি গভীর মানসিক সমস্যা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

দিনের শুরুটা হয় ট্রাফিকের শব্দে, দুপুর যায় কাজের চাপে, আর রাততো মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখেই শেষ—এটিই আজকাল আমাদের শহুরে জীবনের সংজ্ঞা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ছুটোছুটির মধ্যে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে মানসিক প্রশান্তি, বেড়ে গেছে উদ্বেগ, ক্লান্তি ও একাকীত্ব। অথচ একটু প্রকৃতির সান্নিধ্যে, কিছুটা শান্ত পরিবেশে নিজের সঙ্গে সময় কাটালেই কিন্তু অনেক সমস্যা এমনিতেই দূর হয়ে যায়। এমন পরিবেশ আর কোথাও নয় শুধু গ্রামেই সম্ভব। শহর মানেই যেদিকেই চোখ যায় শুধু ইট-কাঠ-পাথর। জেনে অবাক হবেন, শহরের কোলাহল ছেড়ে গ্রামে গিয়ে বসবাস করলে কয়েকটি সাধারণ মানসিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নিমিষেই। বলা যায়, শহর ছেড়ে মাঝে মাঝে গ্রামে গিয়ে থাকলে বিভিন্ন গভীর মানসিক সমস্যা দূর হতে পারে।

১.মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস পায়

শহরে থাকলে মাথার ভেতর সারাক্ষণ বাজতে থাকে এক অদৃশ্য ঘড়ির কাঁটা—ডেডলাইন, মিটিং, ট্রাফিক, বিল। এসব চাপ মনের ভেতর জন্ম দেয় এক ধরনের অনিরাপত্তা আর উদ্বেগ। তবে গ্রামে এসব নেই। গ্রামে সকাল শুরু হয় পাখির ডাকে, জানালার বাইরে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, হালকা কুয়াশা আর নির্মল বাতাস।সকালটা এখানে শহরের মতো নয়

শহর পেরিয়ে গ্রামের পথেই পাওয়া যায় প্রকৃতির সান্নিধ্য
শহর পেরিয়ে গ্রামের পথেই পাওয়া যায় প্রকৃতির সান্নিধ্য
সকালটা এখানে শহরের মতো নয়
সকালটা এখানে শহরের মতো নয়

সকালটা এখানে শহরের মতো নয়—এখানে নেই ট্রাফিকের আওয়াজ, নেই হর্নের বিরক্তি কিংবা ক্লান্তিকর ছুটোছুটি। এ যেন এক শান্তির ঠিকানা। সময় যেন এখানে একটু থেমে থাকে, কাজের চাপেও থাকে না সেই অস্থিরতা। জাপানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহ বা মাসে অন্তত একবার প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

২. হতাশা দূর হয়

শহরের দুনিয়ায় আমরা প্রায়ই অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করি—কার কী আছে, কে কোথায় পৌঁছেছে, কে কত এগিয়ে। এই তুলনা করতে করতে এক সময় হতাশা জীবনে জেঁকে বসে। আমরা নিজেকেই ভালোবাসতে ভুলে যাই। আমাদের মনেই থাকে না জীবন খুব ছোট। প্রতিটি মূহুর্ত উপযোগ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা জীবন আমাদের শেখায় কীভাবে নিজেকে ভালোবাসতে হয়
প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা জীবন আমাদের শেখায় কীভাবে নিজেকে ভালোবাসতে হয়
প্রতিটি মূহুর্ত উপযোগ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিটি মূহুর্ত উপযোগ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

আর  গ্রামে শহরের মতো এমন চাপে পড়তে হয় না। বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা জীবন আমাদের শেখায় কীভাবে নিজেকে ভালোবাসতে হয়। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজেই পাওয়া যায় তৃপ্তি, ফিরে আসে আত্মবিশ্বাস, ঘুচে যায় হতাশা।

বিজ্ঞাপন

৩. মন ও শরীরের গভীর সংযোগ গড়ে ওঠে

শহরের একঘেয়ে জীবনে মন ও শরীর যেন সংযোগ হারিয়েই ফেলে। তবে গ্রামে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির স্পর্শে থাকা যায়—কখনো মাটির গন্ধ, কখনো ধানের শিষের স্পর্শ। এসব আমাদের শরীর ও মনের মধ্যে তৈরি করে এক ধরনের ভারসাম্য। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোতে দেহ ও মন সচেতনভাবে একে অপরের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এতে করে মানসিক সুস্থতা যেমন বাড়ে, তেমনি জীবন হয় আরও পরিপূর্ণ।

সমসময় না থাকতে পারলেও মাঝে মাঝে গ্রামে যাওয়া আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো
সমসময় না থাকতে পারলেও মাঝে মাঝে গ্রামে যাওয়া আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো

তবে, শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার চিন্তা করলেই প্রথম প্রশ্ন আসে জীবিকা নিয়ে। কিন্তু, গ্রাম মানেই পিছিয়ে পড়া নয়। এখন টেলিওয়ার্ক, অনলাইন বিজনেস, রিসোর্ট ব্যবস্থাপনা বা কৃষি-প্রযুক্তি মিলিয়ে কাজের নতুন পথ তৈরি হয়েছে। জীবিকা বদলের মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের নতুন অর্থ। তাই তো মাঝে মাঝে অন্তত সময় বের করে কিছুদিন গ্রামে কাটিয়ে এলে দূর হতে পারে গভীর সব মানসিক সমস্যা।

সূত্র: ফার্মিংডেল অবজারভার

ছবি: অভিনেতা মনোজ প্রামানিকের ইন্সটাগ্রাম

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ০৫: ৪৭
বিজ্ঞাপন