স্বেচ্ছায় রক্তদানে প্রয়োজন তরুণদের অংশগ্রহণ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আগুনে পুড়ে যাওয়া, জরুরি অপারেশন, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, ডেঙ্গুসহ নানা রোগে রক্তের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে কত ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন? এ–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব রয়েছে। তারপরও ধারণা করা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্ত বা রক্ত উপাদান প্রয়োজন।
আমাদের দেশে রক্তের এ চাহিদা কীভাবে পূরণ হয়?
রক্তের এ চাহিদা পূরণ হয় মূলত তিনটি উৎস থেকে—
ক. পেশাদার রক্তদাতা
খ. রোগীর আত্মীয় বা বন্ধু
গ. স্বেচ্ছারক্তদাতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত রক্ত থেকে।

বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশে একসময় পেশাদার রক্তদাতাদের প্রভাব বেশ ছিল। এখন একটি প্রধান অংশ সরবরাহ হয়ে থাকে রোগীর আত্মীয় বা বন্ধুদের থেকে। স্বেচ্ছারক্তদাতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ অতীতের তুলনায় অনেক বেড়েছে; তবে এখনো এটি প্রধান বা একমাত্র উৎস হয়ে উঠতে পারেনি। অথচ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কারণেই উন্নত দেশগুলোয় রক্তের চাহিদা মেটানো হয়ে থাকে শুধু স্বেচ্ছারক্তদাতাদের মাধ্যমে সংগৃহীত রক্ত থেকে।

প্রাথমিক বাছাই এর পর রক্ত দানের জন্য অপেক্ষা করছে তিন তরুণ
প্রাথমিক বাছাই এর পর রক্ত দানের জন্য অপেক্ষা করছে তিন তরুণ

আমাদের পক্ষেও রক্তের চাহিদার পুরোটাই স্বেচ্ছারক্তদাতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত রক্তের মাধ্যমেই মেটানো সম্ভব। দেশের তরুণসমাজ রক্তদানে এগিয়ে এলে এ দেশে রক্তের চাহিদার ঘাটতি থাকবে না। আমাদের দেশে বছরে রক্তের চাহিদা ৮ থেকে ১০ লাখ ব্যাগ। বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণের সংখ্যা পৌনে পাঁচ কোটি! বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় রক্তের এ চাহিদা একেবারেই নগণ্য হলেও এখনো আমরা রক্তে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। বছরে একবার করেও যদি সুস্থ তরুণদের সামান্য একটি অংশ স্বেচ্ছায় রক্তদানে অংশ নেয়, তবে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞাপন

রক্তদান একটি চমৎকার মানবিক কাজ। ১৮ বছর বয়স হলেই একজন তরুণ বা তরুণী রক্ত দিতে পারেন। একজন রক্তদাতার এক ইউনিট বা এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে চারজন মানুষের প্রয়োজন পূরণ সম্ভব। ওষুধ দিয়ে বা কৃত্রিম কোনো পদ্ধতিতে রক্তের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। রক্তের বিকল্প কেবল রক্ত। আর এ রক্ত আসে স্বেচ্ছারক্তদাতাদের কাছ থেকে।

এ ধারণা থেকেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম ‘অজেয় ১৯’ প্রচারণাটি চালাচ্ছে। একজন সুস্থ তরুণ বা তরুণী তাঁর ১৯তম জন্মদিনটি স্মরণীয় করে রাখতে পারেন স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে।

‘জন্মদিনে রক্ত দিন’ স্লোগান নিয়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রমের মাধ্যমে নানাভাবে মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছে। ২০০৮ সালের এপ্রিল থেকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এখন পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অজেয় ১৯ কার্যক্রমের আওতায় ৯৩৩টি সভা আয়োজন করেছে, যাতে অংশ নিয়েছেন ৫৭ হাজার ৯১০ জন আগ্রহী তরুণ রক্তদাতা বা আজকের কিশোর, কিন্তু আগামীর রক্তদাতা।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ রক্তদাতার সর্বোচ্চসংখ্যক ডোনার পুল, যাঁদের মধ্যে অনেকেই ৫০, ২৫, ১০ ও ৩ বার রক্ত দিয়ে সম্মানিত হয়েছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে ৫০ বার রক্ত দিয়েছেন—এমন ৫০ জন রক্তদাতাকে সম্মানিত করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।

১৯তম জন্ম দিন রক্তদানের মধ্যে দিয়ে পালনের তৃপ্তি
১৯তম জন্ম দিন রক্তদানের মধ্যে দিয়ে পালনের তৃপ্তি

করোনার চরম বিপর্যয়ের সময়, ২০২০ সালে ৮৫ হাজার ইউনিট রক্ত বা রক্ত উপাদান সরবরাহ করেছে কোয়ান্টাম ল্যাব। যে সময় প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল, তখনো কোয়ান্টাম ল্যাব এই তরুণদের সঙ্গে নিয়ে অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে।
আজ ১৪ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছরের মতো এবারও নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করতে দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবারের রক্তদাতা দিবসের প্রতিপাদ্য করেছে ‘ডোনেটিং ব্লাড ইজ অ্যান অ্যাক্ট অব সলিডারিটি। জয়েন দ্য এফোর্ট অ্যান্ড সেভ লাইভস’, যার অর্থ, ‘রক্তদান সংহতিকে প্রকাশ করে। এ কার্যক্রমে যুক্ত হোন, জীবন বাঁচান’।

সারা পৃথিবীতেই প্রয়োজনীয় রক্তের জোগান আসে স্বেচ্ছারক্তদাতাদের কাছ থেকে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে যাঁরা এ কাজ করে চলেছেন, তাঁদের প্রতি সম্মান ও মানুষকে রক্তদানে সচেতন করা দিবসটির উদ্দেশ্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এবারও বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।

আজকের এই দিনে আমাদের প্রত্যেক তরুণের প্রতিজ্ঞা হোক, জন্মদিন উদ্‌যাপিত হবে রক্তদানের মাধ্যমে। জন্মদিনে জড়িয়ে থাকবে মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ।

লেখক: পরিচালক, মোটিভেশন, স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও গ্রুপ সিইও, রিভ গ্রুপ

ছবি: লেখকের সৌজন্যে

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২২, ০৯: ৩৪
বিজ্ঞাপন