সারাদিন বসে থাকা থেকে শুরু করে বাইরের খাবার খাওয়া, ৯টা-৫টা চাকরি করেও কীভাবে নিজেকে ফিট রাখবেন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেক সময় দেখা যায় আমরা সব কিছুই তো করছি কিন্তু স্বাস্থ্যের দিকে তেমন একটা মনোযোগ দিচ্ছি না। আর যাঁরা ৯টা-৫টা চাকরি করেন তাঁদের ব্যাপারটি যেন আরও চ্যালেঞ্জিং। দীর্ঘসময় ধরে একটানা চেয়ারে বসে কাজ করার কারণে তাঁদের কোমর ও হিপ মাসল, মেরুদণ্ডসহ অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর বেশ চাপ পড়ে। এর ফলে তাঁদের লোয়ার ব্যাকপেইনসহ মেরুদণ্ডের নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এছাড়া, যাঁরা ৯টা-৫টা চাকরি করেন তাঁরা কাজের চাপেই হোক কিংবা অন্য যে কারণেই হোক, অতিরিক্ত চা-কফি পান করেন। পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। এই অভ্যাস তাঁদেরকে খুব সহজেই ডিহাইড্রেটেড করে তোলে। অনেকেই আবার প্রতিদিন বাইরের খাবার খেয়ে থাকেন। এগুলোও স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন প্রভাব ফেলে। তাহলে কী করবেন? চাকরি ছেড়ে দেবেন? তা তো সম্ভব নয়।

তবে চাকরিজীবীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে মার্কিন কার্ডিওভাসকুলার সার্জন ডা. জেরেমি লন্ডন দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ৪টি টিপস দিয়েছেন। ইন্সটাগ্রামে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই চিকিৎসক প্রায়ই এমন সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভিডিও শেয়ার করেন। জেনে নেওয়া যাক, যারা ৯টা-৫টা চাকরি করেন, তাঁরা দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকতে কী করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

১. একটানা চেয়ারে বসে থাকা যাবে না

যাঁরা ডেস্ক জব করেন তাঁদের দিনে ৮-১০ ঘন্টা পর্যন্ত চেয়ারে বসে কাটাতে হয়। ডা. জেরেমি লন্ডনের মতে এটি আমাদের শরীরের জন্য ভয়াবহ সব বিপদ ডেকে আনছে। তিনি বলেন, 'দীর্ঘসময় বসে বসে কাজ করলে বেশকিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। একটানা এত ঘন্টা বসে থাকার পর যদি ব্যায়ামও করেন, তারপরেও আপনার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।

অফিসে একটানা বসে থাকা যাবে না
অফিসে একটানা বসে থাকা যাবে না

এছাড়া, এভাবে একটানা বসে থাকলে মেটাবলিজম কমে যায় এবং এটি কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো নয়।'তাই ৩০-৬০মিনিটের বেশি চেয়ারে বসে না থাকার। চাইলে টাইমার সেট করে রেখে দিতে পারেন। ৩০-৬০মিনিট পর ২-৩ মিনিটের জন্য হলেও হাঁটাহাঁটি করুন। এটি কর্টিসলের মাত্রা হ্রাস করে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়াতেও সাহায্য করে।

বিজ্ঞাপন

২. বাসার খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন

চাকরিজীবীদের অনেকেই প্রতিদিন বাইরের খাবারের ওপর নির্ভর করেন। অথচ বাইরের খাবারে থাকে অতিরিক্ত তেল, মসলা ও প্রসেসড উপকরণ। যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেও ঠিক নয়। তাই প্রতিদিন বাইরের খাবার এড়িয়ে চলাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

কাজের চাপে সবসময় বাইরের খাবার খেলে হতে পারে বিপত্তি
কাজের চাপে সবসময় বাইরের খাবার খেলে হতে পারে বিপত্তি

ডা. জেরেমি লন্ডনের মতে, বাসায় রান্না করা খাবারই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্প। তিনি বলেন, 'নিজেই দুপুরের খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যান। সপ্তাহে এক–দুবার এই খাবার রান্নার পেছনে সময় দিন, পুষ্টিকর খাবার খান এবং অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার থেকে দূরে থাকুন।'

৩. হাইড্রেটেড থাকুন

সারাদিন অফিসে কাজের ব্যস্ততায় অনেকেই পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলে যান। এর ফলে খুব সহজেই ডিহাইড্রেশনের শিকার হতে হয়। ডা. জেরেমি লন্ডনের মতে, 'হালকা ডিহাইড্রেশনও মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং ক্লান্তি বাড়ায়।

সারাদিন অফিসে কাজের ব্যস্ততায় অনেকেই পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলে যান
সারাদিন অফিসে কাজের ব্যস্ততায় অনেকেই পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলে যান

সবসময় একটি পানির বোতল কাছে রাখুন এবং পিপাসা না পেলেও অল্প অল্প করে পানি পান করুন।' অতিরিক্ত কফি ও চা পান থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া, হাইড্রেটেড থাকতে কাজের ফাঁকে শসা, তরমুজ ও আনারসের মতো ফলগুলো খেতে পারেন। এতে পানির চাহিদাও মিটবে, সেই সঙ্গে ভিটামিন, খনিজসহ নানা পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিও দূর হবে।  

৪. মানসিক বিরতি নিন

শুধু শারীরিক সুস্থতাই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও সমান যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিনের কাজের চাপ ও ব্যস্ততার মধ্যে ছোট্ট মানসিক বিরতি মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করে।

কে কী বলল না ভেবে কাজের ফাঁকে স্ট্রেচিং করে নিতে পারেন
কে কী বলল না ভেবে কাজের ফাঁকে স্ট্রেচিং করে নিতে পারেন

ডা. জেরেমি লন্ডন বলেন, 'নিজের জন্য স্বস্তিদায়ক ব্যায়াম খুঁজে নিন, মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস করুন কিংবা কিছুক্ষণের জন্য  বাইরে বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি করে আসুন। এতে স্নায়ুতন্ত্র রিসেট হয় এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে সাময়িক প্রশান্তি পাওয়া যায়।'ডা. লন্ডন আরও বলেন, 'ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়মিত নিলে সেগুলো দীর্ঘমেয়াদে বিশাল স্বাস্থ্যগত সুফল বয়ে আনবে। কাজেই আপনার ৯টা–৫টার চাকরিকে স্বাস্থ্যের পথে বাধা হতে দেবেন না। নিয়মিত ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন এবং সুস্থ থাকুন।'

সূত্র: ড: জেরেমির ইন্সটাগ্রাম

ছবি: পেকজেলস

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১: ৩৭
বিজ্ঞাপন