বেলির সুঘ্রাণে মাততে হলে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সুবাসে মাতোয়ারা হয়ে, প্রেমিকার খোঁপায় দুটি বেলি ফুল বা একটি বেলি ফুলের মালা দিতে কোন প্রেমিক না চায়! প্রেম, ভালোবাসা, পবিত্রতা শব্দগুলোর সঙ্গেই যেন বেলি ফুল জড়িয়ে আছে।

যুগে যুগে কবিদের কবিতায় বেলি ফুলের বন্দনা দেখেছি আমরা
যুগে যুগে কবিদের কবিতায় বেলি ফুলের বন্দনা দেখেছি আমরা


সুগন্ধি ফুল হিসেবে পৃথিবীজুড়েই এই বেলির খুব কদর। যুগে যুগে কবিদের কবিতায় বেলি ফুলের বন্দনা দেখেছি আমরা। নিজের বারান্দা বা ছাদবাগানে দু–একটি বেলি ফুলের গাছ এমন দিনে ঝুম বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে গাছ ঝেপে আসা বেলি ফুলের সমারোহ সারা দিনের ক্লান্তি ঘুচিয়ে দেবে, নিশ্চিত হয়ে বলা যায়।

বিজ্ঞাপন

এখনই উপযুক্ত সময় বেলি ফুল লাগানোর, তবেই বর্ষায় ঝিকিমিকি তারার মতো ফুটে থাকবে বেলি ফুলগুলো। আমাদের দেশে বাগানিরা সাধারণত চার থেকে পাঁচ ধরনের বেলিগাছ লাগিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রাই বেলির কদর সবচেয়ে বেশি। এই রাই বেলি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি বেশ বড় আকৃতির, অসংখ্য পাপড়ি আর সবচেয়ে বেশি সুঘ্রাণযুক্ত।

আমাদের দেশি বেলিও কিন্তু সুঘ্রাণে সেরা আর বেশিসংখ্যক ফোটে, রীতিমতো সাদা তারার মেলা বসে, আকৃতিতে খানিকটা ছোট হলেও গাছভরা ফুল আর ঘ্রাণ সত্যিই বিমুগ্ধ করে।

বর্ষায় ঝিকিমিকি তারার মতো ফুটে বেলি ফুল
বর্ষায় ঝিকিমিকি তারার মতো ফুটে বেলি ফুল

সকালে ফুলোগুলো খানিকটা ডালসহ কেটে ফুলদানিতে পানি দিয়ে রাখলে সারা দিন ঘরে থাকবে শান্তির পরশ। আর যদি কিছু ফুল ডাল ছাড়া তুলে একটি স্বচ্ছ কাচের বাটিতে পানিতে ভাসিয়ে রাখা যায়, তাহলেও মন থাকবে ফুরফুরে।

বেলির আরও একটি প্রজাতি হলো লতা বেলি। বারান্দার গ্রিলে বেয়ে ওঠার ব্যবস্থা করে দেওয়া গেলে ফুলে–পাতায় বারান্দার আদলই বদলে যাবে, ক্ষণে ক্ষণে আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে, চোখে–মনে থাকবে তৃপ্তির আবেশ। এ ছাড়া আরও দু–তিন রকমের বেলি আমাদের দেশে বেশ সমাদৃত।

বিজ্ঞাপন

বেলিগাছের সন্ধান

ঢাকাসহ সারা দেশেই নার্সারির বেশ আধিক্য আজকাল চোখে পড়ে এবং তাদের সংগ্রহও বেশ সমৃদ্ধ। বেলিগাছের জন্য টব নিতে হবে ড্রেনেজের দিকে খেয়াল রেখে। অবশ্যই যেন পানি জমে না থাকে, এমন পট ব্যবহার করতে হবে, সামনে বৃষ্টির দিন, পানিনিষ্কাশন ঠিক না থাকলে গাছ বাঁচানো যাবে না। টবের তলায় চার থেকে পাঁচটি ছিদ্র করে নিতে হবে।

বেলিগাছের জন্য টব নিতে হবে ড্রেনেজের দিকে খেয়াল রেখে
বেলিগাছের জন্য টব নিতে হবে ড্রেনেজের দিকে খেয়াল রেখে

এবার মাটি নির্বাচনের পালা। যেখান থেকেই মাটি জোগাড় হোক না কেন, বিভিন্ন রকমের জীবাণু থাকবেই। সে ক্ষেত্রে মাটি ভালোভাবে গুঁড়া করে সামান্য চুন মিশিয়ে সারা রাত ঢেকে রেখে দিতে হবে, এতে ক্ষতিকারক জীবাণু মরে যাবে।

২০ ভাগ মাটি, ২০ ভাগ শুকনা পচা গোবর, ২০ ভাগ ভার্মি কম্পোস্ট, ১০ ভাগ নিম খৈল, ১০ ভাগ হাঁড়ের গুঁড়া, ১০ ভাগ জৈব সার আর ১০ ভাগে খৈলের গুঁড়া, কিছু খবরের কাগজের টুকরা মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করে ১ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
এবারে গাছটি পটিং করে তিন দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে, তারপর পূর্ণ রোদে। নিয়মিত একবেলা পানিই এর একমাত্র চাহিদা। আগাছা দেখা দিলেই পরিষ্কার করতে হবে। ফুল ধরলে, ঝরে গেলে ফুলের নিচ থেকে সামান্য বেশি নিয়ে ডালটি কেটে দিতে হবে।

বেলিগাছের প্রধান রোগ হচ্ছে মাকড়ের আক্রমণ
বেলিগাছের প্রধান রোগ হচ্ছে মাকড়ের আক্রমণ

বেলিগাছের প্রধান রোগ হচ্ছে মাকড়ের আক্রমণ, নিয়মিত গোসল করালে মাকড় স্থায়ী বসত গড়তে পারে না, আর যদি আক্রান্ত হয়েই যায়, তাহলে পাতা কুঁকড়ে যাবে, ফুল ধরবে না। সে ক্ষেত্রে ভার্মিটেক নামের মাকড়নাশক দুই লিটার পানিতে এক কর্ক পরিমাণ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তিন থেকে চার দিন ব্যবহারেই মাকড় দূর হবে।
শীতের মাঝামাঝি ডাল ছাঁটাই করতে হবে। মাটির ওপরের স্তর থেকে ৩০ সেন্টিমিটারের ওপরে বেলি ফুলের গাছ ছাঁটাই করতে হয়। এতে গাছ ঝোপালো হবে এবং ফুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।

১৫ দিন পরপর ভার্মি কম্পোস্ট সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সেই পানিটা গাছে প্রয়োগ করলে গাছ থাকবে ফুলে ফুলে স্বাস্থ্যবান।

একটু যত্ন নিলেই বেলিগাছ সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয় বহুগুণে
একটু যত্ন নিলেই বেলিগাছ সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয় বহুগুণে

শচীন কর্তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলা যায়, এমন দিনে বেলি যেন বর্ষার বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে, গীতিতে হৃদয়ে দিয়ে যায় দোলা। একটু যত্ন নিলেই বেলিগাছ সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয় বহুগুণে। তাই অন্তত একটি বেলি ফুলের গাছে আমাদের বাগান থাকুক সৌরভময়।

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৩, ০৮: ০০
বিজ্ঞাপন