২২ ডিসেম্বর পৃথিবীর দীর্ঘতম রাত: নেপথ্যে আছে নানা পৌরাণিক গল্প
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পৃথিবী সোজা হয়ে ঘোরে না, একটু হেলে আছে। এই হেলে ঘোরার কারণেই বছরের একটা সময়ে সূর্য আমাদের গোলার্ধে সবচেয়ে কম সময় আলো দেয়। আজ সূর্য থাকবে
দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে ঝুঁকে, ফলে উত্তর গোলার্ধে (আমাদের এখানে) দিন হয় ছোট, রাত হয় দীর্ঘ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞানের ''কৌণিক'' রহস্য

অ্যাকজিয়াল টিল্ট
অ্যাকজিয়াল টিল্ট

পৃথিবী নিজের কক্ষপথে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকে। একে বলা হয় অ্যাকজিয়াল টিল্ট। আজ সূর্য ঠিক মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দিচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, আমরা উত্তর গোলার্ধের মানুষ যখন দীর্ঘতম রাত পালন করছি, দক্ষিণ গোলার্ধের (যেমন অস্ট্রেলিয়া বা আর্জেন্টিনা) মানুষের কাছে আজ কিন্তু দীর্ঘতম দিন এবং গ্রীষ্মের শুরু! ইতিহাস আর পৌরাণিক গল্প বলছে এই রাতটা মোটেও সাধারণ নয়। কিন্তু বিজ্ঞান আসার অনেক আগেই মানুষ এই রাতের ব্যাখ্যা খুঁজেছে পুরাণ, দেবতা আর কাহিনীর ভেতর। আর সেই গল্পগুলো একেবারে সাধারণ নয় কখনও বিষণ্ন, কখনও আশার, আবার কখনও আলোরও।

বিজ্ঞাপন

গ্রিক পুরাণ: সূর্যদেব হেলিওসের দুর্বলতা

গ্রিক পুরাণে সূর্যের দেবতা হেলিওস
গ্রিক পুরাণে সূর্যের দেবতা হেলিওস

গ্রিক পুরাণে সূর্যের দেবতা হেলিওস প্রতিদিন আকাশে তার রথ চালিয়ে পৃথিবীকে আলো দিতেন। কিন্তু বছরের এই সময়টায় হেলিওস নাকি দুর্বল হয়ে পড়তেন। মিথ অনুসারে এই দীর্ঘতম রাতে সূর্যদেবের শক্তি সবচেয়ে কমে যায়। অন্ধকার তখন
সবচেয়ে প্রভাবশালী। তবে এই রাত শেষ হলেই হেলিওস আবার শক্তি ফিরে পান, দিন ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। এই গল্পে দীর্ঘতম রাত মানে সূর্যের সাময়িক হার কিন্তু চূড়ান্ত পরাজয় নয়।

পার্সেফোনির পাতালপুরী যাত্রা

গ্রিক পুরাণের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাখ্যাগুলোর একটি আসে পার্সেফোনিকে ঘিরে। পার্সেফোনি ছিলেন বসন্তের দেবী। তিনি যখন পাতালপুরীর দেবতা হেডিসের কাছে থাকেন, তখন পৃথিবীতে নামে শীত, অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা। দীর্ঘতম রাতকে ধরা হতো সেই সময়, যখন পার্সেফোনি সবচেয়ে গভীরে পাতালপুরীতে অবস্থান করেন। এই রাতের পর থেকেই তার ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয় আর পৃথিবী ধীরে ধীরে আলো ও জীবনের দিকে ফিরতে থাকে।

নর্স পুরাণ: ইউল আর আলোর পুনর্জন্ম

ইউল নাইট
ইউল নাইট

নর্স বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পুরাণে এই রাত পরিচিত ছিল ইউল নাইট নামে। তাদের বিশ্বাস ছিল এই রাতে অন্ধকারের শক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, আর ঠিক এখান থেকেই জন্ম নেয় নতুন সূর্য। লোকজন আগুন জ্বালাত, বড় বড় কাঠ পোড়াত, যাতে সূর্যের শক্তি আবার ফিরে আসে। এখান থেকেই আজকের ক্রিসমাস লাইট, আগুন, আলোর উৎসবের ধারণা এসেছে বলে মনে করা হয়।

রোমান পুরাণ: স্যাটার্নালিয়া উৎসব

রোমানরা এই সময় উদযাপন করত স্যাটারনালিয়া
রোমানরা এই সময় উদযাপন করত স্যাটারনালিয়া

রোমানরা এই সময় উদযাপন করত স্যাটারনালিয়া কৃষি ও সময়ের দেবতা স্যাটার্নের সম্মানে। এই উৎসবে নিয়ম ভাঙা যেত, দাস ও প্রভুর ভেদাভেদ মুছে যেত, আনন্দ আর গানে মেতে উঠত সবাই। কারণ বিশ্বাস ছিল অন্ধকার যত গভীরই হোক, আলো ঠিকই ফিরে আসবে।

আদিবাসী ও প্রাচীন বিশ্বাস

ছিল আদিবাসী বিশ্বাস
ছিল আদিবাসী বিশ্বাস

অনেক প্রাচীন সংস্কৃতিতে বিশ্বাস ছিল দীর্ঘতম রাতে পর্দা পাতলা হয়ে যায় জীবিত আর অদৃশ্য জগতের মাঝে দূরত্ব কমে আসে। এই রাতে তাই গল্প বলা হতো, আগুন জ্বালানো হতো পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা হতো। কারণ এই রাত শুধু অন্ধকার নয়, এটি ছিল রূপান্তরের সময়।

কিভাবে উদযাপন করবেন এই রাত?

কাটিয়ে দিতে পারেন বই পড়ে
কাটিয়ে দিতে পারেন বই পড়ে

খুব বেশি আয়োজনের দরকার নেই। এক কাপ গরম কফি, একগাদা পপকর্ন এই তো যথেষ্ট। পছন্দের কোনো মুভি চালিয়ে দিন, বা নেটফ্লিক্সে স্ট্রেঞ্জার্স থিংক্সের কয়েকটা এপিসোড টানা দেখে ফেলতে পারেন। রাত তো লম্বাই আজ, তাড়া কিসের! আর যদি আপনি বইপ্রেমী হন, তাহলে আলো-আঁধারির এই রাতে হাতে তুলে নিতে পারেন কোনো রহস্য উপন্যাস বা মিথোলজিকাল বই। জানালার পাশে বসে, হালকা আলোয় পড়তে পড়তে দেখবেন দীর্ঘতম রাতটাই ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে সবচেয়ে আরামদায়ক সময়। কখনো কখনো উদযাপন মানে শুধু নিজের জন্য একটু সময় বের করে নেওয়া আজকের রাতটা ঠিক সেই সুযোগটাই দিয়েছে। দীর্ঘতম রাত মানেই ভয় বা বিষণ্নতা নয়। এটা আসলে একটা বিরতি, যেখান থেকে আলো আবার ফিরে আসার যাত্রা শুরু করে। আজ রাতটা উপভোগ করুন। কারণ কাল থেকেই দিন আবার বড় হতে শুরু করবে।
ছবি: এআই ও উইকিপিডিয়া

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩০
বিজ্ঞাপন