মুখে মধু, অন্তরে বিষ: ১০টি লক্ষণ দেখে চিনে নিন আশেপাশের ভন্ড তেলবাজদেরকে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

মুখে হাসি, মিষ্টি মিষ্টি কথা। কিন্তু আড়ালে ঠিকই করে কটু মন্তব্য। সুযোগ পেলে আপনার ক্ষতি করতে দ্বিধা করবে না। এমন তেলবাজ মানুষদেরকে চিনতে না পারলে তারা ধীরে ধীরে আপনার আত্মবিশ্বাস আর মানসিক শান্তি নষ্ট করে দিতে পারে। পতন ও বিপদের কারণ হতে পারে। তাই সময় থাকতে জেনে নিন, কেউ কি সত্যিই আপনার পাশে আছে, নাকি শুধুই তেলবাজি আর ভন্ডামি করছে৷  

তেলবাজ মানুষদেরকে চিনতে না পারলে তারা  আপনার আত্মবিশ্বাস আর মানসিক শান্তি নষ্ট করে দিতে পারে
তেলবাজ মানুষদেরকে চিনতে না পারলে তারা আপনার আত্মবিশ্বাস আর মানসিক শান্তি নষ্ট করে দিতে পারে

১. তাদের প্রশংসা ফাঁপা বা বাড়াবাড়ি মাত্রায় হয়

সত্যিকারের প্রশংসায় সবসময় ভারসাম্য থাকে।কোন কাজটা ভালো হয়েছে, কোন আচরণে আপনি প্রশংসার যোগ্য সেটি আপনিই বুঝবেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন সৎ বন্ধু বলবে, তোমার আজকের বক্তব্যটা খুব পরিষ্কার ছিল, বিশেষ করে শেষ অংশটা। কিন্তু তেলবাজ ও ভন্ডরা প্রশংসা করতে গেলে অতিরিক্ত রঙ চড়ায়। বলবে, তুমি তো সবসময়ই সবার চেয়ে সেরা!” বা “তোমার মতো পারফেক্ট কেউ নেই!” এসব কথা শুনতে ভালো লাগে, কিন্তু এর কোনো ভিত্তি থাকে না। তারা কথার জাল বিছিয়ে আপনাকে দ্রুত নিজের দিকে টেনে নিতে চায়। তাই এমন কিছু বললে হলে নির্দিষ্টভাবে কোন অংশটি বেশি ভালো হয়েছে ইত্যাদি জিজ্ঞেস করতে পারেন। যদি উত্তর এড়িয়ে যায়, বুঝবেন প্রশংসাটা সত্যিকারের নয়।

বিজ্ঞাপন

২.  আপনার সমস্যায় তারা অস্বাভাবিক উৎসাহী হয়

সত্যিকারের বন্ধু আপনার কষ্ট শুনলে অনুভূতিটা বোঝার চেষ্টা করবে এবং সাপোর্ট দেবে। কিন্তু দু’মুখো মানুষ আপনার সমস্যার খবর পেলে যেন উলটো আনন্দ পায়।অনেক প্রশ্ন করে, ঘটনাটা বারবার জানতে চায়, এমনভাবে খোঁজখবর নেয় যেন আপনার সমস্যা জানাটাই তাদের আনন্দের জায়গা। তারা কখনোই আপনাকে ভালো করার পরামর্শ বা সান্ত্বনা দিতে আগ্রহী হবে না,বরং বিস্তারিত জেনে ভবিষ্যতে সেটা ব্যবহার করতে চাইবে। তাই ব্যক্তিগত বিষয় কার সামনে বলছেন, খেয়াল রাখুন। কেউ যদি সমস্যায় সমাধান না দিয়ে বরং গল্প শুনতে আগ্রহী দেখায়,তাকে দূরত্বে রাখুন।

অনেক এমনভাবে খোঁজখবর নেয় যেন আপনার সমস্যা জানাটাই তাদের আনন্দের জায়গা
অনেক এমনভাবে খোঁজখবর নেয় যেন আপনার সমস্যা জানাটাই তাদের আনন্দের জায়গা

৩. ব্যক্তিগত কথা অন্যের মুখে ফিরে আসে

এই লক্ষণটি সবচেয়ে পরিষ্কার ও সরাসরি। আপনি কাউকে খুব ভরসা করে নিজের ব্যক্তিগত বিষয় বললেন,পরের সপ্তাহে একই কথাটা অন্য কারও মুখে শুনে অবাক হলেন। এমন হলে বুঝবেন এই মানুষটি আপনার কথাকে গোপন রাখার বদলে সম্পর্ক বানাতে বা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ দেখাতে ব্যবহার করছে। বারবার এমন ঘটলে এটা ভুল নয়। বুঝবেন এটা তার অভ্যাস। তাই পরবর্তীতে ওই ব্যক্তিকে আর কোনো কথা বলবেন না। প্রয়োজন হলে খুব শান্তভাবে জানিয়ে দিতে পারেন যে,ব্যক্তিগত কথা বাইরে গেলে আমি তাতে অস্বস্তি বোধ করি।

বিজ্ঞাপন

৪. তারা প্রশংসার আড়ালে অপমান লুকিয়ে রাখে

তারা এমন মন্তব্য করে,যাতে বাইরে থেকে মনে হয় প্রশংসা করছে, কিন্তু ভেতরে একটি খোঁচা লুকানো থাকে। কথাগুলো এমন যে, একটি ইতিবাচক বাক্যের ভেতর নেতিবাচক তুলনা ঢুকানো থাকে, যা আপনার আত্মবিশ্বাসে সূক্ষ্ম প্রভাব ফেলে। তাই সঙ্গে সঙ্গে জবাব না দিয়ে বাক্যটি বিশ্লেষণ করুন। যদি এমন ঘটনা বারবার হয়, তাকে জানিয়ে দিন,এ ধরনের মন্তব্য আপনার ভালো লাগে না।

তারা নিন্দাকেই সবসময় সামাজিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে
তারা নিন্দাকেই সবসময় সামাজিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে

৫. তারা নিয়মিত অন্যের নিন্দা আপনার কাছে করে

কারও কাছে সবার নিন্দার গল্প যদি নিয়মিত শোনা যায়,তাহলে নিশ্চিত থাকুন, আপনি অনুপস্থিত থাকলে সে আপনাকে নিয়েও একই ধরনের গল্প অন্যদেরকে বলে। এরা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব, সন্দেহ বা খারাপ ধারণা ছড়াতে পছন্দ করে। তাদের কথা “তোমাকে আমি খুব বিশ্বাস করি বলেই বলছি…” ধরনের নাটকীয় বাক্য দিয়ে শুরু হয়। এমন মানুষের বলা কোনো নিন্দাকথন তৎক্ষণাৎ সত্য বলে ধরে নেবেন না, বরং মনে রাখবেন যে,তারা নিন্দাকেই সবসময় সামাজিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

৬. তাদের শরীরী ভাষা কথার সঙ্গে মেলে না

মানুষ কথায় অনেক কিছু লুকাতে পারে, কিন্তু শরীরী ভাষা প্রায়ই সত্যটা বলে ফেলে। কেউ হয়তো মুখে বলছে যে,“তোমার জন্য আমি খুব আনন্দিত!”, কিন্তু চোখে সেই উষ্ণতা নেই, হাসিটা জোর করে দেওয়া, কিংবা কথা বলার সময় তারা শরীর দূরে সরিয়ে নেয়। আবার কেউ অতিরিক্ত চোখে চোখ রেখে কথা বলে, যেন আপনাকে পরীক্ষা করছে। এসব অসামঞ্জস্যই বলে দেয় তাদের কথায় আন্তরিকতা কম। তাই কথার চেয়ে শরীরী ভাষা বেশি বুঝতে চেষ্টা করুন। মানুষ কী অনুভব করছে তা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ প্রায়ই বলে দেয়।

মানুষ কথায় অনেক কিছু লুকাতে পারে, কিন্তু শরীরী ভাষা প্রায়ই সত্যটা বলে ফেলে
মানুষ কথায় অনেক কিছু লুকাতে পারে, কিন্তু শরীরী ভাষা প্রায়ই সত্যটা বলে ফেলে

৭.  আপনি বিপদে পড়লে তারা নেই

আনন্দের সময় সবার উপস্থিতি থাকে। কিন্তু বিপদে পড়লে আসল মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়। দু’মুখো মানুষরা আপনার সফলতা বা আনন্দে হাসিমুখ দেখায়, অনুষ্ঠানে আসে, ছবিতে হাসে। কিন্তু আপনি যখন সত্যিকারে সাহায্যের প্রয়োজন বোধ করবেন, তখন তাদের হাজারও অজুহাত পাবেন। ফোন ধরবে না, মেসেজ দেখেও রিপ্লাই দেবে না।এর জন্য কে সুখে-দুঃখে পাশে থাকে তার একটি মানসিক তালিকা রাখুন। যারা প্রয়োজনের সময় অদৃশ্য হয়, তাদেরকে বেশি গুরুত্ব দেবেন না।

৮. কেউ আপনাকে প্রশংসা করলে তারা অস্বস্তি বোধ করে

আপনার সামনে কেউ যদি আপনার প্রশংসা করে আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি হঠাৎ চুপ হয়ে যায়, কথা ঘুরিয়ে দেয় বা মুচকি হাসিতে বিরক্তি লুকায়, তাহলে বুঝে নিন, আপনার ভালো হওয়া তার জন্য অস্বস্তিকর। সাধারণত দু’মুখো বা ঈর্ষাপ্রবণ মানুষ আপনার উন্নতি সহ্য করতে পারে না। এমন সময়ে খেয়াল করুন, কার মুখে সত্যিকারের হাসি আর কার হাসি কৃত্রিম।

৯. পরিচিতদের আচরণ হঠাৎ বদলে যায়

আপনি কারও সঙ্গে আগের মতোই স্বাভাবিক ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ সে আপনাকে এড়িয়ে চলছে? কোনো কারণ ছাড়াই দূরত্ব তৈরি করছে? এটি সাধারণত ঘটে তখনই, যখন কোনো মানুষ আপনার সম্পর্কে ভুল, বাড়িয়ে বলা বা নেতিবাচক কিছু তাদের কাছে ইচ্ছাকৃতভাবে পৌঁছে দিয়েছে। এ সময় পরিবেশটা বুঝে শান্তভাবে বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজন হলে নিরপেক্ষভাবে কথা বলে ভুল বোঝাবুঝি দূর করুন।

অনেক সময় ভেতরের একটা কণ্ঠ বলে, “এই মানুষটাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করো না।”
অনেক সময় ভেতরের একটা কণ্ঠ বলে, “এই মানুষটাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করো না।”

১০. আপনার নিজের ধারণা ও অনুভূতিকে প্রাধান্য দিন

অনেক সময় আমরা শক্ত কোনো প্রমাণ পাই না। কিন্তু মনে কিছু একটা খচখচ করে। যেন ভেতরের একটা কণ্ঠ বলে, “এই মানুষটাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করো না।” এই অনুভূতি হঠাৎ আসে না,আমাদের অবচেতন মন ছোট-ছোট আচরণ, ভঙ্গি, কথাবার্তা সংগ্রহ করে এবং সেগুলোই আমাদের কাছে সতর্কবার্তা হয়ে ফিরে আসে। সেজন্য সেই নিজের ভেতরের কণ্ঠকে গুরুত্ব দিন। অন্তর্জ্ঞান অনেক সময় সম্পর্ক বাঁচায়,তখন দূরত্ব তৈরি করতে দেরি করবেন না।

শেষ পর্যন্ত কথা একটাই,সবাইকে দূরে ঠেলে দেওয়া নয়, বরং কাকে কতটা বিশ্বাস করবেন তা বুঝে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। জীবন ছোট, আর মানসিক শান্তি তার থেকেও মূল্যবান। তাই যাঁরা সামনে হাসিমুখে অভিনয় করে কিন্তু পেছনে আপনাকে আঘাত করে, তাঁদের থেকে একটু দূরত্ব রাখাই ভালো। নিজের চারপাশে এমন মানুষ রাখুন, যারা আপনাকে সম্মান দেয়, সত্যি ভালোবাসে এবং আপনার অনুপস্থিতিতেও আপনাকে রক্ষা করে। কারণ বিশ্বাসযোগ্য মানুষের সঙ্গই একটা সম্পর্ককে সুন্দর রাখে।

তথ্যসুত্র: গিডিটিং

ছবি: এআই ও পেকজেলস

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩: ৫৯
বিজ্ঞাপন