১০০-তে পা দিলেন জাপানের সবচেয়ে বর্ষীয়ান সুশিশিল্পী, কী তাঁর এই দীর্ঘ জীবনের রহস্য
শেয়ার করুন
ফলো করুন

এই দর্শনকেই জীবন্ত করে তুলেছেন জাপানের কিংবদন্তি সুশি শেফ জিরো ওনো, যিনি সম্প্রতি পা রেখেছেন ১০০ বছরে।

সুশির জগতে এক জীবন্ত কিংবদন্তি

টোকিওর গিনজার এক ছোট্ট বেসমেন্টে মাত্র দশটি আসন। সেখানেই ওনো গড়ে তুলেছেন বিখ্যাত রেস্তোরাঁ সুকিয়াবাশি জিরো। যা একসময় টানা এক যুগ ধরে তিনটি মিশেলিন স্টার ধরে রেখেছিল। ২০১১ সালের তার জীবনী নিয়ে তৈরি হয় ডকুমেন্টারি ‘জিরো ড্রিমস অব সুশি’। যা তাকে বিশ্বজোড়া পরিচিতি এনে দেয়। যেখানে দেখা যায় একজন মানুষ কীভাবে নিজের কাজকে শিল্পে পরিণত করেছেন।

জাপানের কিংবদন্তি সুশি শেফ জিরো ওনো
জাপানের কিংবদন্তি সুশি শেফ জিরো ওনো

সুশির টেবিলে ওবামাও

ওনোর সুশির খ্যাতি পৌঁছে গেছে বিশ্বনেতাদের কানেও। ২০১৪ সালে জাপান সফরে আসেন সে সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সঙ্গে ছিলেন জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে আগেই ওনোর রেস্তোরাঁ সুকিয়াবাশি জিরো-তে বুকিং চাওয়া হয়। কিন্তু ওনো সোজাসাপ্টা বলেন, “দুঃখিত, আজ রাতের সব টেবিল পূর্ণ।”

পরে অবশ্য দুই নেতার জন্য সময় একটু পেছানো হয়। এবং তারা বসেন ওনোর সুশির টেবিলে। ওনো পরে এক সাক্ষাৎকারে হাসিমুখে স্মরণ করেন, “ওবামা সুশি খাচ্ছিলেন এবং খুব উপভোগ করছিলেন। আমি সত্যিই খুশি হয়েছিলাম।”

সবচেয়ে ভালো ওষুধ হলো কাজ

সম্প্রতি জাপানের “রেসপেক্ট ফর দা এইজড ডে” উপলক্ষে টোকিও গভর্নর যখন তাকে তার সুস্থতার রহস্য জিজ্ঞাসা করেন, ওনো শান্তভাবে বলেন,
“আমি এখন আর প্রতিদিন রেস্তোরাঁয় যেতে পারি না। কিন্তু ১০০ বছর বয়সেও যতটা সম্ভব কাজ করি। আমার মতে, সবচেয়ে ভালো ওষুধ হলো কাজ।”
তার কথার মধ্যেই ফুটে ওঠে জীবনের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শৃঙ্খলা। কাজ তার কাছে কোনো বাধ্যবাধকতা নয়। বরং ধ্যান ও প্রার্থনার মতো কিছু।

বিজ্ঞাপন

পুর্নতার পথে অনন্ত যাত্রা

ওনো কর্ম জীবন শুরু করেন মাত্র সাত বছর বয়সে, স্থানীয় এক রেস্তোরাঁয় শিক্ষানবিশ হিসেবে। ২৫ বছর বয়সে হন পূর্ণাঙ্গ সুশি শেফ। ১৯৬৫ সালে নিজের রেস্তোরাঁ খুলেন। তারপর থেকে তার একটাই লক্ষ্য,“নিখুঁত সুশি তৈরির পথে আরও একটু এগিয়ে যাওয়া।”

একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি এখনো নিখুঁত সুশি তৈরি করতে পারিনি। আমি কেবল এর চূড়ার দিকে উঠছি। কিন্তু কেউ জানে না চূড়াটা কোথায়।” বলা যায় এই অবিচল সাধনাই তাকে অনন্য করে তুলেছে।

সরল জীবনে সুখ

ওনোর জীবনের নিয়ম এখনো খুবই সহজ নিয়মিত হাঁটেন, অ্যালকোহল পান করেন না, সঠিকভাবে খান, আর প্রতিদিন কিছু না কিছু কাজ করেন। প্রিয় সুশির কথা উঠলে তিনি এখনো হাসিমুখে বলেন, “টুনা, কোহাদা আর আনাগো-এই তিনটাই আমার প্রিয়।”
তার বড় ছেলে ইয়োশিকাজু এখন রেস্তোরাঁ পরিচালনা করেন, তবে ওনো এখনো বিশেষ অতিথিদের জন্য নিজের হাতে সুশি বানান যতটা সম্ভব।

জীবনের শেষ পর্যন্ত শেখার পথিক

জিরো ড্রিমস অব সুশি’-এর পরিচালক ডেভিড গেলব বলেছিলেন, “ওনো আমার কাছে এক শিক্ষক, এক পিতৃসুলভ মানুষ। তিনি যতটা মহান, ততটাই বিনয়ী।” এমনকি শুটিংয়ের সময় যখন এক ঘণ্টা ধরে অক্টোপাস ম্যাসাজের দৃশ্য ধারণ চলছিল, ওনো চিন্তিত হয়ে বলেছিলেন, “তুমি বোধ হয় খুবই বিরক্ত হচ্ছো!” এই রসবোধ ও মানবিকতা হয়তো তার দীর্ঘজীবনের আরেকটি গোপন রহস্য।

‘জিরো ড্রিমস অব লাইফ’

এক শতাব্দী পেরিয়েও জিরো ওনো অবসর নেননি। বরং বলেন, “আমি আরও পাঁচ বছর কাজ করতে চাই”। হয়তো তার জন্য বয়স শুধু একটি সংখ্যা। তার বিশ্বাস, যত দিন মন জেগে থাকবে, তত দিন হাতও থামবে না। ওনোর দর্শন একটাই। শুধু খাদ্য বা ওষুধ জীবনকে টিকিয়ে রাখে না, বরং প্রতিদিনের কাজের প্রতি ভালোবাসাই জীবনকে দীর্ঘ করে। কাজের মধ্যেই আছে তাঁর আনন্দ, সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর জাদু।

ছবি: এপি

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন