চাকরিটা আপনি কেন ছাড়তে পারছেন না
শেয়ার করুন
ফলো করুন

চাকরিজীবী মানুষেরা দিনের একটি বড় সময় পার করেন কর্মস্থলে। তাই হতাশা, ভালো লাগাও ঘুরতে থাকে এই কাজকে ঘিরেই। কর্মস্থলে অনেক সময় অনেক প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা ঘটে, যা অনুকূলে থাকে না। এরপরও কিসের মোহ-মায়া যেন আটকে রাখে সেখানেই। এমন মানুষ হয়তো হাতে গোনা খুব কমই আছেন, যাঁরা সকালে উৎফুল্ল মনে অফিসের দিকে রওনা হন। কাজকে ভালো লাগে, তবে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছালেই বিষাদ লাগে! কর্মস্পৃহা তো নেই–ই, বরং দিন পার করার এক ব্যর্থ চেষ্টা যেন চলে অজান্তেই, যার প্রভাব এড়ায় না ব্যক্তিগত জীবনেও।

অফিসের তিক্ত রাজনীতি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পক্ষপাতিত্ব কিংবা একনায়কতন্ত্র, ক্রমাগত পরিবর্তন-পরিবর্ধন আর অনেক ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত অস্থিতিশীলতা ভালো লাগার জায়গাকে নষ্ট করে দেয়। তখন আর প্যাশন- প্রফেশনের সমন্বয় হয় না। তবু কেন যেন ছেড়ে আসা যায় না প্রতিষ্ঠানকে।

কাজের প্রতি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য অনেক সময় অনেক খারাপ পরিস্থিতিতে আটকে রাখে একজন কর্মীকে। একজন মানুষ সাধারণত কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে পারেন না বা বলা যায় বের হতে চান না। যখন দীর্ঘদিন একই জায়গায় কাজ করে অবচেতন মনেই সেটাকে কমফোর্ট জোন হিসেবে ধরে নেন এবং কম্প্রোমাইজ করেই যান, এতে করে ভর করে হতাশা, কমে যায় কাজের গতি আর সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয় তা হলো, ব্যক্তিজীবনে। কর্মজীবনের বাইরে যে জীবন আছে, সেখানে এর প্রভাব পড়ে অতিমাত্রায়।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থাকলে অনেক সময় প্রতিষ্ঠান তাঁকে সেই মূল্যায়ন করে না, যা তাঁর প্রাপ্য। তাই এ ধরনের কিছু মনে হলে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন এবং এর প্রতিটির উত্তর যদি হয় নেতিবাচক, তাহলে এখনই সময় আপনার অন্য চাকরি খোঁজার। অনুপস্থিতি দিয়ে উপস্থিতি প্রমাণ করতে শিখুন। আজ হয়তো ভাবছেন, কাল সব ঠিক হয়ে যাবে। তাহলেই বড়সড় ভুল হচ্ছে আপনারও। নিজেকেই প্রশ্ন করুন, আপনার সঙ্গে যা হচ্ছে, তা কি ঠিক?

প্রথমেই দেখুন, আপনি যে কাজ বা সার্ভিসটি প্রদান করছেন, তার জন্য আপনি উপযুক্ত কি না? অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের চাহিদা এবং আপনার দক্ষতা সমানুপাতিক কি না? এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা জরুরি। আপনার যদি মনে হয় আপনার যে দক্ষতা সেই অনুসারে আপনাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না, তা হোক টাকার অঙ্কে কিংবা সুযোগ-সুবিধায়, তাহলে আপনার লক্ষ্য পরিবর্তন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রতিষ্ঠান আপনাকে যেসব সুযোগ- সুবিধা দিচ্ছে, তা আপনার জীবনমানকে উন্নত করছে, নাকি অবনত?

কর্মস্থলের নিয়মনীতি কি একতরফা বা ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তনীয়?

আপনি যে ডেডিকেশন দিয়ে কাজ করেন, তা সবার নজর এড়িয়ে যাচ্ছে নাকি?

আপনার লক্ষ্য পূরণে আপনি সদা সচেতন, বিষয়টি কর্তৃপক্ষ কতটুকু বিবেচনায় আনে?

কাঠামোগত বা কৌশলগত পরিবর্তনগুলো আপনার জীবনে কি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে?

পরিবর্তন সব ক্ষেত্রেই কাম্য। পরিবর্তনে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করুন, শুধু বিবেচনায় রাখুন, আপনি যখন যোগদান করেছিলেন সে সময়ের সঙ্গে বর্তমানের অবস্থানগত পরিবর্তন কেমন হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনের সঙ্গে আপনার পরিবর্তন হচ্ছে কি না?

চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ভয় না পেয়ে বরং কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আপনি যদি খারাপ কাজের পরিস্থিতিতে থেকে পরাজিত বোধ করেন, তবে ‘ভয়’ আপনাকে সামান্য আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ছেড়ে দিতে হবে। ইতিবাচক কাজের পরিবেশে আপনার জীবন কেমন হতে পারে, তা নিয়ে স্বপ্ন দেখুন।

পরিশেষে, প্রতিটি ব্যক্তির সহ্যশক্তি ও প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা আলাদা। তাই আপনি কেন একটি ট্রমাজনিত পরিস্থিতিতে এত দিন রয়ে গেলেন, তা নিয়ে না ভেবে বরং ভাবুন, কীভাবে এর সমাধান করা যায়। কর্মজীবনে ভারসম্য তৈরি করতে না পারলে আপনি কোথাও টিকতে পারবেন না। নিজের মূল্যবোধ ও আত্মসম্মান হারানোর আগেই এবং তিক্ততা ছড়ানোর আগে কর্মস্থল পরিবর্তন করাই উত্তম।

ছবি: পেকজেলসডটকম

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ০০
বিজ্ঞাপন