
এই ফিরে যাওয়াটাই আসলে আমাদের ভেতরের এক গভীর জায়গায় নাড়া দেয়। হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায় এমন সব শৈশবের স্মৃতি, যেগুলো আমরা নিজেরাও ভুলে গিয়েছিলাম। মনোবিজ্ঞান আর স্নায়ুবিজ্ঞানের ভাষায়, এটিই এক ধরনের মানসিক টাইম ট্রাভেল।

আমাদের পরিচয়ের একটা বড় অংশ তৈরি হয় অন্যরা আমাদের যেভাবে দেখে, যেভাবে আমাদের সঙ্গে আচরণ করে। পরিবার সেই পরিচয়ের প্রথম আয়না। তাই উৎসবের সময় পুরোনো রুটিন, চেনা তর্ক, একই গল্প বারবার শোনা—সব মিলিয়ে আমরা অজান্তেই আবার ফিরে যাই সেই আগের ‘আমি’-তে।
এই ফিরে যাওয়া সব সময় আরামদায়ক নাও হতে পারে। অনেক সময় মনে হয়, আমরা যেন আরেকটু ছোট, আরেকটু নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। কিন্তু এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক বিশেষ সুযোগ—ভুলে যাওয়া স্মৃতিগুলোকে নতুন করে আবিষ্কার করার।

স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের বেশির ভাগ পুরোনো স্মৃতি আসলে হারিয়ে যায় না। সেগুলো থাকে মস্তিষ্কের গভীরে, থাকে সঠিক ট্রিগারের অপেক্ষায়। পরিবার, পুরোনো ঘর, শৈশবের ডাকনাম বা সেই চেনা গলার স্বর—এই সবকিছুই হতে পারে সেই ট্রিগার।
স্মৃতি যেন পাজলের এক একটি টুকরো। একটি টুকরো পেলেই হঠাৎ করে আরও অনেক টুকরো একসঙ্গে মনে পড়ে যেতে পারে।

কেমব্রিজের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্মৃতি শুধু দৃশ্য বা শব্দের নয়—এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আমাদের শরীরও। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের শরীরের আকার, নড়াচড়া, অনুভূতি ছিল আলাদা। সেই শরীরের অভিজ্ঞতাও আমাদের স্মৃতির অংশ।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একদলকে প্রযুক্তির সাহায্যে এমন এক অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়, যেখানে তারা আয়নায় নিজের মুখকে শিশুকালের মতো দেখতে পান। আশ্চর্যের বিষয়, এই সামান্য অভিজ্ঞতার পরই তারা শৈশবের স্মৃতি আরও বিস্তারিতভাবে মনে করতে পেরেছেন।
এর মানে দাঁড়ায়—আমাদের মস্তিষ্ক স্মৃতির সঙ্গে শুধু ঘটনা নয়, সেই সময়কার ‘আমি’কেও সংরক্ষণ করে রাখে।

শৈশবের স্মৃতি শুধু নস্টালজিয়া নয়। এগুলো আমাদের বর্তমান ‘আমি’-কে বুঝতে সাহায্য করে। কেন আমরা কিছু বিষয়ে সংবেদনশীল, কেন কিছু গন্ধ বা গান আমাদের অজান্তেই আবেগপ্রবণ করে তোলে—এর অনেক উত্তর লুকিয়ে থাকে সেই পুরোনো স্মৃতিগুলোতে।
আমাদের পরিচয় সময়ের সঙ্গে বদলায়, কিন্তু পুরোনো ‘আমি’গুলো কখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায় না। তারা মস্তিষ্কে ছাপ রেখে যায়—শান্ত, নীরবে।

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো মানেই শুধু বর্তমানের সম্পর্ক নয়, বরং নিজের অতীতের সঙ্গে নতুন করে দেখা হওয়া। শৈশবের সেই ‘আমি’ হয়তো আজ আর নেই, কিন্তু তার ছায়া আমাদের ভেতরেই বেঁচে আছে। পারিবারিক আড্ডায় যদি হঠাৎ কোনো পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়, তাকে এড়িয়ে যাবেন না। কারণ সেই স্মৃতির মধ্যেই লুকিয়ে আছেন আপনি, যে আপনি ছিলেন একসময় এবং যে আপনি আজ আছেন।
সূত্র: বিবিসি লাইফস্টাইল
ছবি: এআই