আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর প্রাণশক্তির প্রকাশের সহজাত এক মাধ্যম নাচ। নৃত্যশিল্পও সেই আদিযুগ থেকে মানুষের সুকুমারবৃত্তি আর সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ, জাতি বা অঞ্চলের মানুষ নেই, যাদের নিজস্ব কোনো ঐতিহ্যবাহী নাচ নেই। তবে শুধু নান্দনিক ও সর্বজনীন শিল্পমাধ্যম নয়, শরীর ও মন ভালো রাখতে নাচ হতে পারে আমাদের যাপনেরই অংশ।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত নাচের অনুশলীন আমাদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে, এমনকি ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রুখতে পারে। অ্যারোবিক নাচের মতো ব্যায়াম মস্তিষ্কের স্মৃতি জমিয়ে রাখা কোষগুলোকে সজীব রাখে, এ রকমও প্রমাণ মিলেছে৷ নাচের স্টেপ ও মুদ্রাগুলো মনে রাখা ও তাল–লয় মেনে একের পর এক তা রূপ দেওয়া—মস্তিষ্কের ভালো ব্যায়াম হয় এতে।
নাচের ধরনধারণের শেষ নেই। আর বেশির ভাগ নাচেই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া করে নানা ভঙ্গিমায়। এতে শরীরের জোড় ও মাংসপেশিগুলো অনেকটাই স্থিতিস্থাপক হয়। স্ট্রেচিংয়ের সব সুফলই নাচে মেলে। এতে জোড়ের ব্যথাবেদনা, সংবেদনশীলতা ও জড়তা কেটে যায়। মাংসপেশিতে সহজে টান ধরে না বা মাসল পুল হয় না।
জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড জেরোনটলজির এক স্টাডিতে দেখা গেছে, সঙ্গীর সঙ্গে আনন্দে নাচের রুটিনে অংশ নিলে স্ট্রেস কমে। তবে সঙ্গে থাকতে হবে জুতসই সংগীত। নাচের তালে তালে সেরোটোনিন বাড়ে স্বাভাবিকভাবেই। তাই মুড ভালো হয়, আনন্দ জাগে মনে।
মারাত্মক ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা রোগীদের ওপরে করা এক স্টাডিতে তাদের একাংশকে নাচ অনুশীলন করতে বলা হয়। দেখা যায়, নাচ অভাবনীয় রকমের ভূমিকা রাখতে পারে ডিপ্রেশন কাটাতে।
বিভিন্ন কারণে বেড়ে যাওয়া ওজনে লাগাম টানতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে নাচের জুড়ি নেই। অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের তুলনায় নাচ অনেক উপভোগ্য। তাই হঠাৎ ছেড়ে দিতে ইচ্ছা হয় না। জার্নাল অব ফিজিকাল অ্যানথ্রোপোলজির এক আলোচিত নিবন্ধে ওজন হ্রাস করতে অ্যারোবিক নাচের ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর, এমন প্রমাণ দেখা গেছে।
নাচে লম্বা সময় ধরে মন ও শরীরকে খাটাতে হয়। এতে দারুণ ব্যায়াম হয়। মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা আর আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এসব মিলে কর্মশক্তিও বেড়ে যায় অনেকটা। লম্বা সময় ধরে পরিশ্রম করার ক্ষমতা বা স্ট্যামিনাও বাড়ায় নাচ। শরীরের ব্যালান্স বা ভারসাম্য সঠিক থাকে নিয়মিত নাচলে।
উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে আর হৃদ্রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নেই। আর দ্রুতলয়ের নাচ এ ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর হয়। এতে হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়ে। যাঁরা নিয়মিত নাচেন, তাঁদের স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হৃদ্রোগ কম হয় বলে বহু গবেষণায় দেখা গেছে।
ছবি: নৃত্যশিল্পী মোফাসসাল হোসেনের সামাজিক মাধ্যম