মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক প্রেসিডেন্ট ভবনটিকে একনামেই চেনেন সবাই বিশ্বজুড়ে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আদরের নাতনি নাওমি বাইডেনের বিয়ের সাজে সেজে উঠেছিল হোয়াইট হাউস। কড়া প্রহরা ও প্রটোকলে আয়োজিত বর্ণাঢ্য এই বিয়ের আয়োজন নিয়ে কাভার করেছে ভোগ ম্যাগাজিনের মতো প্রকাশনা। আর সারা বিশ্বের ফ্যাশনপ্রেমীরাও অনুষ্ঠান শেষে এই বিয়ের পোশাক ও সাজসজ্জার খুঁটিনাটি জানতে চোখ রাখছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভোগ কাভারে র্যালফ লরেনের আইভরি রঙের বিয়ের পোশাক আর টিফানির কানের দুলের সাজে নাওমি বাইডেনের দিক থেকে চোখ ফেরানো দায়। হাইনেক আর লম্বা হাতার শ্যান্টিলি লেসের ওয়েডিং ড্রেসটি সর্বান্তকরণে স্নিগ্ধতার গান গাইছে যেন। আভিজাত্যপূর্ণ সবুজ-সাদা ডোরাকাটা সোফায় বসে রিম অ্যাক্রার এলিগ্যান্ট করসেট বাঁধুনির ছোট দৈর্ঘ্যের সবুজ পোশাকে দাদি তথা ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকেও লাগছে অভিজাত সুন্দর। আনমনে চেয়ে থাকা নাওমিকে পিতামহীর আদরে জড়িয়ে থাকার মুহূর্তের ছবিটি নরম আলোয় তোলা। ঘরের আদুরে মেয়েটির বিদায়বেলার ক্ষণে ক্যামেরাবন্দী এই দৃশ্য যেন বড়ই সর্বজনীন, অত্যন্ত মায়াকাড়া।
পাত্রটি নাওমির একান্ত পছন্দের। আমেরিকার জর্জটাউনে জাতীয় প্রতিরক্ষাবিষয়ক আইনগত সবকিছু সামলান তরুণ সুদর্শন আইনজীবী পিটার নিল। বর-কনে দুজনেই আইনজীবী হওয়ায় বোঝাপড়াটাও চমৎকার, যা দুজনের যুগল ছবিগুলোর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নভেম্বরের ১৯ তারিখ বেলা ১১টায় মেঘমুক্ত উজ্জ্বল আবহাওয়ায় হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ লনে ২৫০ অভ্যাগত অতিথিদের উপস্থিতিতে বিয়ে করলেন তাঁরা। হিম হিম সকালের শীতভাব সামাল দিতে প্রতিটি চেয়ারেই শীতের স্কার্ফ আর হাতমোজার ব্যবস্থা রাখা ছিল আসনগুলোর সঙ্গেই।
সুইট পিজ আর লিলি ফুলের বোকে হাতে স্মিত হাস্যে অনিন্দ্যসুন্দর নাওমি বিয়ের আইলটিতে হেঁটেছেন বাবা-মায়ের হাত ধরে। বাজছিল ‘বিটার সুইট সিম্ফনি’। নেভি ব্লু থ্রি পিস র্যালফ লরেন স্যুটে বর পিটারকে রাজপুত্রই লাগছিল। বিয়ের ভেন্যুটির আশপাশে, সিঁড়ি আর ওয়েডিং আইলের ধারে ছিল হাইড্রাঞ্জিয়া, আইভি আর সাদা গোলাপের অপরূপ সজ্জা।
গুরুগম্ভীর আনুষ্ঠানিক বিয়ে শেষে বিকেলে সবার জন্য রাখা হয় আমোদপূর্ণ আয়োজন। ব্ল্যাক টাই ড্রেস কোডের রিসেপশন অনুষ্ঠানে নাচ-গান, কেক কাটা আর হইহুল্লোড়—কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। নাওমি পরেছিলেন স্ট্র্যাপবিহীন আইভরি সিল্ক মিকাডো রিম অ্যাক্রা ড্রেস। পোশাকে মাতামহীর স্মৃতিবহ মুক্তাখচিত ছয় ফুট লম্বা ট্রেনটি নজর কেড়েছে সবার। তবে রাত বাড়লে নাচের সময় নাওমি চট করে ছোট দৈর্ঘ্যের, বিডস আর ফ্রিঞ্জ দেওয়া মারকারিয়ান মিনি ড্রেস পরে আসেন। কেক কাটার সময় হলো আসল মজা। রীতিমতো মইয়ে চড়ে বর-কনে সাত ফুট লম্বা আর আটতলা কেকটি কাটলেন সবার হর্ষধ্বনির মধ্যে। লেমন ফ্লেভারের কেকটিতে ছিল বিলাসী বাটারক্রিম ফ্রস্টিং।
সেই ১৮০০ সাল থেকে মাত্র ১৯টি মূল বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে খোদ হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে। আর কোনো প্রেসিডেন্টের নাতনির বিয়ে প্রথমবার হচ্ছে এই গুরুত্বপূর্ণ ভবনে। এর আগে শেষ রাষ্ট্রীয় বিয়েটি হয়েছিল এখানে ১৯৭১ সালে। প্রেসিডেন্ট নিক্সনকন্যা ট্রিসিয়া নিক্সনের।
ভোগের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাওমি বলেন, ‘জায়গাটি এত সুন্দর আর ইতিহাসের নিরিখে এত স্মৃতিবহ, আমি খুব চেয়েছিলাম যেন আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান এখানেই হয়। তবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলো সামলে এই আয়োজন বেশ ঝক্কিপূর্ণই ছিল।’ নাওমি আরও বলেন, তিনি পরিবারের সঙ্গে এত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন, তাঁর বিয়ে পারিবারিক বাসস্থানের আঙিনায়ই হওয়ার কথা ছিল। আর তাঁর প্রিয় দাদা, যাকে তিনি পপ বলে ডাকেন, তিনি যদি প্রেসিডেন্ট না হতেন, তাঁর আগের বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডেই হয়তো বিয়ে হতো তাঁর।
এই বর্ণাঢ্য বিয়ের আয়োজনের খুঁটিনাটি সবকিছু যাতে নিখুঁত হয়, সেদিকে কড়া নজর রেখেছেন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, যিনি নাওমির কাছে সর্বাগ্রে তাঁর ‘ন্যানা’। বিয়ের ভোজ যেমন ছিল বিলাসবহুল ফাইন ডাইনিং আর পেস্ট্রি শেফদের তেলেসমাতির প্রদর্শনী, তেমনি নাওমির বাবা হান্টার বাইডেনের প্রিয় ঘরোয়া পদ চিকেন পট পাইও ছিল মেনুতে। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এই বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি আর বর্ণনায় আনুষ্ঠানিকতা আর বিয়ের আমাদের পাশাপাশি সব ছাপিয়ে মূর্ত হয়ে ওঠা। পারিবারিক বন্ধনগুলোর মায়াময়তাই বেশি ছুঁয়ে যাচ্ছে সবাইকে।