
সৌদি আরবের বাসিন্দাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই শান্ত ও স্নিগ্ধ উপকূলীয় শহর হিসেবে পরিচিত আল খোবার এখন ধীরে ধীরে স্থান করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে, নতুন গন্তব্য হিসেবে। আধুনিক কর্নিশ, বৈচিত্র্যময় খাবারের জগৎ এবং ক্রমবর্ধমান সাংস্কৃতিক ও বিনোদনের আয়োজন মিলিয়ে খোবার রূপ নিচ্ছে এক প্রাণবন্ত ও আধুনিক সৈকত শহরে; এর মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয় আজকের তরুণ, উদার ও আত্মবিশ্বাসী সৌদিকে।

বিশেষ করে বাংলাদেশি পরিবারভিত্তিক পর্যটক, তরুণ ভ্রমণপিপাসু এবং ওমরাহ–পরবর্তী ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য খোবার ক্রমেই হয়ে উঠছে সৌদি আরবের অন্যতম আকর্ষণীয় ও প্রশান্ত গন্তব্য; এখানে উপভোগ করা যায় উপকূলীয় জীবনধারা, বৈশ্বিক স্বাদ আর আধুনিক সৌদি আতিথেয়তার অপূর্ব সমন্বয়।
খোবারের কর্নিশ সৌদি আরবের অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্রতীরবর্তী প্রমেনাড। সাম্প্রতিক সময়ে এটি পেয়েছে এক প্রাণবন্ত রূপ। একসময়ের শান্ত, নারকেলগাছঘেরা হাঁটার পথ এখন রূপ নিয়েছে জীবন্ত উৎসবমুখর এলাকায়; এখানে সপ্তাহান্তে মুখর হয় উৎসবে; লাইভ মিউজিক, আন্তর্জাতিক খাবারের স্টল, ইন্টার্যাকটিভ শিল্পকর্ম ও পরিবারবান্ধব নানা আকর্ষণে জমজমাট হয়ে ওঠে এলাকা।

নানা মৌসুমি আয়োজন কর্নিশে এনেছে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য। স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি হস্তশিল্পের বাজার, খোলা আকাশের নিচে সৌদির প্রতিভাধর শিল্পীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খাবার, কেনাকাটা ও বিনোদনের বিস্তৃত সুযোগ—সব মিলিয়ে কর্নিশ এখন আর শুধু বিশ্রামের জায়গা নয়; এ এক অভিজ্ঞতামুখর গন্তব্য।
এই পরিবর্তনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে। সম্প্রতি খোবারকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে উন্নত শহরগুলোর’ একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা প্রমাণ করে বহু বিলিয়ন ডলারের নগর উন্নয়ন উদ্যোগে শহরটির দ্রুত ও সুসংগঠিত অগ্রগতি।
খোবারের নতুন সাংস্কৃতিক পরিচয়ের কেন্দ্রে রয়েছে এর ফুড মার্কেট—একটি সত্যিকারের বৈশ্বিক রান্নার মেলা। এখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রন্ধনশিল্পীরা পরিচালনা করছেন অসংখ্য স্টল; সেখানে পরিবেশিত হয় নানা দেশের খাবার—
এখানে যেমন মিলবে সৌদি ঐতিহ্যবাহী পদ কাবসা, জারিশ, নাজদি স্বাদের স্মোকড ব্রিসকেট, তেমনি পাওয়া যাবে এশীয় স্বস্তির খাবার—বাংলাদেশি নাশতা, ফিলিপাইনের প্রিয় খাবার, জাপানি স্ট্রিট ফুড ও কোরিয়ান ফিউশন; আবার মধ্যপ্রাচ্য ও
ভূমধ্যসাগরীয় স্বাদ—শাওয়ার্মা, তুর্কি গোজলেম যেমন উপভোগ করা যাবে তেমনি নেওয়া যাবে লাইভ কুকিং স্টেশনে তৈরি আন্তর্জাতিক গুমে খাবারও; যেখানে আগুন, ঘ্রাণ আর শিল্প একসঙ্গে দর্শককে মুগ্ধ করে।
রসনাপ্রেমী বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য এটি এক বিশেষ আকর্ষণ। পরিচিত স্বাদের পাশে নতুন স্বাদ আবিষ্কারের সুযোগ খোবারকে পরিবার ও তরুণদের জন্য করে তুলেছে সহজলভ্য অথচ রোমাঞ্চকর খাদ্যগন্তব্য।
উন্নত সড়ক যোগাযোগ ও কার্যকর অভ্যন্তরীণ বিমানব্যবস্থার কারণে খোবার দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওমরাহ–পরবর্তী ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে—বিশেষ করে বাংলাদেশি পর্যটকদের মধ্যে। মক্কা ও মদিনায় ইবাদত শেষে অনেকেই চান শান্ত ও অর্থবহ একটি সম্প্রসারিত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। খোবার সেখানে আদর্শ; কারণ—
শান্ত উপকূলীয় পরিবেশ, বিশ্রাম ও আত্মসংযোগের জন্য উপযুক্ত, মানসম্মত হোটেল ও সমুদ্রদৃশ্য রিসোর্ট, দাম্মাম, কাতিফ ও বাহরাইনে সহজ যাতায়াত আর বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে পরিচিত ও উষ্ণ আতিথেয়তা;
এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলে প্রবাসী বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যায় উপস্থিতি ভ্রমণরত পরিবারগুলোর জন্য এনে দেয় পরিচিত পরিবেশের অতিরিক্ত স্বস্তি। উৎসবমুখর পরিবেশের সঙ্গে এই আরামদায়ক আবহ খোবারকে ওমরাহ ভ্রমণের এক পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক সম্প্রসারণে পরিণত করছে।

খোবারের বিকাশ সৌদির বৃহত্তর পর্যটন রূপান্তরের প্রতিফলন। তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিনোদন, বৈশ্বিক গল্প বলার ধারা এবং ঐতিহ্যনির্ভর সৃজনশীলতা শহরটির চরিত্র বদলে দিচ্ছে। পপ-আপ গ্যালারি, ডিজিটাল আর্ট, ইন্টার্যাকটিভ উপকূলীয় স্থাপনা, ট্রেন্ডি ক্যাফে ও কনসেপ্ট স্টোর—সব মিলিয়ে খোবার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে সৌদি উপকূলীয় শহরের ধারণা।
ভবিষ্যৎ ওয়াটারফ্রন্ট সম্প্রসারণ, লাইফস্টাইল ডিস্ট্রিক্ট ও আধুনিক পাবলিক স্পেসের মতো বড় প্রকল্পগুলো খোবারকে গড়ে তুলছে সৌদি আরবের অন্যতম গতিশীল পর্যটন ইঞ্জিন হিসেবে।

দ্রুত আধুনিকায়নের মধ্যেও খোবার তার ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে রেখেছে। ঐতিহ্যবাহী বাজারে এখনো মেলে মসলার ঘ্রাণ, হস্তশিল্পের ঝিলিক। স্থানীয় ক্যাফেগুলোতে প্রজন্মান্তরে চলে আসা রেসিপিতে তৈরি হয় আরবি কফি। প্রতিদিনের মাছ ধরা শহরটিকে যুক্ত রাখে তার সামুদ্রিক শিকড়ের সঙ্গে।
পুরোনো ও নতুনের এই সুষম সহাবস্থানই খোবারের আলাদা পরিচয়—যেখানে ঐতিহ্য আধুনিকতার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং তার সমৃদ্ধি।
খোবারকে আজ বিশেষ করে তুলেছে কোনো একক আকর্ষণ নয়, বরং পুরো অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে—নতুন রূপের কর্নিশ, বৈশ্বিক মানের ফুড মার্কেট, শিল্প ও বিনোদনের আয়োজন, সপ্তাহান্তের উৎসবের সঙ্গে আছে তরুণ্যের প্রাণময় উচ্ছ্বাস।
বাংলাদেশি পরিবারগুলোর জন্য নিরাপদ, সুন্দর ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ গন্তব্য হতে পারে খোবার।

তরুণ ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করবে সুর, উদ্দীপনা ও উপকূলীয় জীবনধারা।
ওমরাহ–পরবর্তী ভ্রমণকারীরা পাবেন শান্ত অথচ অর্থবহ এক সম্প্রসারিত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।
খোবার সিজন বর্তমানে সৌদির এক নতুন পরিচয়—যেখানে উষ্ণতা, সৃজনশীলতা ও উদ্যাপনের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সে দেশের এই পূর্ব উপকূল।
ছবি: সৌদি টুরিজম অথিরিটি