ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: যেভাবে লন্ডভন্ড বিশ্বের পর্যটনশিল্প
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ইসরায়েলি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য গ্রিস। এই যুদ্ধের ফলে সবার আগে অর্থনৈতিক ধাক্কা খেয়েছে ভূমধ্যসাগরের দেশটি। বিশ্লেষকদের ধারণা, চলতি গ্রীষ্মে গ্রিক পর্যটনশিল্প কমপক্ষে ১৫০ মিলিয়ন ইউরো রাজস্ব হারাতে পারে। যুদ্ধ থামলেও এখন ইসরায়েল ও গ্রিসের মধ্যে সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ। অন্যদিকে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের অনেক শহর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইসরায়েলের মানুষ এখন বেড়ানোর মুডে নেই। দেশটির প্রধান ট্রাভেল এজেন্সিগুলো জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সব ট্যুর বাতিল করেছে। আপাতত যুদ্ধবিরতি চলছে। আবার শুরু হলে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

গ্রিসে ভ্রমণ করতে গেলে ইসরায়েলি পর্যটকেরা গড়ে ৬৭৬ ইউরো ব্যয় করে থাকেন, যা সাধারণ পর্যটকের তুলনায় অনেক বেশি। তাঁদের অনুপস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হোটেল, পরিবহন, রেস্টুরেন্ট ও ক্ষুদ্র পর্যটন ব্যবসা।

এথেন্স এয়ারপোর্ট: গ্রিসে কমেছে ইসরায়েলি পর্যটক
এথেন্স এয়ারপোর্ট: গ্রিসে কমেছে ইসরায়েলি পর্যটক

দূরবর্তী হলেও থাইল্যান্ডের পর্যটন খাতেও এই যুদ্ধের আঁচ এসে পৌঁছেছে। থাই এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট বুকিং কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত পর্যটকের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। আতঙ্ক ও ফ্লাইট অনিশ্চয়তার কারণে ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করছেন বহু পর্যটক।

বিজ্ঞাপন

 মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কারণে অনেক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা নিচ্ছে বাড়তি সতর্কতা। তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইরাক—এসব দেশ ইরান-ইসরায়েল সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় আকাশপথ এড়িয়ে চলছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। কুয়েত সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ রেখেছে।

কাতার স্থগিত রেখেছে ফ্লাইট
কাতার স্থগিত রেখেছে ফ্লাইট

কাতার স্থগিত করেছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং এমিরেটস এয়ারলাইনস ইরান ও ইরাকের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিল করেছে। এ ছাড়া গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের দেশগুলোর মধ্যে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। অন্যান্য দেশ এখনো নিরাপদ আছে। তা সত্ত্বেও ফ্লাইট বাতিল, রুট পরিবর্তনের কারণে বাড়তি খরচ দেখা দিয়েছে। তিউনিসিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া ও লিবিয়া থেকে মিসরে আগতদের জন্য নিরাপত্তা যাচাই কঠোর করা হয়েছে। বাহরাইন ঝুঁকি মাথায় রেখে দূরবর্তী কাজের নীতি চালু করেছে।

এদিকে আকাশপথে বিকল্প রুট ব্যবহার করায় ফ্লাইটের সময় ২ থেকে ৪ ঘণ্টা বাড়ছে, ফলে তেলের খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দামও বেড়েছে ২০ শতাংশ।

প্রতীকী ছবি: বিকল্প রুট ব্যবহারে বাড়ছে ভ্রমণ ব্যয়
প্রতীকী ছবি: বিকল্প রুট ব্যবহারে বাড়ছে ভ্রমণ ব্যয়

এই খরচ শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের ঘাড়ে, যে কারণে বাড়ছে টিকিটের দাম, কমছে ভ্রমণ। একদিকে কোভিড মহামারির কারণে পর্যটন খাত যে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, সেই ক্ষত এখনো পুরোপুরি মুছতে পারেনি বিশ্ব। তার ওপর নতুন করে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি কারণ হয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষতির, বাড়ছে বেকারত্ব আর পর্যটনসংশ্লিষ্ট খাতে অনিশ্চয়তা।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের অভিঘাত আর কেবল সামরিক নয়, এটি দ্রুত এক বিশ্বব্যাপী পর্যটন সংকটে রূপ নিতে যাচ্ছে। বিমান চলাচল, ভিসা, নিরাপত্তা, তেলের দাম—সব মিলিয়ে গোটা ভ্রমণশিল্প এখন এক নতুন অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।

ঝুঁকিতে পর্যটনশিল্প
ঝুঁকিতে পর্যটনশিল্প

বিশেষজ্ঞদের অভিমত বিশ্বজুড়ে সরকার ও পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টদের উচিত হবে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ; যেমন বিকল্প ভ্রমণ পরিকল্পনা, ঝুঁকি নিরূপণ ও মোকাবিলার কৌশল, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সহায়তা তহবিল গঠন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই উত্তপ্ত সময় পার করতে হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বাস্তবভিত্তিক প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই বলেও তাঁদের অভিমত। শান্তির পায়রা উড়ুক সারা বিশ্বের আকাশে—এই আমাদের প্রার্থনা।

ছবি: পেকজেলসডটকম ও উইকিপিডিয়া

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৫: ০০
বিজ্ঞাপন